ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকায় জাজি গাংয়ের উপর নির্মাণাধীন সেতুর পাশের বিকল্প সড়কটি ভেঙে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে আখাউড়া স্থলবন্দর ও উপজেলা সদরের সঙ্গে উপজেলার তিন ইউনিয়নের যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। নির্মাণাধীন সেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে মানুষ পার হলেও কোনো যান চলাচল করতে পারছে না। এতে আখাউড়ার ৩ ইউনিয়নের ৮০ হাজার বাসিন্দা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এই সড়ক দিয়ে পাশের কসবা উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রামে বেইলি সেতুর বদলে রড-সিমেন্টের সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুটি নির্মাণের জন্য পাশে মাটির একটি বিকল্প সড়ক করা হয়েছে। সড়কটি দিয়েই মানুষ ও যান চলাচল করে। রাস্তাটি খুবই দুর্বল ছিল। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দিনভর ব্যাপক বৃষ্টি হয়। এর বাইরে ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সড়কটি ভেঙে যায়। এতে উপজেলা সদর, স্থলবন্দর ও পৌর এলাকার সঙ্গে মোগড়া, মনিয়ন্দ ও ধরখার ইউনিয়নের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সড়কটি আখাউড়ার প্রধান সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মোগড়া, মনিয়ন্দ ও ধরখার ইউনিয়নের ৮৩টি গ্রামের অন্তত ৮০ হাজার মানুষের বসবাস। তাঁরা উপজেলা সদর ও স্থলবন্দরে যেতে সড়কটি ব্যবহার করেন। কিন্তু দেবগ্রামে সেতুর পাশের বিকল্প সড়কটি ধসে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বাধ্য হয়ে সাত কিলোমিটার বেশি ঘুরে মানুষকে আখাউড়া-আগরতলা সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হবে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে।
দেবগ্রামের বাসিন্দা আইয়ুব খান ও আব্দুল হালিম হেলাল বলেন, আখাউড়া স্থলবন্দর, বাজার, রেলওয়ে জংশন স্টেশন, আখাউড়া থানার, উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হলে এই সড়ক দিয়েই যেতে হয়। সেতুর পাশের বিকল্প সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরসহ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, বিকল্প সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যান চলাচল করতে পারছে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি মূলত জাজি গাংয়ের দেবগ্রামের এই সেতুর নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিতাস নদীতে যায়। কিন্তু সেতু নির্মাণের জন্য পাশে তৈরি করা বিকল্প সড়কের নিচ দিয়ে পানি সরার দুটি পাইপ বসানো হয়েছে। ঠিকাদারকে তাঁরা চারটি পাইপ দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তাঁরা না শোনায় সড়কটি ভেঙে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাজী আবুল ফায়েজ বলেন, কসবা উপজেলা ও আখাউড়া তিন ইউনিয়নের যাতায়াতের একমাত্র প্রধান সড়ক এটি। কিন্তু পাশের বিকল্প সড়ক ভেঙ্গে যাওয়াই মানুষকে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চলাচলের বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় মানুষকে কষ্ট সহ্য করেই সেতুর উপর উঠে রডের উপর দিয়ে হেটে সেতু পার হতে হচ্ছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মো. ওমর ফারুক বলেন, তাঁরা প্রয়োজনমতো পাইপ দিয়েছিলেন। কিন্তু পানির প্রবাহ বাড়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়। দু-এক দিনের মধ্যে ঢালাইয়ের কাজ শেষ হলে হালকা যানের জন্য নতুন সেতু খুলে দেওয়া হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন পানির স্রোত বেশি থাকায় সেখানে বিকল্প সড়ক নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। ঝড়ের কারণে বিকল্প সড়কটির ব্যাপারে তাঁরা সিগন্যাল দিয়েছিলেন। সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। দুই-এক দিনের মধ্যে সেতুর ঢালাইয়ের কাজ শেষ হলে আগামী সাতদিনের মধ্যে হালকা যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আপাতত ঢালাইয়ের কাজ চলার পাশাপশি সেতুর উপর দিয়েই মানুষ হেঁটে পার হচ্ছেন। বিকল্প সড়ক না থাকায় এই টুকু তো সহ্য করতেই হবে। এতে হয়তো ঢালাইয়ের কাজ প্রলম্বিত হবে। তবে কাজের গুণগত মানে কোনো প্রভাব পড়বে না।
বার্তা বাজার/এইচএসএস