ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা বিএনপিতে নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। কিছুতেই থামছে না তাদের কোন্দল। যতই দিন যাচ্ছে এ কোন্দল আরো প্রকট আকার ধারণ করছে। বর্তমানে প্রতিটি গ্রুপই আলাদাভাবে দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করছে।

সবশেষ গত মঙ্গলবার (৩০ মে) দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচিও পৃথকভাবে করতে দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলফাডাঙ্গা উপজেলাটি ফরিদপুর-১ সংসদীয় আসনের অন্তর্গত। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। বিশেষ করে আলফাডাঙ্গা উপজেলাটি আওয়ামী লীগের দূর্গ হিসেবে খ্যাত। এখানে বিএনপি সংখ্যালঘিষ্ঠ থাকার পরও তাদের নিজেদের অভ্যন্তরীন কোন্দলে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। মূলত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটিতে দলের মনোনয়ন যুদ্ধে লড়েছিলেন সাবেক সাংসদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ্ মো. আবু জাফর এবং কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সভাপতি ও সাবেক সাংসদ খন্দকার নাসিরুল ইসলাম। শেষপর্যন্ত ওই নির্বাচনে দলটি শাহ্ মো. আবু জাফরকে মনোনয়ন দেন। সেই থেকে অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব থাকলেও উপজেলা বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণা নিয়ে এই কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নেয়।

গত ২৬ জানুয়ারি সংগঠনটির জেলা শাখা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে আব্দুল মান্নান আব্বাসকে আহ্বায়ক ও মো. নুরুজ্জামান খসরুকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট একটি আংশিক কমিটি ঘোষণা দেন। কিন্তু ‘নানা অনিয়ম’ আখ্যা দিয়ে কমিটি প্রকাশের দুইদিনের মাথায় সংগঠনটির কেন্দ্র থেকে ওই কমিটি স্থগিত ঘোষণা করে। এরপর থেকেই দু’টি পক্ষের কোন্দল আরও দৃশ্যমান হয়।

বর্তমানে প্রতিটি গ্রুপই আলাদাভাবে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। রয়েছে পৃথক দলীয় কার্যালয়। উপজেলা বিএনপির মধ্যে এমন বিভক্তি সৃষ্টি হওয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন সমর্থক জানান, এখন আওয়ামী লীগের শাসন আমল চলছে। এসময়ে বিএনপির সবাই একাট্টা হয়ে দলীয়ভাবে কাজ করবেন। কিন্তু তারা তা না করে নিজেদের আখের গোছাতে দলে বিভাজন সৃষ্টি করছেন।

জানতে চাইলে একপক্ষের নেতৃত্বে থাকা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিয়া মো. আকরামুজ্জামান ও পৌর বিএনপি’র সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রবিউল হক রিপন বলেন, ‘ফরিদপুর-১ আসনে দীর্ঘকাল ধরে শাহ্ মো. আবু জাফর নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। কিন্তু হঠাৎ করে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম এসে আমাদের মাঝে গ্রুপিং সৃষ্টি করে। তার সাথে গুটিকয়েক লোকজন আছে। এতে দেখার দৃষ্টিতে দলীয় কর্মকাণ্ডে অনেকটা বিঘ্নিত করলেও কার্যক্ষেত্রে কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে আমরা চাই; সবাই একসাথে রাজনীতি করি।’

অপরপক্ষের নেতৃত্বে থাকা সদ্য স্থগিত হওয়া কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান আব্বাস ও সদস্য সচিব মো. নুরুজ্জামান খসরু বলেন, ‘আমাদের আহ্বায়ক কমিটি স্থগিত তবে বাতিল না। সেইকারণে আমরা দলীয় কার্যক্রম করে থাকি। আমরা দলীয় কার্যক্রমে সব নেতাকর্মীদের নিমন্ত্রণ জানাই। তবে একটি পক্ষ উপস্থিত না হয়ে পৃথকভাবে কার্যক্রম করে থাকে। আমরা সবসময় ঐক্যের পথে থাকতে চাই।’

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ্যাড. সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা বার্তা বাজার’কে জানান, ‘বর্তমান আন্দোলনের সময়। তাই নিজেদের মধ্যে সকল মনোমালিন্য ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের পক্ষে কাজ করতে হবে। তিনি আরও জানান, দলের অভ্যন্তরীন কোন্দল নিরসনে কাজ করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই সমাধান হবে।’

বার্তাবাজার/এম আই