বন ও পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ায় বনবিভাগের এক বিট কর্মকর্তাকে মাটি ভর্তি ডাম্পার চাপা দিয়ে হত্যা করেছে পাহাড় খেকোরা।

এদিকে বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামানকে হত্যায় ব্যবহৃত ডাম্পারটি উখিয়া থানার পুলিশ নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে আটক করেছে। তবে গাড়ির ঘাতক চালক ও মালিককে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

রবিবার (৩১ মার্চ) রাত সাড়ে তিনটার দিকে উথিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান (৩০) কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বনবিটের দায়িত্বরত ছিলেন। তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলার , থানা-গজারিয়াগজরিয়া উপজেলার ভিটিকান্দি এলাকার মোহাম্মদ শাহজাহানের পুত্র।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাতে অভিযানের পথিমধ্যে রাজাপালং ইউনিয়নেের হরিণমারা অংশ থেকে পাহাড় কেটে বালি সরবরাহ করার সময় একটি মিনি ট্রাক (ডাম্পার) মোটর সাইকেল আরোহী সাজ্জাদকে পরিকল্পিতভাাবে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।

এ সময় মস্তিষ্ক ও দেহ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই মারা যান সাজ্জাদ, পরে তার সাথে থাকা উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তার গাড়ি চালক মো: আলীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা।

স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, ঘাতক ডাম্পারটি বনবিভাগের তালিকাভুক্ত পাহাড়খেকো ছৈয়দ করিম প্রকাশ কানা ছৈয়দ করিম এর। তিনি রাজাপালং ইউনিয়নের তুতুরবিল গ্রামের সুলতান মিয়ার পুত্র। রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম হরিনমারা গ্রামের আবুল হাসেমের পুত্র বাপ্পি ঐ ডাম্পার চালাচ্ছিলো।

উখিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসেন জানান, নিহত সাজ্জাদুজ্জামানের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে, ইতিমধ্যে ঘাতক ডাম্পারটি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা থেকে আটক করা হয়েছে।

দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরোয়ার আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে জানান, পাহাড়খেকোদের সামাজিক রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক তথা সম্মলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে, আমরা একজন দক্ষ বন কর্মকর্তাকে হারালাম। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বনবিভাগে যোগদান করেন ব্যক্তিগত জীবনে সাজ্জাদুজ্জামান এক কন্যা সন্তানের জনক।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে দায়িয়ত্বশীল জানা গেছে , হিজলিয়া সড়ক দিয়ে ঢুকে ৪০ টি অবৈধ ডাম্পার দিনে রাতে পাহাড়ের মাটি ও বালি পাচার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। যে যেখানে পারছে বালি মজুত করছে। হিজলিয়া থেকে শুরু করে হরিনমারা হয়ে খয়রাতি পাড়া পর্যন্ত সড়কের দু পাশে মজুত করা রয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ বালি। এমন কোন জায়গা নেই যেখানে বালির মজুত নেই।

পাহাড়কাটা ও বালি পাচার কাজে নিয়োজিত অবৈধ ডাম্পার মালিকদের মধ্যে রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণ মারা ও বাগানের পাহাড় এলাকার মোহাম্মদ কোম্পানি, গফুর কোম্পানি, মাহমুদুল হক, ছৈয়দ করিম, মাস্টার কবির আহমেদ, বদু প্রকাশ ফিটিং বদু, শাহ আলম, কানা সৈয়দ করিম, খালখাছা পাড়ার মোঃ মুস্তাফিজ, মুফিজ, জাদিমোরা এলাকার সাইফুল কবির, আলিমোরার জামাল, হিজলিয়া মাজর পাড়া এলাকার মৌলভী রেজা। তাদের সহযোগি হিসেবে রয়েছে হিজলিয়ার আব্দুল্লাহ, হেলাল, রশিদ, উত্তর পুকুরিয়ার বেলাল, তুতুরবিলের সালাহ উদ্দিন, কুতুপালং এলাকার মংচানু বড়ুয়া, কুতুপালং পিএফপাড়া এলাকার সাগর বড়ুয়া প্রমুখ।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বলেন, আমরা অবৈধ ডাম্পারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। গত কয়েকদিন আগেও মাটি ভর্তি একটি ডাম্পার আটক করে মামলা দিয়েছে। বিট কর্মকর্তা সহ আমরা বনকর্মীরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সরকারের বনসম্পদ রক্ষার্থে। দোছড়ি বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদ সরকারি সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিজের প্রাণটা পর্যন্ত দিয়ে দিলো। অবৈধ ডাম্পার, বালি উত্তোলন,পাহাড় কাটা, অবৈধ সমিল সহ সবকিছুর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এই অভিযান শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। বিষয় গুলো নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে আলোচনা করা হয়েছে।

কয়েকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না শর্তে জানান, উখিয়া পাহাড় খেকো সিন্ডিকেট গুলো বেপরোয়া ও ভংয়কর। তারা মূর্তিমান আংতকের নাম হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যে । এরা দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি চরম অশ্রদ্ধাশীল। এই সিন্ডিকেটকে কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না। এই চক্রের কারনে উখিয়া পুরোপুরি ধ্বংসের পথে। পাহাড় ধ্বংসকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে উখিয়া রেঞ্জে দায়িত্বরত বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও ইনানী রেঞ্জের দায়িত্বরত বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে রহস্য জনক কারনে। সচেতন মহলের মধ্যে এই নিয়ে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।