আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঐতিহাসিক মামলা মঙ্গলবার আদালতে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। জুরির সাত জন পুরুষ ও পাঁচ জন নারীর সামনে দুই পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক প্রায় ১০ ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ট্রাম্পের আইনজীবীর দাবি, মুখ বন্ধ রাখতে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ায় তার (ট্রাম্প) কোনো দায় নেই। তারপর প্রসিকিউটর জোশুয়া স্টেইনগ্লাস জুরিদের সামনে যুক্তি দেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনো প্রেসিডেন্টের এই বিচারে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করা উচিত। এদিকে স্টর্মি ড্যানিয়েলস এক সাক্ষাত্কারে দাবি করেছেন, তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এই বিচারের ফলাফল ট্রাম্পের কেবল ব্যক্তিগত স্বাধীনতার জন্য নয়, তার রাজনৈতিক ভাগ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ২০২৪ সালের সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। নভেম্বরের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তার পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা। বাইডেন তাকে ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজিত করেছিলেন। গতকাল বুধবারের সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। ছয় সপ্তাহ ধরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই মামলা চলেছে। মামলার যুক্তি-তর্কের শুনানি শেষ হয়েছে। গতকাল বিচারক জুয়ান মার্চেনের জুরিদের আইনগত বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার কথা। আদালতে দুই পক্ষ যেসব নথি উপস্থাপন করেছে সেগুলো যাচাই করবেন জুরিরা। এই প্রথম জুরিরা সাবেক কোনো প্রেসিডেন্টের বিচারের দায়িত্ব পালন করছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৩৪টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগের সত্যতা কতটুকু তা যাচাই করে দেখবেন
দোষী সাব্যস্ত হলে কী হবে:
বিচার চলাকালে ট্রাম্প জামিনে মুক্ত। দোষী সাব্যস্ত হলেও সাজার শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ না করা পর্যন্ত তিনি সম্ভবত মুক্ত মানুষ হিসেবেই আদালত ত্যাগ করবেন। দোষী সাব্যস্ত হলে তার সাজার শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করবেন বিচারক। সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারককে বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। এর একটি ট্রাম্পের বয়স। তার বয়স ৭৭ বছর। আরেকটি বিষয় হলো, ট্রাম্পের আগে কখনো ফৌজদারি অপরাধে আদালতে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া। আদালত ট্রাম্পকে জরিমানা, অবেক্ষণ বা নজরদারিতে রাখা বা কারাভোগের সাজা দিতে পারেন। দোষী সাব্যস্ত হলে ট্রাম্প নিশ্চিতভাবে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। আপিল মামলা নিষ্পত্তি হতে কয়েক মাস বা তার চেয়ে বেশি সময় লেগে যেতে পারে। আপিল চলাকালে জামিন নিয়ে ট্রাম্পের মুক্ত জীবন কাটানোর সুযোগ আছে।
ট্রাম্পের কারাগারে যাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। ৩৪টি অভিযোগের মুখোমুখি ট্রাম্প। এগুলোর প্রতিটি নিউ ইয়র্কে ‘ই’ শ্রেণির বা সর্বনিম্ন স্তরের। প্রতিটির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা চার বছরের কারাদণ্ড। ট্রাম্পকে কম সাজা দেওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ আছে। এর মধ্যে আছে তার বয়স বেশি। তিনি আগে কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হননি। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ, তার কোনোটাই সহিংস অপরাধ নয়। বিচারকের সিদ্ধান্তে এসবের প্রভাব দেখা যেতে পারে। একজন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি আসন্ন নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ একজন প্রার্থী, তাকে কারাগারে পাঠানো এড়াতে চাইতে পারেন বিচারক। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদে তার প্রার্থিতা বহাল থাকবে। বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ ধারণা করছেন যে, ট্রাম্পকে জরিমানা করা হতে পারে।
সূত্র : সিএনএন ও বিবিসি
বার্তা বাজার/এইচএসএস