রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ থেকে বিভিন্ন কিশোর গ্যাং গ্রুপের ৫০ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। এদের মধ্যে রয়েছে- টপবাজ গ্রুপ, গ্যাংস্টার প্যারাডাইস, বয়েজ হাই ভোল্টেজ, দে-দৌড়, হ্যাঁচকা টান, বুস্টারসহ আরও কয়েকটি গ্রুপের সদস্যরা। র‌্যাব জানায়, বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যাচেষ্টা এবং পাড়া-মহল্লায় আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল এসব কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা।

বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কেরানীগঞ্জ রাব-১০ এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাং কালচার সারাদেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। যেমন- এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা ও নাশকতা থেকে শুরু করে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা। বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে কিশোররা দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। এমনকি হিরোইজম প্রকাশ করতেও কিশোররা পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং কালচার গড়ে তুলছে।

গত এক বছরে র‌্যাবের অভিযানে ৩৪৯ জন কিশোর গ্যাংয়ের বিভিন্ন গ্রুপের সদস্য গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এসব কিশোর গ্যাং নির্মূলে র‌্যাবের অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি। অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদ উদ্দিন আরও বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় ২০ ফেব্রুয়ারি একাধিক আভিযানিক দল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় একাধিক অভিযান পরিচালনা করে টপবাজ গ্রুপের রাব্বি, গ্যাংস্টার প্যারাডাইস গ্রুপের ইউসুফ, বয়েজ হাই ভোল্টেজ গ্রুপের সাইফুল, দে-দৌড় গ্রুপের মাইদুল, হ্যাঁচকা টান গ্রুপের শাহাদাৎ ও বুস্টার গ্রুপসহ বিভিন্ন কিশোর গ্যাং গ্রুপের ৫০ জনকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারদের মধ্যে আরও রয়েছেন- মো. শাহাদাত হোসেন (৪৪), মো. রাজিব হাওলাদার (২৭), শাওন দাস (২১), মো. আশরাফুল (১৯), মো. ইভান (২১), মো. তাইজুল ইসলাম (২১), মো. আলম হোসেন (১৯), মো. সুজাল হোসাইন রিমন (১৯), মো. রতন (৩৬), মো. জুয়েল (২৮), মো. রায়হান খাঁন (২২), অদিত খান লিমন (২৪), মো. সাইফুল ইসলাম (২৭), গোলাম রাব্বি (২৫), মাইদুল ইসলাম (২২), ইমরান মোল্লা (২৩), নাঈম (১৯), হাসান (২১), শাহজাহান (৪২), আল আমিন (৩৬), সিরাজুল ইসলাম (২৮), মহসিন (৩০), রাজা (২৮), খলিলুর রহমান মিলন (২৫), আবু বক্কর সিদ্দিক (২৮), মৃদুল (২২), ইউসুফ (২৮), রাশেদুল হাসান সাঞ্জু (২৩), ইব্রাহীম (২৮), হাবিব আহম্মেদ হিরা (১৯), সজিব (১৯), আবির হোসেন (১৭), শাকিব সিকদার (২৫), হৃদয় (২২), শান্ত (২১), সাব্বির হোসেন সিয়াম (১৮), শাহিন (১৮), ইমরান হোসেন রিফাত (১৮), সজীব (২১), ফেরদৌস (২১), রাসেল (৪০), আরজু (৪২), শাকিল (১৯), সাগর (৩৫), আলামিন (৩৪), বিল্লাল হোসেন (২৬), রুমান মিয়া (২৪), রাসেল সর্দার (২৫), বিপ্লব হোসেন (২৬) ও মো. আসিফ (১৯)।

এসময় তাদের কাছ থেকে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারামারি ও হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত ১১টি লাঠি, ১৭টি চাকু, ৫টি ছোরা, একটি সুইচ গিয়ার চাকু, একটি ছুরি, একটি চাপাতি, একটি চাইনিজ কুড়াল ও একটি ইলেকট্রিক শক দেওয়ার মেশিন উদ্ধার করা হয়। রাব-১০ এর অধিনায়ক আরও বলেন, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যাচেষ্টা এবং পাড়া-মহল্লায় আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল এসব গ্যাং। গ্রেফতারদের মধ্যে ১৫ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক, অস্ত্র, ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।