প্রায় প্রতিটি মানুষ সপ্তাহে ৫/৬ দিন কাজের পর অন্তত একটি দিন হাতে রাখেন নিজের ও পরিবারের জন্য। শত ব্যস্ততার পর সাপ্তাহের সেই দিন অর্থাৎ শুক্রবার সবাই যখন প্রশান্তির খোজে কোন বিনোদন কেন্দ্র বা একান্ত সময় কাটান পরিবার নিয়ে ডাঃ হাবিবুর রহমান সেখানে ব্যতিক্রম।
সেই ২০১৯ সাল থেকে প্রায় প্রতি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত কেরানীগঞ্জ, সাভার, ও কামরাঙ্গীরচরের বিভিন্ন অঞ্চলে ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্প ও বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ঔষধ বিতরণ করে তিনি মনের প্রশান্তি খুজেন। প্রথমে শখের বসে করলেও পরে এর মায়ায় পড়ে যান ডাক্তার হাবিব।
নিজের বোনকে নিয়ে বাবার নামে গড়ে তোলা আলাদিন পেইম সেন্টারের মাধ্যমে একের পর এক ক্যাম্প পরিচালনা করে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সর্বস্তরের হাজারো মানুষের মনে জায়গা করে নেন তিনি। খ্যাতির পাশাপাশি পরিচিত হয়ে উঠেন মানবতার ফেরিওয়ালা ও গরীবের ডাক্তার হিসেবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক এ শিক্ষার্থী নিজে একজন ব্যাথা বিশেষজ্ঞ হয়েও পরিবার ও বন্ধুমহলের অন্যান্য ডাক্তারদের নিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন প্রায় সকল রোগের চিকিৎসা। কোন জনপ্রতিনিধি না হয়েও কেরানীগঞ্জ ও এর আশপাশের উপজেলাগুলোতে হাবিব এক পরিচিত নাম
১১ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ৫ মে ২০২৩ পর্যন্ত তার পরিচালিত ফ্রি ক্যাম্পের সংখ্যা ছিলো ৯৯টি, মোট সেবা গ্রহীতা ১৬১৯০ জন। ২ জুন ২০২৩ ছিলো তার শততম ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প। এদিন কেরানীগঞ্জ মডেল থানার তারানগরের সিরাজনগর উচ্চবিদ্যালয়ে ৩২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেবা দেন প্রায় তিন হাজার রোগীকে।
পাশাপাশি ফ্রি ঔষধ! এতো বড় আয়োজন আর কখনো দেখেনি কেরানীগঞ্জবাসী। যেখানে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাক্ষাৎ পেতে দিন, সপ্তাহ এমনকি মাসও লেগে যায় সেখানে হাতের কাছে একই মাঠে এতো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পেয়ে খুশি এলাকাবাসী।
কোন্ডা থেকে সিরাজনগর সেবা নিতে এসেছেন তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাথে নিয়ে এসেছেন তার কাছের লোকদেরও। তিনি জানান, ডাক্তার হাবিব কেরানীগঞ্জের গর্ব। যেখানে সাধারণ মানুষ অনেক সময় ডাক্তারদের বাকা চোখে দেখেন সেখানে ব্যাতিক্রম ডাক্তার হাবিব।
তার কাছে রোগী এলে এমনিতেই অর্ধেক ভালো হয়ে যায়। তিনি একজন সার্জন হলেও সব ধরণের রোগীই আসে তার কাছে। সবাইকে ঔষধ না দিলেও তার ব্যবহারে অনেকে সুস্থ হয়ে উঠেন, মনে সাহস পান। তাই কয়েকজন কাছের লোক নিয়ে এসেছি ডাক্তার দেখাতে।
একই কথা বলছেম সিংগাইর থেকে আসা রাবেয়া খাতুন। তিনি বলেন, ডাক্তার হাবিবের অনেক নাম শুনেছে অন্যের মুখে। আজ দেখলাম, রোগের ভিন্নতার কারণে তার সেবা না পেলেও বড় ডাক্তার দেখাতে পেরে খুশি তিনি।
স্থানীয় সমাজসেবী রিয়াজ আহমেদ জানান, ডাক্তার হাবিব একজন পর উপকারী মানুষ। তিনি প্রতি শুক্রবার ছাড়াও করোনা কালিম সময় “হোম হসপিটাল সার্ভিস” কার্যক্রম চালুকরে ফোন কলের ভিত্তিতে মানুষকে ফ্রি সেবা দিয়েছেন। প্রয়োজনীয় ঔষধ সহ, রাত ১০ টা ১২ টা পর্যন্ত চলত “হোম- হসপিটাল সার্ভিসের কার্যক্রম।
কেরানীগঞ্জ ডক্টরস এসোসিয়েশন”কে একত্রিত করে ২৪ ঘন্টা ফোন কলের মাধ্যমে ফ্রী চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। সিলেটের বন্যার সময় দূর্গত এলাকায় গিয়ে ডাক্তার হাবিব কেরানীগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে একের পর এক প্রোগ্রারে মাধ্যমে সাধারন মানুষের কাছে তার সেবা পৌঁছে দিয়েছেন ।
শততম ক্যাম্প নিয়ে ডাক্তার হাবিবুর রহমান বলেন, শত একটি সংখ্যা মাত্র। আমি এটি প্রথমে শখের বসে শুরু করলেও এখন নেশায় পড়ে গেছি। এ নেশায়ই জীবন কাটিয়ে দিতে চাই। মানুষের কাছে যেতে, তাদের ভালোবাসা পেতে এর চেয়ে ভালো মাধ্যম আর হতে পারেনা।
বার্তা বাজার/জে আই