কোরআন শপথ করে ব্যবসার লাভ সমান ভাগ দেওয়ার অঙ্গীকার করে লগ্নির ৪২ লাখ টাকা হাতিয়ে চম্পট দিয়েছে এক প্রতারক চক্র। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের দুর্গাপুর ও চন্ডিপুর এলাকায়। প্রতারক চক্রটি গান্না ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মৃত হুজুর আলীর ছেলে অহিদুল ইসলাম, একই গ্রামের মৃত ছামছদ্দিনের ছেলে লিটন হোসেন ও চন্ডিপুর বাজারের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক সিরাজুল ইসলামকে পৃথক ভাবে ফাঁদে ফেলে এই বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়।

এ ঘটনায় মোকলেচুর রহমান, গোলাম রহমান ও ফয়সাল নামে তিন প্রতারকের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ভুক্তভোগী অহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৩ মেয়াদে ২৫ লাখ টাকা, লিটনের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ও সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

এই টাকা কালীগঞ্জ শহরে বসে লেনদেন হয় বলে স্কুল শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম জানান। এর মধ্যে অহিদুল ইসলাম এক লাখ টাকা ০১৯৫৬৮১৫০০০ নাম্বার নগদ একাউন্টে ও বাকি টাকা নগদ প্রদান করা হয়। প্রতারণার শিকার অহিদুল ইসলাম জানান, প্রতারক ফয়সাল অহিদুলের কাছে মুরগী ব্যবসার অফার নিয়ে আসেন। তাকে ফয়সাল জানান তার ভাই বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা।

সরকারিভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৪০টি করে মুরগীর বাচ্চা ও ১০ কেজি করে খাবার দেওয়া হবে। এই বিশাল কার্যক্রম ডিলারদের মাধ্যমে করা হবে। বিরাট লাভ হিসাব করে লোভের ফাঁদে পা দিন অহিদুল ইসলাম। তিনি যোগাযোগ বাঁড়ান ফয়সালের সাথে। ফয়সাল তাকে কালীগঞ্জ শহরে তার বসের কাছে ডেকে নিয়ে যান। কালীগঞ্জে যেয়ে ফয়সালের বস মোকলেচুর রহমান ও গোলাম রহমানের কাছে নতুন ব্যবসার ধারণা পান। তারা তাকে বিশ^ বিখ্যাত রোলেক্স ব্রান্ডের ঘড়ির ব্যবসার অফার করেন।

এই ব্যবসায় ইনভেস্ট করলে লাখে ৩০ হাজার টাকা করে লাভ দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। কিছুদিন পর ভারত থেকে কথিত ব্যবসায়ী এসে ৩০ লাখ টাকা মূল্যের রোলেক্স ব্র্যান্ডের ২৮৪টি ঘড়ির অর্ডার কনফার্ম করেন। বলা হয় মোট ৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এরমধ্যে তারা প্রদান করবে তিন কোটি আর বাকি টাকা অহিদুলকে পার্টনার জোগাড় করে দিতে হবে।

এদিকে একই কথা বলে চন্ডিপুরের সিরাজুল ইসলাম ও লিটনকে ফাঁদে ফলে ওই চক্রটি। ব্যবসার বিষয়টি সত্য প্রমান করতে প্রতারক চক্রটি ভারত থেকে কথিত এক ব্যবসায়ীর আগমন ঘটায়। সেই ইসলামী ব্যাংকের ৩ কোটি টাকার একটি চেক প্রদান করেন ওই চক্রের কাছে। বাকী ৩ কোটি টাকা ওহিদুলকে জোগাড় করতে বলেন।

তাদের এই কথায় রাজি হয়ে যান অহিদুল ইসলাম। কথাবার্তার এক পর্যায়ে সবাই মিলে কোরআন শপথ করে ব্যবসায়ের লাভ সমান ভাগে ভাগ করে নেবে মর্মে অঙ্গিকার করেন। গত ২৬ ফেব্রæয়ারি ২৪ লাখ টাকা তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর নগদ একাউন্টে (০১৯৫৬৮১৫০০০) আরো এক লাখ টাকা দেন অহিদুল। এ ভাবে সর্বমোট ৪২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের ব্যাবহৃত নাম্বার ০১৭৪৬২৮৫১৬০, ০১৯৫২০০২৪৯৮ এবং ০১৮৭৬৫৯৯২৮৯ বন্ধ করে দেন। পরে অহিদুল ইসলাম বুঝতে পারেন তিনি প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দিয়েছেন।

অহিদুল জানান, প্রতারিত হওয়ার পর তিনি কালীগঞ্জ শহরে গিয়ে জানতে পারেন তাদের এলাকার লিটন হোসেন ও সিরাজুল ইসলাম মাষ্টারের সাথেও একই ভাবে প্রতারণা করা হয়েছে। এরপর তারা এক হয়ে কালীগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেন। এবিষয়ে কালীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আবু আজিফ বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। প্রতারক চক্রের ব্যবপারে খোঁজখবর নিচ্ছি। তিনি বলেন, প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে তারা যে নাম ঠিকানা ব্যবহার করেছেন তা ভুয়া।