আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে মোটা অংকের টাকা ও পাচার করা হয়েছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিন চরবংশী ইউপির চরকাছিয়া গ্রামের শারমিন আক্তারকে (২৫)। ইউরোপের দেশ ইতালি পাঠানোর নামে ওই যুবতিকে নিয়ে ভারতে এক নারীর কাছে আটকে রেখে দুটি ফোন নাম্বারে (৯১৯০৯১৫৮৬০৬৮ ও ০১৯০৯৮৪২৩৭৬) আরও মোটা অংকের টাকা দাবি করা হচ্ছে।
প্রায় ৫ মাস আগে কৌশলে শারমিনকে তার বাড়ী থেকে ইতালি নেওয়ার কথা বলে তিন লাখ টাকা নিয়ে ভারতে আটকে রাখা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে (২৫ মে) রায়পুর শহরে এক বাসায় সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন রায়পুর উপজেলার চরকাছিয়া গ্রামের (হাজিমারা সুইজগেইট এলাকা) জেলে স্বজল আলী (৬৫) ও স্ত্রী পেয়ারা বেগম (৫০) ।
জেলে স্বজল আলী ও পেয়ারা বেগম বলেন, তারা মেঘনা নদীর পাড়ের জেলে পরিবার। আর্থিক ও সামাজিক উন্নতির আশায় ছোট মেয়ে স্বামী পরিত্যাক্তা শারমিন আক্তারকে (২৫) চার বছর আগে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে গৃহকর্মীর কাজ করার জন্য পাঠায়। পরে ২০২০ সালে শারমিন গ্রামের বাড়ীতে ফিরে আসেন। সৌদি আরব থাকতেই মোবাইল ক্রস কানেকশানে পরিচয় হয়েছিলো নোয়াখালির বেগমগন্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের সাহাব উল্লাহর মেয়ে রাবেয়া বেগমের সাথে। তখন সৌদিআরব দুইজনের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে।
সৌদিআরব থাকতেই দুইজনের ইউরোপ (ইতালি) যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সৌদিআরব থেকে রাবেয়া তার নোয়াখালির বাড়ীতে এবং পরে শারমিন রায়পুরে তার গ্রামের বাড়ীতে আসেন।
এই সুত্র ধরে গত ৫ মাস আগে রাবেয়া তার ছোট বোন কুলসুমাকে পাঠায় শারমিনের বাড়ীতে। দশদিন সময় কাটিয়ে নগদ তিন লাখ টাকাসহ শারমিনকে সঙ্গে করে গ্রামের বাড়ী থেকে ঢাকায় বড় বোনের কাছে নিয়ে যায় কুলসুমা। এরপর আর খোঁজ নেই শারমিনের।
স্বজল আলী অভিযোগ করে বলেন, আমার ছোট মেয়ে শারমিন আক্তার সৌদি আরব চার বছর গৃহকর্মীর কাজ করেছে। এখন বান্ধবি রাবেয়াসহ কয়েক দালালের খপ্পরে পড়ে ইতালি যাওয়ার নামে তাদের ২টি গরু বিক্রি ও এনজিও থেকে লোন নিয়ে ৩ লাখ টাকা দেয়া হয়। ঢাকা থেকে ভারত নেয়ার পর মানবপাচার চক্রের সদস্য রাবেয়া, তার বোন কুলসুমা শারমিনকে ভারতে নিয়ে এক দিদির জিম্মি করে রেখেছে। ওই দিদি নির্যাতনে ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করছেন।
স্বজল আলী বক্তব্যে বলেন, একপর্যায়ে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি- ভারতেই আমার মেয়ে শারমিনকে অজ্ঞাত সহযোগীরা অমানবিক নির্যাতন করে দিদির কাছে বন্ধি করে রেখেছে।
রাবেয়াসহ তার সহযোগীদের কাছে শারমিনকে জীবিত অথবা মৃত ফেরত চাইলে তারা খুন গুম করার হুমকিও দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় জেলে স্বজল আলী তার মেয়েকে (জীবিত অথবা মৃত) উদ্ধার এবং হাতিয়ে নেওয়া ৩ লাখ টাকা ফেরত পেতে এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজি ও র্যাবের মহাপরিচালকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও সুদৃষ্টি কামনা করেন।
রায়পুর থানার ওসি ইয়াসিন ফারুক মজুমদার বলেন, চরবংশী হাজিমারা এলাকার মেয়ে শারমিন আক্তারের নিখোঁজের ঘটনায় মামলা হলে তা তদন্ত করে আইনত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
বার্তা বাজার/এইচএসএস