টানা বৃষ্টিপাত আর ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেট জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলার সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়েছে।
গত বুধবার রাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় দ্রুত পানি বেড়ে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। বাড়িঘর, সড়ক, দোকানপাটে বন্যার পানি উঠেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। ধানসহ বিভিন্ন ধরণের সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুরমা, কুশিয়ারাসহ প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি।
ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত মানুষ গবাদি পশু নিয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। হঠাৎ বন্যায় সিলেটের অন্তত সাড়ে চার লাখ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার বিকালে গোয়াইনঘাট উপজেলার বাসিন্দারা জানান, বুধবার সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে পানি উঠতে থাকে। তখন ঘরের ভেতরে হাটু সমান পানি হয়েছিল। অনেক কষ্টে তারা রাত কাটিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে পানি কিছুটা কমেছে। তবে বাজারের পানি এখনও পুরো নামেনি।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডসূত্র জানায়, জেলার গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চলছে উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। এছাড়াও প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনী। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে মাঠে নামবেন সেনা সদস্যরা। বন্যা মোকাবিলায় খোলা হয়েছে ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদী একদিনে ২০২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও সুরমা নদী কানাইঘাট উপজেলা পয়েন্টে ১৯৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার ওপর, কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জের অমলশিদ পয়েন্টে ২২০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট জেলা প্রশাসন জানায়, বন্যাকবলিত ৫টি উপজেলায় ২০০ বস্তা করে মোট ১০০০ বস্তা শুকনো খাবার, ১৫ মেট্রিক টন করে মোট ৭৫ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে ৬৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ওই পানির অনেকটাই ঢল হিসেবে দ্রুত সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে নেমে এসেছে।
বার্তা বাজার/এইচএসএস