সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার বেশ সফল একটি নাম। সরকারি চাকরি জীবনের লম্বা ক্যারিয়ারের অবসরে এসে এবার যুক্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে। যদিও রাজনীতির মাঠে ছাত্রজীবন থেকেই জড়িত ছিলেন। তবে ১০ জানুয়ারি গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ দলে যোগ দেন। এ যোগদানের পর প্রথম বারের মতো নিজ এলাকায় এসে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন কবির বিন আনোয়ার। এদিকে নিজ জন্মভূমিতে তার হঠাৎ এমন উপস্থিতির সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে অল্প সময়ের মধ্যে জনসমুদ্রে রূপ নেয়।

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলায় পৌঁছালে তাকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী শোডাউন দিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে যান।
পরে সেখানে তিনি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

কামারখন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম রেজার সভাপতিত্বে এসময় কবির বিন আনোয়ার তার বক্তব্যে বলেন, আমি কামারখন্দের সন্তান। সারাজীবন এ উপজেলার উন্নয়নে কাজ করবো। একই সাথে এ উপজেলার সাধারণ মানুষের সাথে কোন প্রকার অন্যায় ও অবিচার হলে সেটা প্রতিহত করবেন বলে ব্যক্ত করেন। তিনি ছাত্রনেতা বিজয় হত্যা প্রসঙ্গে বলেন, কোন হত্যাই আমাদের কাম্য না। তবে বিজয় হত্যাকান্ডের দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও হত্যার হুকুম দাতাদের আড়াল করতে চার্জশিট এখনও দেয়া হয়নি।বারবার তদন্ত দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি পুলিশ প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান।

কামারখন্দ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে চলা সম্ভ্রান্ত আওয়ামী পরিবারের সন্তান কবির বিন আনোয়ার। তিনি চাকরিজীবন শেষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এ যোগদানের মাধ্যমে ছাত্রজীবনের মত আবারো তিনি ফিরেছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। রাজনীতিতে নতুনরুপে আবির্ভুত হয়ে এই প্রথমবারের মতো নিজ এলাকায়
আশায় আমরা আনন্দিত।

এ সময় সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন ও শ্রমিকলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনসহ আওয়ামী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

কবির বিন আনোয়ার ১৯৬৪ সালে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলায় সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক আবহে বেড়ে ওঠা কবির বিন আনোয়ারের স্কুল ও কলেজ জীবন কেটেছে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজে। সেখানেই শিক্ষকদের নির্বাচনে কলেজ ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের মাধ্যমে হাতেখড়ি ঘটে তার নেতৃত্ব জীবনের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাবস্থায় অংশ নেন সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে। ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত। এ শিক্ষাজীবন শেষে ওই বছরেই সপ্তম বিসিএস পরীক্ষায় দেশ ও দেশের মানুষের কল্যানে কাজ করার তাগিদে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সিভিল সার্ভিসে তিনি যোগদান করেন। কবির বিন আনোয়ার একাধারে মাঠ প্রশাসন ও সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পদে থেকে গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ ৩৫ বছরের চাকরিজীবনে মাঠপর্যায়ে ১৪ বছর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হেগ মিশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ে কাজ করেন। এরপর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে যান মুক্তিযোদ্ধা দম্পত্তির এই সন্তান।