দুই বছরেরও কম সময় প্রধানমন্ত্রী থেকে এখন কারাগারে ইমরান খান ও তার দল এমন নাটকীয়ভাবে রাজনৈতিক জৌলুস হারিয়েছে। তবে ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই বলেছে যে তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা বিভিন্ন মামলায় জেলে থাকলেও তারা আসছে সাধারণ নির্বাচনে জিততে পারবে। কঠিন এ পরিস্থিতিতেও পিটিআই তাদের বিশ্বাস থেকে বিচ্যুত হয়নি।

দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ইমরান খানের বিরুদ্ধে সব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এভাবে একাধিক মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

কর্তৃপক্ষের দমনের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পিটিআই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাহায্যে পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং তাদের মধ্যে নতুন প্রার্থী রয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই একদমই নতুন।

পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোট শহরের রাস্তায় রেহেনা দার নির্বাচনি প্রচারণায় নামলে তার পেছনে মানুষের ভিড় জমে যায়। শহরটির অলিগলিতে এমনকি প্রতিটি কোনা তার ছবিযুক্ত পোস্টারে ছেয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। তার সামনে ড্রাম বাজিয়ে পথ তৈরি করে দেয়া হচ্ছে আর ওপর থেকে তার দিকে অবিরত গোলাপের পাপড়ি ঝরছে।

সত্তরের কোটায় বয়সে রেহানা দারের অপ্রত্যাশিতভাবে একজন রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা বেশ অবাক করা হলেও বিষয়টি এক সেকেন্ডের জন্যও তার চেহারায় ফুটে ওঠেনি।

যে ভয়ে তার অনেক সহকর্মী প্রার্থী গা-ঢাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে আন্ডারগ্রাউন্ড বা রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, রেহেনা দারের মধ্যে তার ছিটেফোঁটাও পাওয়া যায়নি।

‘ভাবতেই ভালো লাগছে যে, আমার শহর শিয়ালকোটের গর্বিত ছেলে-মেয়ে, ভাই ও মায়েরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন’, তিনি এতটা আত্মবিশ্বাসের সাথে জোর গলায় কথাগুলো বলেছেন, যা দেখে মনে হয়েছে তিনি বছরের পর বছর ধরে নির্বাচনি প্রচারণা করছেন।

‘আমি ইমরান খানের সঙ্গে আছি এবং ইমরান খানের সঙ্গেই থাকব। যদি আমাকে জনসমক্ষে একা ছেড়ে দেওয়া হয়, তবুও আমি ইমরান খানের পতাকা নিয়ে রাস্তায় নামব।’

চারপাশের এক ঝলকেই বলা যায় যে তার বলা কথাগুলো সত্য। মিসেস দার তার চারপাশে জড়ো হওয়া জনতার ভিড়ের মধ্যে ইমরান খানের একটি ছবি উঁচু করে তুলে ধরেছেন।

তার মাথার ওপরে উড়ছে পিটিআই-এর পতাকা, যদিও এখনও মিসেস দার পিটিআই প্রার্থী নন।

নির্বাচন কমিশন পিটিআই-এর ক্রিকেট ব্যাট প্রতীক তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে তিনি অন্যান্য প্রার্থীর মতো মূলত একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন।

এটি আদতে বেশ ছোট সিদ্ধান্ত বলে মনে হতে পারে, কিন্তু যে দেশে নিরক্ষরতার হার ৫৮%, যেসব প্রার্থীদের ব্যালট পেপারে নিজেদের স্বীকৃত প্রতীক আছে তাদের জন্য বিষয়টি বেশ জটিল।

এখন প্রতিটি প্রার্থীর নিজস্ব বিকল্প প্রতীক রয়েছে; মিসেস দারের প্রতীক হল বেবি কট।

অন্যান্য প্রার্থীরা কেতলি থেকে স্যাক্সোফোন (বাদ্যযন্ত্র) পর্যন্ত বিভিন্ন আইটেম প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ পেয়েছেন৷

এটি হচ্ছে অগণিত বাধাগুলোর মধ্যে একটি যা পিটিআই ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তাদের সামনে এসেছে। কিন্তু দলটি তাদের লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। যেমন মিসেস দারের মতো প্রার্থীরা রাস্তায় নেমেছেন।

প্রযুক্তির মাধ্যমেও তাদের এই লড়াই চলছে যা একজন নেতাকে জেলের কয়েদখানা থেকে সমাবেশের সামনে নিয়ে গিয়েছে। এই বিষয়গুলো এটাই প্রমাণ করে যে তারা এই লড়াইয়ে সবকিছু করতে ইচ্ছুক।

গত নির্বাচনের সময় মিসেস দারের ছেলে উসমান শিয়ালকোটের মধ্য দিয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি একজন সিনিয়র পিটিআই নেতা ছিলেন এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অধীনে যুব বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

কিন্তু অক্টোবরের শুরুতে, তার পরিবারের মতে তিন সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ থাকার পর, তিনি টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে বলেছেন যে ইমরান খান ‘৯ মে দাঙ্গার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন’।

এরপর দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। যার মধ্যে কিছু বিক্ষোভ বেশ সহিংস হয়ে ছিল। গত বছর ইমরান খানকে গ্রেফতার করার পর এমন সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।

লাহোরের সবচেয়ে সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তার বাসভবনসহ সামরিক ভবনে হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে খানের শত শত সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়। ইমরান খানকে মুক্তি দেওয়া হলেও তার দলের ওপর দমন পীড়ন অব্যাহত ছিল।

বিক্ষোভের পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ এবং কয়েক মাসে পিটিআই এর বেশ কয়েকজন রাজনীতিক দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন আবার অনেকে রাজনীতি থেকেই সম্পূর্ণভাবে সরে দাঁড়ান।

তাদের মধ্যে দলের অনেক সিনিয়র নেতারাও ছিলেন। কর্তৃপক্ষ যুক্তি দিয়েছে যে তাদের পদত্যাগের ঘটনা এটাই ইঙ্গিত করে, খানের পুরানো সমর্থকরা এমন সহিংসতার দায় নেওয়া দলের সাথে যুক্ত হতে চায় না।

পিটিআই বলেছে, তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেনি, বরং তাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।

তবে সত্য যাই হোক, মিসেস দার কোনটা নিয়েই খুশি ছিলেন না।

মিসেস দার বলেছেন, যখন উসমান দার তার বিবৃতি দিয়েছিলেন, আমি তাতে রাজি হইনি। আমি তাকে বলেছিলাম যে এর চেয়ে আমার ছেলে মারা গেলে ভালো হতো। তুমি মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছ।

মিসেস দার যেভাবে প্রকাশ্যে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন এমনটা করা পিটিআইয়ের সব প্রার্থীর পক্ষে সম্ভব নয়।

কয়েকজন প্রার্থী কারাগারে থাকার পরও প্রচারণা চালিয়ে গেছেন। যদিও তারা কোন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়নি। তবে তারা কারাগারের ভেতর থেকে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে।

অন্যরা পুলিশকে পুরোপুরি এড়িয়ে গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের প্রচারণা চালাচ্ছে।

আতিফ খান পাকিস্তানের উত্তরে খাইবার পাখতুনখোয়ায় প্রাদেশিক মন্ত্রী ছিলেন। এখন নির্বাচনি প্রচারণার অংশ হিসাবে, তিনি ভিডিও সম্প্রচারের মাধ্যমে তিন মিটার পর্দায় সবার সামনে হাজির হন।

তার দল এই ভিডিও স্ক্রিন সারা শহর ঘুরিয়ে, শহরের চত্বরে এনে প্রদর্শন করে। সেখানে জড়ো হওয়া পিটিআই সমর্থকদের উদ্দেশ্যে এই ভিডিও সম্প্রচার করা হয়।

তিনি বলেন, ভোটারদের কাছে তার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার এটাই একমাত্র উপায়। কারণ তিনি মে মাস থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন।

কর্তৃপক্ষ বলছে, তিনি একজন ওয়ান্টেড ব্যক্তি, অর্থাৎ তাকে ধরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।

আতিফ খান বিশ্বাস করেন যে তিনি সুষ্ঠু বিচার পাবেন না।

আতিফ খান বিবিসিকে বলেন, এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অভিজ্ঞতা, ভিড়ের মধ্যে নয়, মঞ্চে নয়, মানুষের মধ্যে নয়, তবে আমরা দল পরিচালনার চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, পিটিআই-এর সবচেয়ে বড় সমর্থন হল তরুণ ভোটাররা। তারা ডিজিটাল মিডিয়া, মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে, তাই আমরা ভেবেছিলাম এর মাধ্যমে তাদের সাথে আরও বেশি জড়িত হওয়া উচিত। এটাই একমাত্র কাজ, আমরা ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে পারি।

এবারের নির্বাচনে পিটিআইয়ের প্রচারণার জন্য প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পার্টির অফিসিয়াল এক্স বা সাবেক টুইটার অ্যাকাউন্ট, ইনস্টাগ্রাম এবং টিকটক পেইজগুলোর প্রতিটিতে কয়েক মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে।

যা কিনা অন্য দুটি প্রধান দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি-পিপিপি এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ, নওয়াজ-পিএমএল’এন এর চেয়েও বেশি। এই তিনটি দলের মধ্যে ইমরান খান একমাত্র নেতা যার সোশ্যাল মিডিয়ার ওই তিনটি প্ল্যাটফর্মে একটি করে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যার অর্থ তার বার্তা সরাসরি মানুষের কাছে যাচ্ছে।

কোন প্রার্থী পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থী কিনা তা জানতে ভোটারদের সাহায্য করার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে।

ক্রিকেট ব্যাটের প্রতীক ছাড়াই, পিটিআই একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছে যেখানে ভোটাররা তাদের নির্বাচনি এলাকায় গেলে সংশ্লিষ্ট আসনের পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীর প্রতীক খুঁজে পাবে।

সমাবেশ আয়োজনের সময় আরেকটি সমস্যা দেখা দেয়। পাকিস্তানে রাজনীতি ব্যক্তিত্বের জৌলুসের সঙ্গে জুড়ে আছে।

ইমরান খান প্রিয় ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ- এমন একজন নেতা, যার উপস্থিতি হাজার হাজার মানুষকে সমাবেশে আকর্ষণ করতে সক্ষম।

কিন্তু গত আগস্ট থেকে তিনি কারাগারে আছেন এবং এই সপ্তাহে দুটি তিনটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত ও সাজা পাওয়ার পর সামনের ১৪ বছর ধরে তিনি কারাগারে থাকতে পারেন বলে মনে হচ্ছে।

পিটিআই আরও বলেছে যে তারা সমাবেশ আয়োজনে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।

জানুয়ারির শেষদিকে, করাচীতে শত শত পিটিআই সমর্থকরা সমাবেশ করে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে পিটিআইয়ের এভাবে জনসমাবেশ করার কোনো সঠিক অনুমোদন ছিল না।

পিটিআই বলেছে যে তাদের কিভাবে নির্বাচনি প্রচারণা থেকে বিরত রাখা হয়েছে, এটি তার সর্বশেষ উদাহরণ।

বিবিসি যেসব প্রার্থীর প্রচারণা দলের সাথে কথা বলেছে, তারা জানিয়েছে যে তাদের সমর্থকদের ভয় দেখানো হচ্ছে।

পিটিআই অভিযোগ করেছে যে তাদের নির্বাচনি প্রচারণায় বাধা দিতে তাদের বিরুদ্ধে হয়রানি, অপহরণ, কারাগারে পাঠানো এবং সহিংসতা চালানো হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক তথ্যমন্ত্রী মুর্তজা সোলাঙ্গি।

তিনি বিবিসিকে বলেছেন, হ্যাঁ, মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে ৯ মে’র ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে এবং আরও কয়েকজনের গ্রেফতার করা হয়েছে অন্যান্য ফৌজদারি মামলার সাথে জড়িত থাকার দায়ে।

তিনি বলেন, তাদের (পিটিআই) অভিযোগ ভিত্তিহীন হলেও তারা তাদের ভিন্নমত এবং অভিযোগ প্রকাশ করতে স্বাধীন। গণমাধ্যম সেগুলো প্রচার করে। একই সাথে তাদের কাছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতসহ অন্যান্য আইনি বিকল্প রয়েছে।

পিটিআইয়ের সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের প্রধান জিবরান ইলিয়াস শিকাগোতে তার দফতর থেকে ফোনে বিবিসিকে বলেছেন, এটি সস্তা, নিরাপদ এবং দ্রুত কাজ করে।

এর প্রভাব জনসমাবেশ থেকে কিছুটা কম হতে পারে, তবে আমরা আমাদের বার্তাটি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

ইলিয়াস বলেন, ইমরানকে ছাড়া আমরা এর আগে কখনো কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ করিনি। তাকে ছাড়া কি কোন কিছু কাজ করবে? তারা এ নিয়ে এতটা নিশ্চিত ছিল না।

সমস্যা হলো, তিনি বলেছেন, মানুষ ইমরান খানের বার্তার জন্য অপেক্ষা করতো।

তাহলে কিভাবে বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়?

ডিসেম্বরে তারা একটি অনলাইন সমাবেশের জন্য একটি বক্তৃতা তৈরি করতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল।

কিন্তু এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। ইন্টারনেট মনিটরিং গ্রুপ নেটব্লক্সের মতে, পাকিস্তানজুড়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্ম জুড়ে বিপর্যয় দেখা দেয়।

মূলত পিটিআইয়ের সমাবেশের সময়েই এ ধরনের বিঘ্ন ঘটতে দেখা গিয়েছে।

ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টার থিংক ট্যাঙ্কের দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, পাকিস্তানের জনসংখ্যার মাত্র ৩০ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সক্রিয় ব্যবহারকারী৷ সুতরাং এতে এটাই স্পষ্ট হয় যে পিটিআই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যতো অনলাইন প্রচারণা চালাক না কেন পারে এর পরিসীমা সীমাবদ্ধ।

এমনটা অবশ্য আগেও দেখা গিয়েছে- বিশেষ করে, গত নির্বাচনের সময় যখন নওয়াজ শরীফ কারাগারে ছিলেন।

মি. কুগেলম্যান বলেছেন, যদি এসব একই রকম শোনায়, তবে এর কারণ হলো- এখন কেবল খেলোয়াড়রা বদলে গেছে।

বেশিরভাগ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতো তিনি ভাগ্যের এই পরিবর্তনের পেছনে পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর হাত দেখেন– সেই একই সামরিক বাহিনী যাদেরকে অনেকেই ইমরান খানের ক্ষমতায় আসার পেছনে প্রাথমিক টিকিট হিসাবে দেখেন।

‘পিটিআই ২০১৮ সালে নির্বাচনি সমর্থন পেয়েছিল। এজন্য সামরিক বাহিনী সরাসরি কলকাঠি না নাড়ালেও তারা পরিষ্কারভাবে সে সময় নির্বাচনী ব্যবস্থার সুবিধা পেয়েছিল।’

‘এখানে ব্যাপক মাত্রায় দমন-পীড়ন ও কারসাজি করা হয়েছিল। পিএমএল-এন দলের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছিল। সে সময় নওয়াজ শরিফের ১০ বছরের জেলের সাজা হয়।’

মি. কুগেলম্যান মনে করেন ওই ঘটনাগুলো সাম্প্রতিক সময়ের থেকে আলাদা।

‘আমার মতে, ঘটনা প্রবাহ একই, তবে এবারের তীব্রতা বেশি। সাম্প্রতিক নির্বাচনের তুলনায় এবারে গ্রেপ্তার ও জেলে যাওয়া নেতা ও সমর্থকদের সংখ্যা বেশি।’

‘এবার পরিবারের সদস্যরাও এতে জড়িয়ে পড়েছেন। এটি নজিরবিহীন নয়, তবে সাম্প্রতিক নির্বাচনে আমরা যা দেখেছি এবারে বিষয়টি একদমই আলাদা।’

ইমরান খানের ওপর দিয়ে যতো ঘাত প্রতিঘাত গিয়েছে তার প্রতিটি পিটিআই তাদের নির্বাচনি প্রচারণার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু তা কি কার্যকর হবে?

পাকিস্তানের টিভি চ্যানেলগুলো পিএমএল-এন-এর পক্ষে ইমরান খানের প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফ বা পিপিপি-র পক্ষে বিলাওয়াল ভুট্টোর নির্বাচনি সমাবেশের খবরাখবরে ভরপুর।

নির্বাচনের আগের সপ্তাহে পিটিআই যে কভারেজ পেয়েছে তা হল তাদের প্রতিষ্ঠাতার কারাদণ্ডের বিষয়ে।

মি. কুগেলম্যানের মতে, অনেক ভোটার মনে করতে পারে যে ভোট দেওয়ার কোনো অর্থ নেই কারণ তারা মনে করে পিটিআই এর জয়ের কোনও উপায় নেই।

‘পিটিআই নেতৃত্বের কাছে প্রশ্ন হল খানের সাথে যা কিছু ঘটছে তা সত্ত্বেও কীভাবে তারা এতো বড় একটি সমর্থন গোষ্ঠীকে বের করে আনতে পারছে এবং ভোট দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে যাচ্ছে?’

মি. কুগেলম্যান বলছেন, পিটিআই-এ এমন কিছু লোক আছে যারা মনে করে, তারা যদি নির্বাচন পর্যন্ত যেতে পারে এবং ভোটারদের উপস্থিতি যদি যথেষ্ট বেশি হয় তবে তারা দলের পক্ষে ভোট টেনে অলৌকিক বিজয় অর্জন করতে পারবে।

বার্তা বাজার/জে আই