জাতীয় নির্বাচন হয়েছে বেশ কয়েকটা। সংসদ সদস্য পরিবর্তন হয়েছে বারবার। মন্ত্রিত্বও এসেছে বেশ কয়েকবার এই আসন থেকে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর মন্ত্রি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা হয়েছে এই আসন থেকে। অনেকের ভাগ্যের আমূল পরিবর্তনও এসেছে। কেউ কেউ আঙুল ফুলে হয়েছে কলাগাছ। উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে বটে তবে এখনও যেন অনেকটা অবহেলিতই রয়ে গেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নবগঠিত ওয়ার্ড গুলো। যার মধ্যে রাজধানীর দক্ষিনখান অন্যতম।

দক্ষিনখান থানা রোড থেকে শুরু করে চালাবন, মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের দুটি শাখা, ফায়দাবাদ মিজানের গ্যারেজ সহ বেশির ভাগ জায়গায় হাটুর উপরে পানি যেন এই এলাকার বাসিন্দাদের নিত্য সঙ্গী।

৪৭, ৪৮,৪৯ ও ৫০ নং ওয়ার্ডের মূল সড়ক থেকে শুরু করে শাখা রোড গুলোতেও পানি জমে দিনে দিনে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। এতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। অবস্থা এতোটাই খারাপ যে, সড়কের দুই পাশে শত শত বালির বস্তা ফেলেও হাঁটা যাচ্ছেনা। বস্তার উপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে কখনোবা পা পিছলে ময়লা পানিতে পড়ে সারা শরীর সহ জামা কাপড় নষ্ট হচ্ছে। এদিকে মাইলস্টোনের দুটি ক্যাম্পাসের অবস্থা আরো বেগতিক। ফলে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে হাটু পানিতেই মাইলস্টোন স্কুল কর্তৃপক্ষ সড়ক পারাপারের জন্য প্রায় ১০০ মিটার জায়গা জোরে দিয়েছেন স্কুলবাস। যেটাই চড়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীরা কষ্ট করে পানি পার হয়ে যাচ্ছে স্কুলে।

তবে এখন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্টদের কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এছাড়া সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কার্যকর ভূমিকাও নিরব। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে উত্তরখান ও দক্ষিণখান থানার মূল সড়ক থেকে শুরু করে আনাচে কানাচে এর বেশিরভাগ সড়ক।

অভিভাবকদের অভিযোগ, সামনে বাচ্চাদের স্কুলে পরীক্ষা, প্রতিদিন বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যেতে হয়। ময়লা পানির মধ্যেই খুব বাজে ভাবে ঝুঁকি নিয়ে বাচ্চাদের পথ চলতে হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,দক্ষিণখান থানা রোডে শিক্ষার্থীদের স্কুলে দিতে আশা শত শত অভিবাবক গাড়িতে উঠতে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে।বাচ্চাদের স্কুল বাস আসলে বাচ্চাদের নিয়ে গাড়িতে করে স্কুলে দিয়ে আসেন তারা। আবার ছুটি শেষেও একই অবস্থা।

স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ করে রাস্তা কেটে ফেলায় মূল সড়কে বড় বড় গর্ত হয়েছে। প্রতিদিন যুবক বৃদ্ধ থেকে শুরু করে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী এমনকি শিশুরাও সড়কের গর্তে পড়ে আহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দক্ষিণখান কেসি হাসপাতাল ও আর্ক হাসপাতালের সামনে নিয়মিত পানি জমে থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রুগী ও রুগীর স্বজনদের পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ। ডাইরিয়া, আমাশয় ও জন্ডিস সহ পানি বাহীত রোগীর সংখ্যাও বেড়ে চলছে প্রতিনিয়ত।

তবে আশার বাণী ঢাকা ১৮ আসনের বর্তমান এমপি খসরু চৌধুরী এ সকল বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাজ শুরু করেছে। কিন্ত চলমান কাজে গতি না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি থৈথৈ করে। যার ফলে দুর্ভোগের মাত্রা যেন আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তার ময়লা ও দুর্গন্ধ যুক্ত পানি বাসতবাড়িতে ঢুকে পরছে।

দক্ষিণখান থানা এলাকার ৪৭, ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নং ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সড়ক কেটে ফেলায় পুলিশের গাড়ী, ফায়ারসার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকেও বঞ্চিত এলাকার সাধারণ মানুষ। সড়কের দুই পাশে বাসা বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় সাধারণ জীবনযাত্রা দুঃসহ হয়ে উঠেছে।

এদিকে সাধারন মানুষের সুরক্ষায় পুলিশ এক্ষেত্রে কি কি বাধার সম্মুখীন হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে দক্ষিণখান থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আমিনুল বাশার বার্তা বাজার প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান, বর্তমানে রাস্তার বেহাল দশা থাকায় পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। সাধারন মানুষকে সেবা দিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। পুলিশ প্রতিনিয়ত বাধার মুখে পড়ছে। সড়কের অবস্থা খারাপ থাকায় সাধারন মানুষ জরুরি সেবা নিতে হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের অফিসাররা অনেক সময় পায়ে হেঁটেই অনেক কষ্ট করে সেবা কার্যক্রম ঠিক রাখার চেষ্টা করছে।

এমপি যায় এমপি আসে, মন্ত্রীত্বেরও হয় রদবদল, শুধু বদলায় না এলাকাবাসীর ভাগ্যের চাকা, বদলায় না এলাকার রাস্তা ঘাট। তাই তারা দ্রুতই এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে চান, চান রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন।