বর্তমানে বাংলাদেশে আবাদি জমির সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। তাই ক্ষেতের জমি অনাবাদি না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সরকার। কিন্তু কিছু কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রে ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের সেই পরামর্শ। ঠিক এমনই একটি দালাল চক্রের নজর পড়েছে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের বৃহত্তর ধানের পাথারের দিকে। ১৮০০ একর (প্রায় ৭২৯ হেক্টর) ধানের আবাদি জমিগুলো জোরপূর্বক ভেক্যু দিয়ে মাটি কেটে বেড়িবাধ দিয়ে দখল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে চক্রটি। বাধা দেওয়ায় কৃষকদের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক দুটি মামলাসহ বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিচ্ছে দালালচক্রের সদস্যরা। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে লক্ষ্মীপুরের ওই জমির মধ্যে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগী কৃষকেরা। এর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা। এদিকে ফসলি জমিতে মাছের ঘের করার কোন সুযোগ নেই জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক সন্তোষ চন্দ্র চন্দ।

কৃষকদের অভিযোগে জানা যায়, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ৬৬ নং সিরাজকাঠি বড়হাট মৌজা ও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ১ ও ২ নং বৈকন্ঠপুর মৌজার ১৮০০ একর (প্রায় ৭২৯ হেক্টর) জমি নিয়ে এই অঞ্চলের বৃহত্তর ধান ক্ষেত সৃষ্ঠ। এর এক তৃতীয়াংশ জমি রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ও লক্ষ্মীপুর গ্রামের সীমানার মধ্যে পড়েছে। দুই উপজেলার সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার মানুষ এই জমির উপর নির্ভরশীল। এই ক্ষেতে প্রতি এক একর জমিতে ৯০ থেকে ১০০ মণ ধানের ফলন হয়। পাটেরও হয় বাম্পার ফলন। কিন্তু পুরো এই ১৮০০ একর আবাদি জমিটি নষ্ট করে মাছের ঘেরের প্রজেক্ট তৈরি করার কথা বলে জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জের এক প্রভাবশালী ঘের ব্যবসায়ী অসিম পান্ডে। তার এই কাজ সম্পূর্ণ করে দিতে অসিমের সঙ্গে ৬৫ লাখ টাকা চুক্তি করেছে স্থানীয় কুচক্রী মহলের হোতা খোকন মন্ডল, মোক্তার কাজী, গিয়াস উদ্দিন, সঞ্চয় কবিরাজ, লিয়াকত খাঁ, জেন্নাত খাঁ ও মিন্টু খাঁ অভিযোগ কৃষকদের। বর্তমানে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিয়ে জমিটি দখল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। এর আগে কৃষকদের বিরুদ্ধে মাদারীপুর আদালতে সন্ত্রাসী হামলা ও চাঁদাবাজির মতো হয়রানি মূলক দুটি মামলাও করেছে কুচক্রী মহলের সদস্য কাজী নজরুল ইসলাম ও পান্না খান।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান বরাবর ৪৪৬ জনের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া সহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী কৃষকেরা। পরে কোন প্রতিকার না পেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। তবে আবাদি জমি নষ্ট করে মাছ চাষ করা হলে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ফসল থেকে বঞ্চিত হবে সরকার।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা জানান, কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ খোকন মন্ডল, মোক্তার কাজী, গিয়াস উদ্দিন, সঞ্চয় কবিরাজ, লিয়াকত খাঁ, জেন্নাত খাঁ ও মিন্টু খাঁ সহ ১০/১৫ লোক এসে আমাদের জমিতে জোরপূর্বক ভেক্যু দিয়ে মাটি কেটে বেড়িবাধ দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় আমরা বাধা দিলে তাদের সাথে হাতাহাতি হয়। পরে আমাদের বিরুদ্ধে দুটি মিথ্যা মামলা করে তারা। এই জমিটি বেড়িবাধ দিয়ে আটকালে বর্ষাকালে পানি জমাট বাধবে, ফলে সময় মতো আমরা কেউ ধান চাষ করতে পারবো না। আর ধান চাষ করতে না পারলে হাজার হাজার মানুষ মারা যাবে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে আমরা এই জমি থেকে মাছ, শপলা ও শামুক বিক্রি করে সংসার চালাই। এখন সেই শেষ সম্বলটুকু যদি কেড়ে নেয় তাহলে আমরা বাঁচতে পারবো না।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মাছের ঘের ব্যবসায়ী অসিম পান্ডে বলেন, আমরা বছরে তিন মাস মাছ চাষ করবো। বর্ষাকাল শেষে পানি নামিয়ে দিয়ে তাদের জমি পরিস্কার করে দেওয়া হবে। এর জন্য মৎস্য অফিসের কোন অনুমতি নিয়েছেন কিনা? প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এগুলো লাগে না। সম্মানি দিলেই হয়ে যায়।

তবে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে ৬৫ লক্ষ টাকা চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, এতো বড় মাপের চুক্তি তাদের সাথে হয়নি। কিন্তু তারা তো আর টাকা ছাড়া আমার জন্য কাজ করবে না। তাই কিছু টাকা তাদের দেবো এটা সত্য।

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সন্তোষ চন্দ্র চন্দ বলেন, এ বিষয়ে আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। তবে ফসলি জমিতে মাছের ঘের করার কোন সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে সরজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নুসরাত আজমেরী হক বলেন, আমার এ বিষয়টি জানা নেই। তবে কৃষকেরা অভিযোগ করলে বিধিসম্মত ব্যবস্থা নেবো।

বার্তা বাজার/এইচএসএস