বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের নদ-নদীগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বাড়তে শুরু করেছে। ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে উপকূলের জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের ওপর আচড়ে পড়ছে পানির স্রোত। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে উপকূলের মানুষ।

রোববার (২৬ মে) সকাল থেকে সাতক্ষীরায় উপকূলবর্তী শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জে হালকা বৃষ্টির সাথে দমকা বাতাস বইতে শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে উপকূলীয় এলাকার অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে শুরু করেছে। উপকূলীয় এলাকার খেয়াঘাট গুলোতে মানুষের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। এছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। উপকূীয় এলাকায় সকাল থেকে মাইকিং করে জনসাধারণকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রেমাল আতঙ্কে রয়েছে উপকূলবাসী। বিশেষ ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে উপকূলের মানুষ। আগের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে গৃহহারা হয়ে পাউবো’র বেড়িবাঁধ অথবা উচু কোন স্থানে টোং ঘর বেধে বসবাসকারি লোকেরা ফের বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। ফলে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ রক্ষায় এগিয়ে এসেছে স্থানীয়রা।

অন্যদিকে, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের সরিয়ে নিতে ১৬৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। একই সাথে বনবিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে ফিরে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার সকালে উপকূলের নদ-নদীতে জোয়ার শুরু হয়েছে। শনিবার থেকে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে নদী এখন পর্যন্ত উত্তাল রূপ ধারণ করেনি। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সকালে ঘোলা ত্রীমোহনী, ঝাপালি, নওয়াবেঁকী, পাখিমারা ও নীলডুমুর খেয়াঘাট এলাকায় মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের উপ-পরিচালক জুলফিকার আলী রিপন জানান, সাতক্ষীরা উপকূলীয় জনপদ সহ দেশের দশটি জেলাকে ১০ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। রোববার বেলা বাড়ার সাথে সাথে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও হালকা বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে দুপুর নাগাদ বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হওয়া বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, তার বিভাগের আওতাধীন ১৫ এর অধিক পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। এই মুহুর্ত্বে ৫/৬টি পয়েন্টে কাজ চলছে। পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ ও জিও রোল মজুদত রয়েছে। এখন আমরা ৭/২ পোল্ডারের বিছট গ্রামের ভাঙন পয়েন্টে বেড়িবাঁধে জিও রোলের কাজ করছি। পর্যায়ক্রমে সবগুলো পয়েন্টে কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজিবুল আলম বলেন, উপজেলার ১৬৯ সাইক্লোন শেল্টারকে প্রস্তুুত করা হয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছয় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবীকে জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় তৈরি থাকার জন্য বলা হয়েছে। শুকনা খাবারসহ নগদ অর্থ মজুদ রাখা হয়েছে। প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। উপকূলের মানুষকে সাইক্লোন শেল্টারসহ নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

বার্তা বাজার/এইচএসএস