দিগন্ত জুড়ে সারি সারি ফুলের গাছ। সবুজ পাতায় মোড়ানো ফুলের অজস্র গাছে যেন বিধাতা নিজে গাঁদা, জিপসি, মামস, ক্যালেন্ডুলা, ডালিয়া, গ্লাডিওলাস ও জর্বেরার মত বাহরি রঙের ফুল দিয়ে সাজিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দরের সাবদিতে ফুল বাগানের হাওয়ায় ভেসে আসা গন্ধ মন মাতায়, প্রাণ জুড়ায়। শীতের এই সময়ে এমন দৃশ্য প্রতি বছরের হলেও এবারের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারনে ফোটেনি ফুল। তাই সাবদীর ফুল চাষীদের কপালে মৌসুমি বাজার হারানোর চিন্তার ভাঁজ।

কৃষকের মাঠে শীতের এই সময়ে ফুল তোলার প্রস্তুতি থাকার কথা থকলেও এখনো জমি নিরিয়ে বীজ বপণ করছেন অনেকে। শীতের শুরুতে অসমেয়র দুই দফা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদি, দিঘলদী ও মাধবপাশা গ্রামের ফুল চাষীরা। অগ্রাহায়নে ফুলের বীজ তলা তৈরী করেন বাগানীরা। সে ফুল পরিপক্ক হয়ে বিক্রয় উপযোগী হয় মাঘ মাসের মাঝামাঝিতে। তবে এবছর বৃষ্টি পাতের কারনে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ও মৈকুলির প্রভাবে পুনরায় বীজতলা করায় পিছিয়ে পরেছে ফুল চাষীরা।

মাঠ জুড়ে ফুল গাছগুলোতে কলি এলেও এখনো ফোটেনি ৭০-৮০ শতাংশ ফুল। এতে করে পহেলা ফালগুন ও বিশ্বভালবাসা দিবসে ফুলের বাজার হারানোর সঙ্কায় পরেছেন এই অঞ্চলের ৫৯৮ বিঘায় ফুলের আবাদ করা প্রায় দেড়শতাধিক ফুল চাষী।

স্থানীয় ফুল চাষী বলেন, আমাদের জমিটি বেশ উঁচু। তারপরও এবার বৃষ্টির কারণে সুবিধা করতে পারবো না। যখন ফুল বিক্রির মৌসুম সেসময় ফুল ফুটছে না। সামনে কয়েকটি দিবস রয়েছে। সেসব দিবসকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই ফুল স্টক করে রাখতে হয়। কিন্তু গাছে ফুল না ফোটার কারণে স্টক করে রাখা যাচ্ছে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকতার্দের নির্দেশনা ও পরামর্শে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তজার্তিক ভাষা দিবস ও ১৫ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের বাজার ধরে লোকশান ঘুচিয়ে লাভের আশায় বুক বেধেছেন এখানকার ফুল চাষীরা। ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ে সাবদিতে। আগত দর্শন্থীর্দের কাছে বিক্রি হয় ফুল। বাগান থেকে তোলা ফুল দিয়ে রিং তৈরী করেন চাষিরা। প্রিয় মানুষকে ফুলের তৈরি রিং দিয়ে বরণ করেন অনেকে। বাগান ঘুরতে আসা দর্শন্থীর্দের কাছে ফুল বিক্রি করেও লাভবান হন ফুলচাষিরা।

বন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকতার্র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এবার মৌসুমি ফুলের বাজার হারানোয় ক্ষতির পরিমাণ ৩০-৪০ লাখ টাকা। তবে প্রান্তিক ফুল চাষিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে কোটি টাকারও বেশি।

অগ্রাহায়ন মাষে বীজ বপনের পর বৃষ্টির কারণে পূনরায় বীজতলা করতে হয়েছে। ফলে ফুল উৎপাদনে এক মাস পিছিয়েছে ফুল চাষিরা। ১৪ এবং ২১ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে ফুল না ফুটলে পুঁজি হারাবেন অনেকে। ৫ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করে এই সীজনে ২ লাখ টাকার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষি কর্মকতার্দের পরামর্শ ও সহায়তা কমনা করছেন স্থানীয় ফুল চাষিরা।

এদিকে ফুলগ্রাম হিসাবে পরিচিত সাবদিতে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসেন দর্শনার্থীরা। বাগানে ফুল কম থাকায় মন খারাপ আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীদের।

ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই সব ফুল ফুটে যাওয়ার কথা। তবে বৃষ্টির কারণে মাত্র ১০-২০ শতাংশ ফুল ফুটেছে। ফলে এখানকার ফুলের বাজারের বাণিজ্যিক ক্ষতি হবে।

এবিষয়ে বন্দর উপজেলার মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকতার্ ইয়াসিন আরাফাত জানান, প্রাকৃদিক প্রতিকুলতার জন্য ফুলের আবাদ কমেছে। বন্দর উপজেলার কৃষকরা ফেব্রুয়ারী মাসের বেশ কিছু দিবসকে কেন্দ্র করে ৮০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করেছেন। এবছর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিশেষ করে গাঁদা ফুল চাষিরা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। আনুমানিক ৩০-৪০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হবে না।

বন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকতার্ তাসলিমা আক্তার বার্তা বাজারকে জানান, শস্য জাতীয় ফসলে ভর্তুকি মূল্যে সার ও বীজ প্রদানের ব্যবস্থা থাকলেও ফুল চাষে এমন কোন সুবিধা পান না চাষিরা। তাই সরকারি সহায়তা কিংবা সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন কলাগাছিয়া ইউনিয়নের ফুলচাষিরা।

বার্তা বাজার/জে আই