দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর উৎসবমুখর পরিবেশে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে উদযাপিত হচ্ছে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর।
বুধবার (১০ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১৫মিনিট থেকে ৬টা ২৫ মিনিটের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সকল ঈদগাহ ময়দান ও মসজিদে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। তবে ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত সকাল ৬টা ২২টা মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজধানী আবুধাবির শেখ জায়েদ মসজিদে। এরআগে দুবাইতে ৬টা ২০ মিনিট ও শারজাহ-আজমানে ৬টা ১৭ মিনিটে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের জন্য নির্ধারিত মসজিদ ও বিশাল ঈদগাহ ময়দান সূর্য ওঠার আগেই কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সেখানে বেশিরভাগ মুসল্লি বাংলাদেশি, পাকিস্তানি ও ভারতীয়। জামাত শেষে দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির জেনারেল অথরিটি অব দ্য ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড এন্ডোমেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদের নামাজের সময় ঘোষণা করে।
নামাজ শেষ হতেই মোবাইল ফোনে দেশের প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রবাসীরা। বাসায় ফিরে আরব দেশের প্রধান খাদ্য খেজুর, পায়েস, বিরিয়ানি-পোলাও ও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার খান সবাই। পরিবার পরিজন ছেড়ে দূরপরবাসে বসবাসরত অধিকাংশ প্রবাসী ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করছেন সহকর্মী ও বন্ধুদের সঙ্গে। বিকেলে ঈদের আনন্দ উদযাপনে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়াবেন অনেকেই।
তবে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করলে ঈদের উল্লাস আরও গাঢ় হয়। প্রবাসীদের জীবনে এই আনন্দ উল্লাসের সুযোগ নেই। প্রবাসীদের ঈদ উদযাপন অন্যদের চেয়ে আলাদা। প্রবাসে বাংলাদেশের মতো ঈদের আমেজ পুরোপুরি থাকে না। তবুও সবাই সাধ্যমতো চেষ্টা করেন একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময়, কোলাকুলি, খাওয়া-দাওয়া এবং ঘুরে বেড়ানোর মধ্য দিয়ে ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে।
প্রবাসীদের ঈদ মানে সকালে ঘুম থেকে উঠে ঈদের নামাজ পড়া। নামাজ শেষে সহকর্মী, দেশী-বিদেশী বন্ধু ও পরিচিতজনদের সঙ্গে কোলাকুলি করে ঘরে ফেরা। এরপর পরিবার-পরিজনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে সময় পার করা, খাওয়া দাওয়া আর ঘুম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী বলেন, দেশের মতো এখানে আনন্দটা তেমন নেই বললেই চলে। ঈদের নামাজ শেষে দেশে ফোন করার পর বুকের ভেতর কষ্টের তীব্রতা যেন আরও বেড়ে যায়। বুকফাটা যন্ত্রণাকে বুকে নিয়ে বিছানায় গিয়ে চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করি।
প্রবাসী মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, আসলে প্রবাসীদের ঈদের দিনগুলোকে অন্যান্য দিনগুলোর সঙ্গে পার্থক্য করা কঠিন। কারণ অনেক প্রবাসীকেই ঈদের দিনও তাদের নির্ধারিত ডিউটি করতে হয়। প্রবাসে ঈদের দিনে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে দেশে প্রিয়জনদের সঙ্গে কাটানোর ঈদের দিনগুলোর কথা। তারপরও আমরা আমাদের মতো করে ঈদের আনন্দকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়ার চেষ্টা করি।