বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগের একটা লোকও মারা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা বলে থাকেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে একদিনে দুই লাখ লোক মারা যাবে। আমি বলছি, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগের একজন লোকাও মারা যাবে না। কারণ, বিএনপি খুন, হামলার রাজনীতি করে না। আমরা বিশ্বাস করি, কেউ যদি অপরাধ করলে, আইন অনুযায়ি তার বিচার হবে।
সোমবার (৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসব কথা বলেন। মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ইশরাক হোসেনের মুক্তির দাবিতে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির ফলে দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দুর্নীতিকে চ্যাম্পিয়ণ সরকার ভর্তুকীর নামে জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। তার সাথে রয়েছে আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজী। এসবের প্রভাবও পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামের ওপর। মানুষের কী কষ্ট! আর এই সরকার অর্থের অপচয় করে একেক সময় একেকটা ঘটনা ঘটায়।
বিএনপির মূল লক্ষ্য এই সরকারকে সরানো উল্লেখ করে তিনি বলেন, একবার আওয়ামী লীগ ভারতে পালিয়েছিল, আবারো পালাবে; দেশের মানুষ কিছু না বললেও পালাবে। কথা আছে- বনের বাঘে না খেলেও মনের বাঘে খায়।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৬ বছর ধরে কষ্ট করছেন, হয়ত আপনাদের আর কিছু দিন কষ্ট করতে হবে। এই আন্দোলন সফল হওয়া মানে গণতন্ত্র ফেরত পাওয়া, বাংলাদেশকে ফিরে পাওয়া। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
জনগণের ভোটে এখন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয় না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে পুলিশ ও কিছু এজেন্সি। এটা কি তাদের কাজ? এদের কাজ কি গুমে সহযোগিতা করা, দাগি আসামীকে সীমান্ত পার করে দেওয়া নাকি? অবশ্যই নয়।
আইনি জটিলতায় ভারতে অবস্থানরত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদকে শিলংয়ে উদ্ধার প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আপনারা জানেন ২০১৫ সালে আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদকে উত্তরা থেকে র্যাব গ্রেপ্তার করেছিল। তখন র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন বেনজীর আহমেদ। সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হলো ঢাকার উত্তরা থেকে, আবিষ্কার করা হলো ভারতের শিংয়ে। এই যে দেশ থেকে একটা মানুষকে বের করে দেওয়া।
কবি ফরহাদ মাজাহারকে উদ্ধার করা প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কবি ফরহাদ মাজাহার একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাকে ঢাকা থেকে তুলে নেওয়া হলো। যারা নিলেন তাদের চ্যালেঞ্জ করে পুলিশ খুলনা থেকে ফিরিয়ে আনলেন। অর্থাৎ ফরহাদ মাজাহারকে আরেকটি দেশে নেওয়া চেষ্টা ছিল। মুক্তির পর ফরহাদ মাজাহার কথা বলেন না, বোবা হয়ে গেলেন। কেন কারণ কি? তবে,সব কথা বলা যায় না, বোঝা তো যায়?
বেনজীরের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি মন্তব্য করে গয়েশ্বর বলেন, দুদক তাকে কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন।
বেনজীরের দেশ ত্যাগের খবর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং ইমিগ্রেশনে যারা আছেন তারা অন্ধ নাকী বোবা, না পড়াশুনা যানে না? সব পত্রপত্রিকায় তো বেনজীরের খবর প্রকাশিত হয়েছে।
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কথা বলতে বলতে তিনি এমন পর্যায়ে গেছেন, সুস্থ নাকি অসুস্থ বোঝা যাচ্ছে না। চালাক মানুষ মনে করে তিনি ছাড়া অন্য কেউ কিছু বোঝে না; ওবায়দুল কাদেরও তাই ভাবেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে পুলিশ বলে মন্তব্য করেন গয়েশ্বর। তিনি বলেন, এখন খবরের কাগজ খুললে বেনজীর ও ভারতে খুন হওয়া সংসদ সদস্য আনারের খবর। এমপি আনারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন, সেই সাথে বলব- স্বর্ণপাচারের সাথে তিনি যদি জড়িত হন, তাহলে সেই বিচারটাও জনস্মুকে হওয়া উচিত। ভারতের কারা এই অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত সেটাও বের করা উচিত।
সরকারের নুন আনতে পানতা ফুরায় বলে মন্তব্য করেন গয়েশ্বর। তিনি বলেন, দেশের অবস্থা ভালো নেই। সরকার একটি ঘটনার পর আরেকটি ঘটনাকে সামনে আনে। এই শেখ হাসিনা একেকটি ঘটনা ঘটিয়ে নাটক সৃষ্টি করে। আজিজ, বেনজীর, আনার জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র নেওয়ার চেষ্টা। তাদের দুর্বলতা ঢাকার জন্য। এই নিয়ে যদি আমরা ব্যস্ত থাকি, তাহলে কপালে হাত দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারসহ গণমাধ্যমে দুর্নীতির নানা খবর প্রকাশ হয়েছে উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এই বাচ্চুর একটা পশমও ছিঁড়তে পারেনি দুদক, কেন গ্রেপ্তার করতে পারেনি?
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি পাভেল শিকদারের সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রফিকুল আলম মজনু, নবীউল্লাহ নবী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।
এমজে