সরকারকে বিবাদি না করে ও ভারতবাসি এক হিন্দু ব্যক্তিকে বিবাদি সাজিয়ে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মসজিদ ও মাদরাসাসহ প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের (১০ একর ৬০ সতাংশ) সরকারি জমি দখল চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে খিজির আহাম্মদ ও নুরুল ইসলাম নামের দুই ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা ওই জমি নিজেেদের দাবি করে সম্প্রতি স্থানীয় কয়েক ব্যাক্তির কাছে মৌখিকভাবে বিক্রিও করে দিয়েছেন। শুধু এঘটনাই না, স্থানীয় সরকারি জমি দখলে নিয়ে দিতে বিভিন্ন ব্যাক্তিকে দিয়ে মামলাও করছে এই খিজির আহাম্মদ। এঘটনা জেলা প্রশাসকের নজরে আসলে দ্রত প্রদক্ষেপ গ্রহনে এডিসি ও আরডিসিকে নির্দেশনা দিয়েছেন।। তারা সরকারি জিপির মাধ্যমে আইনি প্রদক্ষেপ নিয়েছেন। আদালত ভূমিদস্যুর পক্ষের এক তরফা রায় ডিগ্রির যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত ও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন বাতিল করেন।
অপরদিকে-লীজ গ্রহিতা কৃষক মনির হোসেন, কাজি মুজাম্মেল হক গং ও আবুল কালাম গং এর লীজ ও ভোগদখলকৃত ২১৭৯২, ২১৭৯৬, ২১৮১২, ২১৮১৩ ও ২১৮১৫ নং দাগে ও ২ একর ১২ শতাংশ নাল ভূমি এবং লিজিদের চাষাদের বিরুদ্ধে খিজির আহাম্মদ বাদি হয়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৭৫/২০২৪ ও ৮৩/২০২৪ এই দুটি মিথ্যা সাত ধারা মামলা দায়ের করে।কিন্তু খিজির আহাম্মদ লিজি হয়ে সরকারি লীজকৃত জমি নীজের খরিদ সূত্রে দাবি করেছেন (যার নাম্বার-১৫/০৫/০২০২৪)।
উল্লেখ্য- সরকারের সাথে মহা জালজালিয়াতি করার অপরাধে এই ভূমিদস্যু খিজির আহাম্মদ ও তার ভগ্নিপতি নুরুল ইসলামকে আটক এবং তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যাবস্থা না নিলে মানুষের বাড়ী থাকবে নাবলেগ্রামবাসি জানান।
রায়পুর উপজেলা ভূমি কার্যালয় ও কয়েকজন লীজগ্রহিতা সূত্রে জানাযায়, ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় রায়পুরের উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের ২৪৯ চরবংশী মৌজার খতিয়ান এসএ, ৮৭৪,৮৮২-৮৮৩ ও ৮৯১ এবং বিভিন্ন দাগে ১৭ দশমিক ২৬ একর ভূমি রেখে ভারত চলে যান নলিনি কিশোর রায় গংরা ( সদরের দালালবাজার এর সাবেক জমিদার)। উক্ত ভূমি বাংলাদেশ সরকার গেজেটেড তফসিলের অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে গেজেট প্রকাশিত হয়। সেই সময় উক্ত ভূমি অর্পিত সম্পতি হিসেবে ৩৩/৩৪- ৬৬-৬৭ সনের নথিমূলে সরকার দখল গ্রহণক্রমে চরবংশী জয়নালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বাবুরহাট জামে মসজিদ এবং ক্রমানুসারে খিজির আহাম্মদের পিতা, মাতা পরে আবার খিজির আহাম্মদ গং দের স্বজনরা এবং দেওয়ানি মামলার বাদি নুরুল ইসলামের স্ত্রীও বিভিন্ন ব্যাক্তির নামে ইজারা নেয়। পরে উক্ত ভূমি সরকারের নামে ১/১ আংশিক ভূমি ১নং খাস খতিয়ানে রেকর্ডভূক্ত করা হয়।
বাবুরহাট এলাকায় উক্ত ভূমিতে ১২০ বছরের পুরানো বাবুরহাট জামে মসজিদ, পুকুর, বাজার, মহিলা মার্কেট, লীজগ্রহিতাগনেদ বাড়ী, বাগান, নাল, পুকুর ও ঝীল হিসেবে রয়েছে। সরকারের এক একর পুকুরটি মসজিদের নামে লীজও দেয়া হয়। উক্ত ভূমি সরকারের কাছ থেকে লীজ নিয়ে ভোগ দখল করছে ইজাদার।
সরকারের কাছ থেকে লীজকৃত ১৭ একর ২৬ শতাংশ ভূমি হইতে ১০ একর ৬০ শতাংশ ভূমি লিজগ্রহিতা জায়েদা খাতুনের স্বামী নুরুল ইসলামকে বাদি বানিয়ে ২০১৪ সালে লক্ষ্মীপুর আদালতে দলিলপত্র ছাড়াই ভূয়া দাবিতে দেওয়ানি মামলা করেন ( যার নাং(৭৬/২০১৪) খিজির আহাম্মদ।।অথচ এই মামলায় সরকারকে বিবাদি না করে ভারতবাসি নলিনি কিশোর রায় গনকে বিবাদি দেখানো হয়েছে। পরে মামলাটি খিজির আহাম্মদ গোপনে এক তরফা তার পক্ষে রায় ডিগ্রী হাসিল করে নেয়।
পরে লক্ষ্মীপুর যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতের বিচারক বেগম ফারহানা ভুইয়ার আদালতে (দেওয়ানি ১৯৩/০২৩) দায়ের করে সরকারের বিরুদ্ধে আরেকটি একতরফা রায় হাসিল করে নিষেধাজ্ঞার মামলা করেন (৪০/০২৪) খিজির আহাম্মদ। এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসক বিষয়টি জানতে পেরে এডিসি রেভিনিউ ও আরডিসিকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিলে তারা সরকারি জিপির মাধ্যমে আদালতকে অবহিত করেন। পরে আদালত জালিয়াতের বিষয়টি আমলে নিয়ে ওই ভূমির উপর যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত এবং অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন বাতিল করে দেন।
উক্ত মামলার বাদি ভূমিদস্যু নুরুল ইসলাম ১৯৬২ সনে মৌখিকভাবে খরিদ করে যে দাবি করেছিলেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারন ওই সময় নুরুল ইসলাম ৫ বছরের শিশু ছিলেন।
এ বিষয়ে মামলার বাদি নুরুল ইসলাম বলেন, এই মামলার সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। সবকিছু আমার ভগ্নিপতি খিজির আহাম্মদ জানেন। তার সাথে কথা বলেন। তবে খিজির আহাম্মদ বলেন, ‘এই ১০ একর ৬০ শতাংশ জমির মালিক আমাদের পূর্ব পুরুষদের। ভুল করে তা সরকারি জমি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।। তাই আমরা জমির দখল নিচ্ছি।’
স্থানীয় নোয়াব আলী (৭৫), মোঃ হানিফ (৭২), আবদুর রহমান (৬০), ইউসুফ আলী (৬৭)সহ কয়েকজন গ্রামবাসি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, দীর্ঘদিন তারা পুকুর, জলাশয়, নাল, জমি, বাড়ীঘর, মসজিদ ও মাদরাসাসহ বাজার এবং ৮টি দোকান দিয়ে সরকারের কাছ থেকে লীজ নিয়ে কার্যক্রম করছেন । সরকারকে বিবাদি না করে ভারতবাসি হিন্দু জমিদার নলিনি কিশোর রায়কে বিবাদি করে স্থানীয় ভুমিদস্যু ও মামলাবাজ খিজির আহাম্মদ তার ভগ্নিপতি নুরুল ইসলামকে বাদি করে ১০ কোটি টাকা মুল্যের ১০ একর ২৬ শতাংশ জমি জমি দখলের পাঁয়তারা করছেন। আমরা এই ভূমিদস্যু খিজি আহাম্মদের বিচার দাবি করছি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান খান বলেন, উত্তর চরবংশী ইউপির বাবুরহাট এলাকায় ১৭ একর ২৬ শতাংশ জমির মালিক সরকার। ওই জমি দখলের চেষ্টার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বার্তা বাজার/এইচএসএস