অবহেলিত ঢাকার সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নবাসীর অনুন্নয়নের বাতির নিচের অন্ধকার দূর করে দেয়ার ঘোষণা দিলেন ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বনগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আয়োজনে সাভার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

ঢাকা-১৯ এর এমপি বলেন, আপনাদের এই ইউনিয়নে আমি নির্বাচনের আগে একদিন এসেছিলাম। এসে আমি আশ্চর্য হয়েছি যে ঢাকার অতি সন্নিকটে আমাদের বনগাঁও ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশী উন্নয়ন হবার কথা, অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকার কথা। এই ইউনিয়নে অনেক বাড়িঘর, উন্নত মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকার কথা। আসলে কিছুই নেই। নির্বাচনের আগে আমার জীবনে প্রথম এই ইউনিয়নে আমি এসেছিলাম। তখন আমি আশ্চর্য হয়ে বলেছিলাম, আমি যদি নির্বাচিত হতে পারি তাহলে আপনাদের বাতির নিচে যে অন্ধকার সেই অন্ধকার দূর করে দিবো ইনশাআল্লাহ। আপনাদের পরনো একটি চিকন ব্রিজ আছে, সেটার ব্যাপারে আমি এলজিইডিতে গিয়ে কথা বলেছি। এই ব্রিজটি বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমোদন নিয়ে উঁচু করে এবং প্রায় পাঁচ-ছয়শো’ মিটার লম্বা করে ব্রিজটি করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাতে ব্রিজটি সম্পন্ন হয় তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, বলিয়ারপুর ব্রিজটি আসলে নদীর উপরে হয় নাই, এটা হয়েছে সম্ভবত মানুষের জমির উপরে। এটি যেহেতু নদী না, নদীর উপরে ব্রিজ করা খুব দুস্কর। এখানে আমরা কালভার্ট করে দুইপাশ থেকে মাটি ভরাট করে উন্নতমানের রাস্তা করে দেবো। পানি যাতে চলাচল করতে পারে সেই ব্যবস্থা রেখে উন্নতমানের কালভার্ট করে দ্রুততম সময়ে রাস্তা নির্মাণ করে আপনাদের চলাচলের ব্যবস্থা করে দেবো ইনশাআল্লাহ। পাশাপাশি, আপনাদের এলাকায় যাতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে সেব্যাপারেও যথাযথ ব্যবস্থাও করে দেয়া হবে।

হাউজিং কোম্পানির জবরদখলের বিষয়ে বনগাঁওবাসীকে তিনি আশ্বাস দেন, এই বলিয়ারপুরে হাউজিং কোম্পানি নাকি জবরদখল করে আপনাদের জমিতে বালিভরাট করে পরবর্তীতে আপনাদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য করে। এরকম কথা আমি শুনেছি। এরকম যদি কেউ করে আপনাদের সাথে, আপনারা সরাসরি আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। আমি কিন্তু জমির কাগজপত্র খুব ভালো বুঝি। আপনারা কোনো দালাল ছাড়া সরাসরি আমার কাছে কাগজপত্র নিয়ে আসবেন, আমি আপনাদের সাহায্য করবো।

এসময় মাদক ব্যবসায়ীদের সামাজিক ভাবে প্রতিরোধ করতে আহবান জানান সাভার-আশুলিয়ার নবনির্বাচিত এমপি। তিনি বলেন, মাদক একটি সামাজিক ব্যধি। এই ব্যবসা করে গুটিকয়েক মানুষ, তাদেরকে শেল্টার দেয় অনেক মানুষ। প্রশাসনেরও অনেকে শেল্টার দেয় এটি আমরা কমবেশী সবাই জানি। আপনারা যদি সামাজিক ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন, তাহলে মাদক ব্যবসা আর এইদেশে একসময় থাকবে না। আমি অনুরোধ করছি, আপনারা মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন এবং এদেরকে গণপিটুনি দিবেন। দেখবেন মাদক ব্যবসায়ীরা এই এলাকায় থাকবে না।

আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, আর কিছুদিন পরেই আমাদের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন। গত নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, সেইসময় আমাদের নৌকা প্রতীকের পক্ষে- এনাম ভাইয়ের পক্ষে অনেকেই জোরালো বক্তব্য দিয়েছে- ‘নৌকা মার্কায় ভোট না দিলে তারা বেঈমানী করবে, আওয়ামী লীগেরটা খায়, আওয়ামী লীগেরটা পরে, আর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছে’ এরকম নানান কথা আমরা শুনেছি। আমি আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করার সুযোগ না দিলে আমি কোনোদিনই নির্বাচন করতাম না। আমার কাছে সংসদ সদস্যের চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ। এই পদ যদি ঠিক না থাকতো, আমি সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচন করতাম না। দলের মালিক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যেখানে বলে দিয়েছেন -‘আপনারা যদি কেউ নির্বাচন করতে চান তাহলে দলীয় ভাবে আপনাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না’। এছাড়াও তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ও বলে দিয়েছেন, ‘আপনারা যে প্রার্থীকে পছন্দ করবেন তার পক্ষে নির্বাচন করেন, আপনাদের বিরুদ্ধে ও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না।’ আমাদের পার্টির সাধারণ সম্পাদক জননেতা ওবায়দুল কাদের স্যারও একই কথা বলে দিয়েছিলেন।

তো যারা ওইসব বড় বড় কথা বলেছিলেন, তারা এনাম সাহেবের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে পরেরদিন পল্টি মেরে ঈগলের পক্ষে গেছে। আমি এই কথাটি এখানে এইজন্য বললাম, আপনারা যারা আজকে এই মঞ্চে বক্তব্য দিয়েছেন, দিচ্ছেন কিংবা উপস্থিত হয়েছেন, উপজেলা পরিষদের নির্বাচন শুরু হলে পল্টি মেরে যদি অন্য কোনো প্রার্থীর পক্ষে যান, তাহলে দয়া করে আগেই যাইয়েন। কারণ আগে সমর্থন দিয়ে পরে যাবেন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া একজন প্রার্থীকে যে কতটা বিপদে ফেলে সেটি আমি একজন প্রার্থী হিসেবে জানি। আপনি যদি ভোট না দেন স্ট্রেইট বলে দিবেন যে আপনি ভোট দিবেন না, তাহলে আপনাকে স্যালুট জানাবো। কিন্তু দয়া করে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিবেন না।

এসময় আসন্ন সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীবকে ভোট দিতে সকলের প্রতি আহবান জানান মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এমপি।

বনগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখে আসন্ন সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নিজেকে আরও একবার সুযোগ প্রদানের অনুরোধ করেন সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর, ঢাকা জেলা উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাজী ইমতিয়াজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সায়েম মোল্লা প্রমুখসহ বনগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বার্তা বাজার/জে আই