ঢাকার পানিতে ক্যানসার সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর মাত্রার বিষাক্ত পিএফএএস বা ‘চিরকালের রাসায়নিক’ এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।বুধবার (২৯ মে) এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এবং আন্তর্জাতিক দূষণকারী নির্মূল নেটওয়ার্ক (আইপিইএন) এর যৌথ গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

তাদের গবেষণা ‘ক্রমাগত হুমকি: বাংলাদেশের টেক্সটাইল এবং পানিতে পিএফএএস’ নামক প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিশ্বব্যাপী রপ্তানির ক্ষেত্রে ‘ফাস্ট ফ্যাশন’ হিসেবে পরিচিত, যেখানে অসংখ্য কারখানা বিশ্বের প্রধান ব্র্যান্ডগুলোর জন্য পোশাক তৈরি করে। বিভিন্ন পণ্যে পিএফএএস উপস্থিত রয়েছে, এবং এসব পণ্য পানি, তেল এবং দাগ-প্রতিরোধ করতে পারে। মোট বৈশ্বিক পিএফএএস ব্যবহারের প্রায় ৫০ ভাগ ব্যবহার করে টেক্সটাইল শিল্প। পিএফএএস নির্গমনে বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় স্থানে আছে এই টেস্কটাইল শিল্প।

গবেষকরা বলছেন, একটি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে এ ধরনের রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসলে ক্যানসারসহ নবজাতকদের মধ্যে জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। থাইরয়েডের হরমোনের কার্যক্রমও ব্যাহত হতে পারে। এ ছাড়াও কিছু পিফাস শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং লিভার নষ্ট করে।

গবেষণার জন্য ২০১৯ ও ২০২২ সালে ঢাকার মোট ৮ টি এলাকা থেকে ৩১ টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ৩১টি নমুনার মধ্যে ২৭টি (৮৭ শতাংশ) নমুনার পৃষ্ঠ থেকে সংগৃহীত পানিতে পিএফএএসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৮টি নমুনায় (৫৮ শতাংশ) বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ এক বা একাধিক পিএফএএস রাসায়নিক পিএফওএ, পিএফওএস এবং/অথবা পিএফএইচএক্সএস এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ১৯টি নমুনায় (৬১ শতাংশ)পিএফএএস এর মাত্রা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্ধারিত মাত্রা (নিয়ন্ত্রিত পরিমাণ) অতিক্রম করেছে। কিছু রাসায়নিক বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আবার কিছু রাসায়নিক নিষিদ্ধ করার জন্য পর্যালোচনা চলছে।

বাংলাদেশে ইএসডিও-এর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বলেন, বাংলাদেশ একটি আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল উৎপাদন কেন্দ্র এবং এই খাত থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক নির্গমনের প্রবণতা বাসিন্দাদের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।

২০১৯ সালে সাভারের কর্ণতলী নদীতে পিএফএএস রাসায়নিকের মাত্রা প্রস্তাবিত ইউ সীমার ৩০০ গুণেরও বেশি ছিল। নমুনাটিতে দুটি নিষিদ্ধ পিএফএএস রাসায়নিক সর্বোচ্চ মাত্রায় পাওয়া গেছে। বর্তমানে নির্ধারিত ডাচ নিরাপদ সীমার চেয়ে এগুলোর মাত্রা ১৭০০ থেকে ৫৪ হাজার গুণ বেশি ছিল।

২০২২ সালে হাতিরঝিল লেক থেকে সংগৃহীত আরেকটি নমুনাতে পিএফওএ এবং পিএফওএএস উভয় রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে যা বর্তমানে নির্ধারিত ডাচ নিরাপদ সীমার ১৮৫ গুণ বেশি। ২০১৯ সালে সংগৃহীত চারটি কলের পানির নমুনার মধ্যে তিনটিতে পিএফএএস পাওয়া গেছে এবং খাবার পানির জন্য ইউএস নির্ধারিত পিএফওএ মাত্রা থেকেও বেশি পরিমাণে রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তাদের গবেষণায় বাংলাদেশের পোশাকও পরীক্ষা করা হয়েছে। পাঁচটি স্যাম্পল পোশাকের সবকটিতেই পিফাস পাওয়া গেছে এবং একটি পুরুষের জ্যাকেটে নিষিদ্ধ রাসায়নিক পিএফওএ পাওয়া গেছে।

ইএসডিও’র নীতি ও প্রযুক্তি বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং গবেষণার প্রধান লেখক ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, নদী, লেক, কলের পানি, এবং পোশাকে পিএফএএস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এবং পরিবেশের জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করে, তবুও শিল্পকারখানা এবং নীতিনির্ধারকরা সাড়া দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, পিএফএএস রাসায়নিকগুলোকে একে একে নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েক দশক সময় লাগবে যা আমাদের সন্তানদের ঝুঁকিতে ফেলবে। আমাদের জরুরিভাবে সমস্ত পিএফএএস রাসায়নিকের উপর একটি বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন।