নেত্রকোনার দুর্গাপুরে হঠাৎ ঝড়ের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি,গাছপালা, মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছ-পালা। গাছের ডাল পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারে মানুষ।

বৃহস্পতিবার (০১ জুন) বেলা তিনটার দিকে পৌর শহরসহ উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে ঝড় আঘাত হানে। এ ঝড় প্রায় ২৫-৩০ মিনিট স্থায়ী ছিল।

এতে অর্ধশতাধিক কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি,গাছপালা,আম,লিচুসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলেরও ব্যাপক ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত এবং শিলাবৃষ্টিও হয়েছে।

অপরদিকে গাছ ও ডালপালা ভেঙে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচল প্রায় এক ঘন্টা বন্ধ ছিল। ঝড়ের পর থেকে বিদুৎ সংযোগ বন্ধ থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে লোকজন।

জানা গেছে, হঠাৎ করে ঝড়ে দুর্গাপুর পৌর শহরের দশাল গ্রামের রুবিনা বেগম,আবু রায়হান,হক মিয়া,এমদাদুলসহ আরো অনেকেরই বসতঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড় ও তুমুল বৃষ্টিতে মৌসুমি ফল আম,লিচু,কলাসহ বিভিন্ন ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। প্রবল বেগে বয়ে চলা বাতাসে উড়ে গেছে সদর ইউনিয়নের এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাল। অপরদিকে বিরিশিরি ইউনিয়নের ঘোড়াইত গ্রামের সড়কে চলন্ত অটোরিক্সায় গাছ পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন চালক।

ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পৌর শহরের দশাল এলাকার হক মিয়ার স্ত্রী দোলনা বেগম বলেন, “আমার একটি মাত্র টিনের ঘর। হঠাৎ করেই ঝড় চলে আসে কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই পুরো ঘর ভেঙে গেছে। পোলাপাইন গুলারে নিয়ে এই ঝড়ের মধ্যেই অন্য বাড়িতে গিয়ে উঠছি।” তিনি আরো বলেন,স্বামী ঢাকায় কাজ করেন। ৪ সন্তান নিয়ে এই ঘরেই থাকতাম।

একই এলাকার আবু রায়হান বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড রোদ আজও রোদ থাকলেও হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। ঝড়ের শুরুতেই প্রথমে আমার ঘরের বারান্দা উড়িয়ে নিয়ে যায় এরপর মুহূর্তেই ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি ঘরের ভিতরে থাকা সবাইরে নিয়ে অন্যস্থানে আশ্রয় নিতে পেরেছিলাম তাই কেও এর ক্ষতি হয় নাই।”

পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ মানির হোসাইন মানিক বলেন, ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে গিয়ে আমি সবার খোঁজ নিচ্ছি।

সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নে অনেক ঘরবাড়ি ও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছি।

দুর্গাপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ ঝড়ে বিদ্যুতের তারের ওপর গাছের ডাল পড়ায় বিকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে পুরো উপজেলার প্রায় ৬২ হাজার মানুষ। তারের ওপর থেকে গাছ ও ডালপালা সরানো কাজ করছে আমাদের লোকজন। আশা করছি দ্রুত লাইন চালু করা যাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, ঝড়ে বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খবর পেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া হবে।

বার্তাবাজার/এম আই