সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দেশত্যাগের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, বেনজীর আহমেদ বিচারপ্রক্রিয়ার মধ্যেই আছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করার পর আদালত ঠিক করবেন, কখন তাঁকে গ্রেপ্তার করবেন, জেলে পাঠাবেন।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
বেনজীর আহমেদকে গ্রেপ্তার করা উচিত কি না, সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটার তো প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়ায় দুদক তদন্ত করছে। দুদক যদি মামলা করে, মামলা করার পর আদালত ঠিক করবেন, কখন গ্রেপ্তার করবেন, জেলে পাঠাবেন। বিচারপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হবে।আমরা সরকার কী আদেশ দেব?
অনেক গণমাধ্যম জানাচ্ছে যে বেনজীর আহমেদ সপরিবারে দেশ ত্যাগ করেছেন। তাঁকে আগেই গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি এটা জানি না, এটা এখনো পরিষ্কার না।’
বেনজীর আহমেদ তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে এরই মধ্যে টাকা তুলে ফেলেছেন বলে জানা যাচ্ছে। এসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এসব বিষয়ে যেহেতু আমি অবহিত নই, এটা আইনের বিষয়।
দুদক বলছে তারা টের পেয়েছে, দুদক সেটা প্রমাণ করুক।’সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ এবং সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের মতো যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত আছেন, তাঁদের তালিকা করার কথা জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপি বলছে, এমন অসংখ্য বেনজীর, আজিজ সারা বাংলাদেশে সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ।
এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘লিস্ট করলে তো প্রথমে বিএনপি নেতাদের নাম লিখতে হবে। কারণ দুর্নীতি-লুটপাটের শিরোমণি তাঁরা।বিএনপি নেতাদের নাম আগে আসবে। এর পরে অন্য লিস্ট দেখা যাবে।’বিএনপির নিজের ঘরেই গণতন্ত্রচর্চা নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপির গঠনতন্ত্র পড়েছেন? মির্জা ফখরুল কত বছর ধরে তাঁর গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে মহাসচিব হিসেবে আছেন? তাঁরা নিজের ঘরেই গণতন্ত্র চর্চা করেন না, দেশে গণতন্ত্র কিভাবে প্রতিষ্ঠা করবেন? মির্জা ফখরুলের কি বৈধ অধিকার রয়েছে? তাঁর গঠনতন্ত্র তিনি লঙ্ঘন করেছেন। সম্মেলন ছাড়া মহাসচিব কত বছর, সেটা আগে জিজ্ঞেস করুন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দুর্নীতি কেউ করে থাকতে পারেন। সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। আমার কথা হচ্ছে, সরকার এখানে নির্বিকার কি না? সরকার এখানে সৎসাহস দেখাচ্ছে। দুর্নীতির বিচার হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে। সরকার তো বিএনপির মতো ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সে (হীনম্মন্যতায়) ভোগে নাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স সংস্কৃতিটা গড়ে তোলেন নাই।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব খবর আছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি মন্ত্রী যদি কোনো দুর্নীতি করি, সেটা কি বিনা বিচারে শেষ হয়ে যাবে? প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব খবর আছে, কারা কী করছে। তিনি সব খবর রাখেন এবং সবার খবর রাখেন। তিনি তাঁর অফিসেরও কিছু লোকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। বিএনপির আমলে এমন কোনো লোকের শাস্তি হয়েছে?’
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সবাইকে কারাগারে রেখে বিপুল ব্যবধানে জিতেছেন—ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এমন মন্তব্য করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারতের নির্বাচনকালে তারা তাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য যেসব কথা বলে বা বলবে, আজ যে বক্তব্য তারা দেয়, সেটা ভোটের ক্ষতি হচ্ছে মনে করলে তা সংশোধন করেও বলে। নির্বাচনকালীন বক্তব্য নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা যা আছি, আমরাই। আমরা আমাদের গণতন্ত্র নিয়ে আছি। পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়েও আমাদের গণতন্ত্রচর্চা ঘরেও ভালো, বাইরেও ভালো।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।