উত্তরের হিমেল হাওয়ায় দুলছে লাল সোনালি রঙের বড়ই গাছ গুলো। শীতের মিষ্টি রোদ পড়ে রঙিন বরই গুলো চকচক করছে। ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে অনেক গাছের ডাল। বরই উপরের অংশে হালকা লাল রং রয়েছে। ফলটি আকারে বড়, দেখতে ঠিক আপেলের মতো। খেতেও খুব সুস্বাদু। বিশাল জায়গা জুড়ে লাগানো গাছগুলোতে ফলে ভরপুর হয়ে উঠেছে। এক একটি গাছ ৪ থেকে ৫ হাত লম্বা। বলসুন্দরী, ভারতসুন্দরী এবং টক বরই চাষাবাদে প্রথম বছরেই লক্ষণীয় সাফল্য পেয়েছেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের শংকরদী গ্রামের দুই বন্ধু সফিকুল ও মেহেদী। তারা দুজনই শিক্ষিত যুবক। ব্যবসার এবং কাজের ফাঁকে তারা চাষাবাদ শুরু করেছেন। অদম্য ইচ্ছা ও মনোবল নিয়ে এখন স্বাবলম্বী তারা। দুই বন্ধুর সফলতা দেখে বরই চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এলাকার অন্য কৃষকরা।

বরই একটি সুস্বাদু ফল। দেখতেও আকর্ষণীয় এ ফলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। অল্প পুঁজি ও ঝুঁকি কম থাকায় মাদারীপুর জেলার ৬৬ হেক্টর জমিতে বরই চাষ করেছে এতে ৬৯৩ হেক্টর বরই উৎপাদন হবে। যার গড় ফলন প্রায় ১১মেট্রিক টন এবং এই বরই বাগান করে অনেকেই সফালতা পেয়েছেন। বরইয়ের বাম্পার ফলনে খরচের চেয়ে লাভের পরিমাণ দুই থেকে তিন গুণ। এতে খুশি চাষিরা। তাদের অনুসরণ করে জেলাগুলোতে দিন দিন এ ফল চাষে আগ্রহ বাড়ছে অন্য চাষিদেরও।

জানা যায়, গত বছর সফিকুল ও মেহেদী দুই বন্ধু মিলে বার্ষিক চুক্তিতে রাজৈর উপজেলার শংকরদী গ্রামে প্রথম বছর নিজেদেরসহ ৫বিঘা জমি লিজ নেয়। সেখানে তারা তিন জাতের ৫’শ বরই গাছের চারা রোপনের মাধ্যমে বাগান তৈরি করেন। যশোর থেকে তারা এসব চারা সংগ্রহ করেন। এতে তাদের সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এই বাগান করার মাত্র ৯ মাসের মধ্যেই তাদের বাগানের প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমাণে বরই ধরে। সেই বছর খরচ তুলে লাভবান হয়েছিল। এবং আরও ৭ বিঘা জমি বাড়িয়ে ১২ বিঘা জমিতে এবার বরই চাষ করা হয়েছে। আপেলের মতো দেখতে লাল টুকটুকে বড় বড় বরই শোভা পাচ্ছে তাদের গাছে। প্রচুর পরিমাণে বরই ধরায় পুরো বাগানটি নেট দিয়ে ঘেরা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বাগানের গাছ থেকে বরই তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। মচমচে স্বাদে সুমিষ্টি হওয়ার কারণে তাদের বরই ৪ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এই বাগনের উদ্যোক্তারা আশা করেছে চলতি মৌসুমে এখানে থেকে প্রায় ৬০০ মণ বরই বিক্রি করতে পারবেন। যা থেকে তারা প্রথম বছর থেকে বেশি পরিমাণ টাকা আয় করার সম্ভাবনা দেখছেন।

বরই বাগানের উদ্যোক্তা সফিকুল ইসলাম জানান, আমরা দুই বন্ধু মিলে নিজেরা কিছু করব এমন চিন্তায় ১২ বিঘা জমির ওপর এই বরই বাগানটি গড়ে তুলেছি। পুরো চাষাবাদে আমরা জৈব সার ব্যবহার করেছি। এবং মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। যার কারণে আমাদের বাগানে বরই ভালো ফলন দেখা যাচ্ছে। এখানে ২জন শ্রমিক স্থায়ীভাবে কাজ করে এবং অস্থায়ীভাবে মজুরিতে আরও চার পাঁচ জন কাজ করছে। এ বছরে বরই বিক্রি করে আমরা ৮-১০ লাখ টাকা লাভের আশা করছি। এই সাফল্যের পর আমরা পাশ্ববর্তী কৃষি জমিতে বাগানের পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এর বাইরেও আমার নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

আরেক বন্ধু উদ্যোক্তা মেহেদী হাসান বলেন, শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি বসে না থেকে আমাদের মতো বাগন করে তবে তারাও নিজেরা স্বাবলম্বী হতে পারবে। আমি প্রবাসী ছিলাম দেশে আসার আগেই বন্ধুর সাথে পরামর্শ করে বরই বাগান করার পরিকল্পনা করি এবং দেশে এসেই এই বাগান করে সফলতা পেয়েছি। এমনকি আমাদের দেখাদেখি অনেকেই বরই বাগান শুরু করেছে। আমাদের কাছে আসলে আমরাও পরামর্শ ও সহযোগিতা করি।

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সন্তোষ চন্দ্র চন্দ জানান, আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ঐ দুই বন্ধুকে ধন্যবাদ জানাই। যারা তাদের অন্য কাজের পাশাপাশি বরই বাগানের উদ্যোক্তা হয়েছেন। আমরা উদ্যোক্তাদের মাঠ পর্যায়ে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছি। জানতে পেরেছি তারা বরই বিক্রি করে এক মৌসুমেই অনেক টাকা আয় করতে পারবে।