নীলফামারীর ডিমলায় পুলিশ হেফাজতে থাকা ব্যক্তি কীভাবে ফেসবুকে পোস্ট করেন, তা নিয়ে নেটিজেনরা পুলিশের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আজ শনিবার (১৬ মার্চ) চুরি, অসাধুভাবে সম্পত্তি আত্মসাৎ, প্রতারণা ও জীবননাশের হুমকির অভিযোগে আটক স্কুল শিক্ষক শহিদুল ইসলাম থানা হাজতে বসে ফেসবুকে পোস্ট করছেন!

এর আগে গত রবিবার (১০ মার্চ) জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বরাবর মোঃ শহিদুল ইসলাম তার স্ত্রী মোছাঃ রাজিয়া সুলতানা ডিমলা উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও শরীফ ইবনে ফয়সাল (মুন) একই উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে পরকীয়া প্রেমের অভিযোগ আনেন। আর শহিদুল তার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে মোছাঃ রাজিয়া সুলতানা ও শরীফ ইবনে ফয়সাল মুনের কথোপকথন প্রকাশ করেন। সেই কথোপকথনে প্রকাশিত হয় একের পর এক মুন চেয়ারম্যান ও মোছাঃ রাজিয়া সুলতানার ফোনালাপ। আর এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শহিদুলের সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন শরীফ ইবনে ফয়সাল মুন। নেটিজেনদের অনেকের মন্তব্য মূলত একারণেই তাকে হয়রানি করছে গয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ সকাল ১০টায় নীলফামারী সদর উপজেলার পিটিআই মোড় থেকে আটক করা হয় মোঃ শহিদুল ইসলামকে। আটকের পর অনুমানিক দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের এসআই মোঃ সাইফুল ইসলাম ও তার সহযোগী ফোর্স থানা হেফাজতে সোপর্দ করেন আসামি শহিদুলকে। এ সময় শহিদুলের ব্যবহৃত মুঠোফোন ও মানি ব্যাগ জমা রাখেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। পুলিশ হেফাজতে থাকা শহিদুল ইসলামের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে আনুমানিক দুপুর ৩টা ৩৩ মিনিটে প্রকাশিত এক পোস্ট দেখে হতবাক নেটিজেনরা। পুলিশ হেফাজতে থাকা আসামি কীভাবে ফেসবুকে পোস্ট লিখতে পারেন। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠেছে ফেসবুকে।

সাবিহা তাসনিম নামে এক নেটিজেন শহিদুলের সেই পোস্টে মন্তব্য করেন, I’d হ্যাক করছে নাকি? পুলিশ এখান থেকেই পোস্ট করে, বাহ দারুণ তো। মানুষ যা শুনার শুনছে, আর যা বোঝার তাও বুঝেছে। আর কে কেমন? কার চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র, তাও আমরা জেনে গেছি।

মিম টেইলার্স নামে অন্য আরেক নেটিজেন মন্তব্য করেন, পোস্ট কি শহিদুল করেছেন? কিন্তু কী করে করলেন?

ছায়াপথের নিহারিকা লিখে মন্তব্য করেছেন, এটা বাংলাদেশ সবই সম্ভব, পুলিশ আটক করছে ওনাকে।

মনিরুজ্জামান আজাদ নামে আরেক নেটিজেন মন্তব্য করেন, নাটকের শেষ নেই, উভয় পক্ষই নিন্দনীয় ব্যক্তি। আপনারা আমাদেরকে সমাজের কাছে হেয় করছেন কারণ আমাদের সন্তানেরাও এখন অনলাইনে থাকে। উভয় পক্ষকে সংযত হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনারা আপাতত অফলাইনে থাকুন। অনেক দেখেছেন ও শুনেছেন, আমরা মজা এবং কষ্ট দুটোই পেয়েছি। কিছুক্ষণ আগে দেখলাম গ্রেফতার এখন দেখছি ক্ষমা চাওয়ার পোস্ট। প্রশাসনের হাতে গ্রেফতার থাকা অবস্থায় ফোন ব্যবহারের নিয়ম আছে কিনা আমি জানি না। কার পোস্ট কে করে আল্লাহই ভালো জানেন। দুই পক্ষের যে পক্ষই লড়াইয়ে জিতুক না কেন ঘৃণিত কিন্তু উভয় পক্ষই।

মোঃ মোতালেব হোসেন নামে আরেক নেটিজেন মন্তব্য করেন, আপনি পারিবারিক সমস্যাটা বিশ্বের কাছে দাঁড় করালেন আপনি যে পোশাক পরেছেন সেটারও অমর্যাদা তৈরি করলেন আপনি কেমন পুরুষ একজন স্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না, না পারলে সেটা অন্যভাবে বাদ দিলেন না। এত কিছু প্রয়োজন ছিল না। আর এত ভিডিও পেলেন কীভাবে। এর মধ্যে কিন্তু আছে।

মোঃ তরিকুল ইসলাম মুন্না নামে আরেক নেটিজেন মন্তব্য করেন, তাকে ন পুলিশ ধরেছে, এইটা নিশ্চিত তার ঘরের মানুষের করা পোস্ট, নাহলে আইডি হ্যাক।

অন্যদিকে গয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ ইবনে ফয়সাল মুনের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডির একটি পোস্ট নেটিজেনদের ধারণাকেই ইঙ্গিত করে। সেখানে তিনি লিখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ বাকি থাকলো আর গুটি কয়েকজন। শীঘ্রই তাদেরও ব্যবস্থা হচ্ছে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের এসআই মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, বেলা ১২টার দিকে আসামি শহিদুলকে আটক করা হয়। সাক্ষাতে কথা বলবে বলে ফোনটা কেটে দেন তিনি।

পরে আবারও মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, এসব কথা কি ফোনে বলা যায় ভাই? মোবাইল ও মানিব্যাগ থানায় জমা দিয়েছেন শহিদুল। কখন জমা দিয়েছে এমন প্রশ্নে অনেকটা বিরক্তির সুরে বলেন এগুলো টাইম কি দেওয়া লাগবে? টাইম দেওয়া কি জরুরি? কয়টায় গেলাম, আমি তো রাস্তায় অন্য অপারেশন করতে পারি। আমি এখন অপারেশনে বুঝছেন? পরে কথা বলি।

শহিদুলের আইডি থেকে পোস্ট প্রসঙ্গে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ফেসবুক মানুষ হ্যাক করতে পারে না? আর ওই মোবাইলটা তো আমার কাছে আছে। মোবাইলটা তো কেউ খুলতে পারবে না। কেউ তৃতীয় পক্ষ শয়তানি করে এমন করতে পারে।

এ বিষয়ে মোঃ আমিরুল ইসলাম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জানান, কথা বলে যতটুকু জানতে পেরেছি বাস্তবিক অর্থে ডিভাইসটি লক করা। একই সময়ে অন্য কারো কাছে পাসওয়ার্ড থাকলে তিনিও লগইন করতে পারেন। একই একাউন্ট একাধিক ডিভাইসে লগইন করা যায়।

যদি দরকার পড়ে প্রয়োজনে তদন্তের স্বার্থে সিআইডির কাছে পাঠানোর কথা বলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।