ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সকালে রাজধানী ঢাকা থেকে পটুয়াখালীর উদ্দেশে যাত্রা করবেন তিনি। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব এমএম ইমরুল কায়েস জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপদ্রুত এলাকা সরজমিনে পরিদর্শন এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণের লক্ষ্যে আজ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্প্রতি আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রেমাল এবং এর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ধসে পড়ে উপকূলীয় এলাকার অনেক ঘর। এছাড়া ঝড়ো হাওয়ার প্রভাবে গাছপালা ভেঙেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি। ভেসে গেছে মাছের ঘের। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পটুয়াখালীতে দফায় দফায় প্লাবিত হয়েছে চরাঞ্চলসহ শতাধিক গ্রাম। তলিয়ে গেছে পৌরসভাসহ জেলার নিম্নাঞ্চল।

পটুয়াখালীর ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্লাবিত হয়ে ও ঝড়ো বাতাসে জেলায় মোট ২৩৫টি আধাপাকা ও কাঁচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতে তিন হাজার ঘরবাড়ি। এর মধ্যে বিচ্ছিন্ন দ্বীপচর রাঙ্গাবালী উপজেলা ও কলাপাড়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। বহু গাছপালা উপড়ে গেছে।

জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় উপজেলায় বেশকিছু পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ো বাতাসে গাছ উপড়ে দুমকি ও বাউফলে দুই বৃদ্ধ নিহত হন। এছাড়া রোববার কলাপাড়া উপজেলায় এক যুবক নিহত হন।

২২ মে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ দশা পেরিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় শনিবার সন্ধ্যায়। তখন এর নাম দেয়া হয় রেমাল। রোববার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। এর প্রভাবে রোববার বিকালেই উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হয়। পরদিন সকাল থেকে সারা দেশেই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেড়ে দুর্বল হয়ে আসে রেমাল। ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে বানের জলে ভেসে, দেয়াল ও গাছচাপায়, আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে প্রাণ গেছে দেড় ডজন মানুষের।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি।

এর আগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দ্রুত নিরূপণ করে আগামী রোববারের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। একই সময় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো সংস্কারের নির্দেশ দেন তিনি। গত মঙ্গলবার একনেক সভায় এ নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।