টেকনাফ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সাবেক বিএনপি নেতা জাফর আহমদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দায়ের করা মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অভিযোগ পত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি ৪ কোটি ৮০ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩১ টাকার সম্পদ তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জন এবং ভোগ দখলে রেখেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৯ সালের ১ এপ্রিল দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন টেকনাফের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ ও তার স্ত্রী আমেনা খাতুনের বিরুদ্ধেও পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। পরে জাফর উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করলে মহামান্য হাইকোর্ট দুই সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্বসমর্পনের নির্দেশ দেন। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পন করলে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
চার্জসীটে বলা হয়েছে, জাফর আহমদের পরিবারে ১৭ বছরে ১১ সদস্যের পারিবারিক ব্যয় দেখানো হয়েছে মাত্র ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। যা অস্বাাভাবিক মনে করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। জাফর আহমদ তার নামে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৪১ হাজার ৯৯ টাকা ঋণ রয়েছে বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু তার নামে ঋণ রয়েছে ৭৪ লাখ ১৮ হাজার ৪৯ টাকা। দীর্ঘ তদন্তে জাফর আহমদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে সম্প্রতি চট্টগ্রাম আদালতে থাকা দুদকের প্রসিকিউশন শাখায় জাফর আহমদের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন এ চার্জশিট দাখিল করেন।
দুদক পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, জাফর আহমদের বিরুদ্ধে দাখিলকৃত চার্জশিট ইতিমধ্যে আদালত দেখেছেন। আগামী ধার্য তারিখে (২০ মে) এটির গ্রহণের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
মামলার বাদী ও চার্জশিট দাখিলকারী দুদক কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন চার্জশিটে উল্লেখ করেন, একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও জাফর আহমদ ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৭ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানাযায়, জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাফর আহমদকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। সেই সূত্রে ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। এতে তিনি ২ কোটি ৬১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৬৪ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রদান করেন। কিন্তু যাচাই করলে দেখা যায়, তিনি ৬ কোটি ২৩ লাখ ৮ হাজার ৭৩৫ টাকার স্থাবর সম্পদের মালিক। এক্ষেত্রে তিনি ৩ কোটি ৬১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৭১ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য অসৎ উদ্দেশ্যে গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এছাড়া দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তিনি নিজ নামে ৩৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। যাচাই করে দেখা যায়, তার নামে ৫১ লাখ ২৫ হাজার ৬৩৯ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি ১৭ লাখ ১০ হাজার ৬৩৯ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। অর্থাৎ জাফর আহমদের ঘোষিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মূল্য ২ কোটি ৯৫ লাখ ৭৪ হাজার ৩৬৪ টাকা। যাচাই করলে দেখা যায়, তার নামে প্রাপ্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মূল্য ৬ কোটি ৭৪ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৪ টাকা। এক্ষেত্রে তিনি ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৬০ হাজার ১০ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। সেই হিসাবে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এজাহারে আরো বলা হয়, সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, জাফর আহমদ ২০০১–০২ কর বছর থেকে ২০১৭–১৮ কর বছর পর্যন্ত বেতন ভাতা, গৃহ সম্পত্তির আয়, কৃষি আয়, আমদানী ব্যবসার আয়, দান, ঋণ গ্রহণ ও জমি বিক্রি বাবদ ২ কোটি ৫০ লাখ ৬ হাজার ৮৯৫ টাকা বৈধভাবে আয় করেছেন। এছাড়া তার পারিবারিক ব্যয়, কর পরিশোধ, জমি ক্রয়, গ্রহণকৃত ঋণের সুদ পরিশোধ ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ ৬৬ লাখ ৪১ হাজার ৬৪৫ টাকা খরচ করেছেন। অর্থাৎ তিনি ৬ কোটি ৭৪ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৪ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন এবং ৬৬ লাখ ৪১ হাজার ৬৪৫ টাকা পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় করেছেন। তার ব্যয়সহ মোট অর্জিত সম্পদের পরিমান ৭ কোটি ৪০ লাখ ৭৬ হাজার ১৯ টাকা। উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৬ হাজার ৮৯৫ টাকা। এক্ষেত্রে তিনি ৪ কোটি ৯০ লাখ ৬৯ হাজার ১২৪ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৭ (১) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রসঙ্গত, তৃতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনে জাফর আহমদ ও তার ছেলে দিদার আলম চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন।
বার্তা বাজার/এইচএসএস