সূর্যি মামা জাগার আগেই জেগে উঠে নুন আনতে পান্তা ফুড়ানো অভাবী লোকজন। কাজের সন্ধানে তারা ছুটে আসেন দক্ষিনাঞ্চলের প্রবেশদ্বার খ্যাত মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট বন্দরে। চোখে-মুখে তাদের অসহায়তার ছাপ। এখানে এক শ্রেণীর মানুষ আসেন ‘বিক্রি’ হতে আরেক শ্রেণীর মানুষ আসেন কিনতে। স্থানীয় ভাষায় তাদের কামলা বলা হয়। চলতে থাকে দরদাম, পণ্যের দামের মতোই প্রতিদিন ওঠা নামা করে তাদের দাম।
প্রায় ৩০ বছর ধরে ভোরের আলো ফোঁটার আগে নারী পুরুষ জড়ো হন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের টেকেরহাটের ব্রিজের ঢালে। উদ্দেশ্য শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে চান এ সকল নারী পুরুষ। যাদের শ্রমিক প্রয়োজন তারা এই হাটে এসে পছন্দের শ্রমিক বেছে দরদাম করে নিয়ে যান নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এই হাটটি স্থানীয়দের কাছে মানুষ বিক্রির হাট আবার কারো কাছে শ্রম বিক্রির হাট হিসাবে পরিচিত। খোলা আকাশের নিচে শত শত নারী পুরুষের ভিড় হওয়ায় রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে দূর্ভোগে পড়ে এসব মানুষজন। আবার ঢাকা-বরিশাল রুটের ব্যস্ততম মহাসড়ক হওয়ায় ঝুঁকি থাকে সড়ক দুর্ঘটনার।
এই হাটে শ্রম বিক্রি করতে আসা ভাংগার সদরপুরের আলম শেখ ও মানিক শেখ জানান, মালিকদের সঙ্গে দামে না পড়ার কারণে কাজ পাচ্ছেন না তারা। কারণ মালিকেরা দিনে তিনবার খাবার দিয়ে প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে দাম দিতে চান। তাদের বাড়ি কাজ করতে হবে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এত কম দামে কাজ করে সংসার চালানো কষ্ট হয়। নিজস্ব কোনো আবাদি জমি না থাকায় তাদের প্রায় সারা বছরই দিন মজুরি খেটে খেতে হয়।
মাগুরা থেকে আসা মো. আলমগীর হোসেন (৩৬) বলেন, ‘আমি ২ বছর ধরে এই হাটে আসি। এখানে ১ মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারি। আর এই সময় যদি এলাকায় থাকি, সারা মাসে ৫ হাজার টাকা আয় করা কঠিন।’
হাটে শ্রম কিনতে আসা ভাঙ্গার মালিগ্রাম এলাকার সাইদুল মৃধা বলেন, ‘এই হাট থেকে আমি সব সময় শ্রমিক নিয়ে যাই। এই সময় স্থানীয় শ্রমিকদের প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দিতে। অথচ তারা, সকাল ৮টায় এসে দুপুর ৩টায় চলে যায়। আর এখান থেকে শ্রমিক নিলে একই টাকায় সারাদিন কাজ করে।’
শ্রম বিক্রি করা শ্রমিক জাকির হোসেন(২১) জানান, বর্তমানে কোন কাজ-কর্ম নেই প্রতিদিন এইখানে আসি কোন কোন সময় গেরস্থরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী কাজ করলেও ঠিকমতো মজুরী দিতে চায় না। এই সুরে কথা বলেন অপর শ্রমিক সাহাদুল।
শ্রম কিনতে আসা ব্যবসায়ী আ: মতিন খন্দকার জানান, এখান থেকে প্রায়ই শ্রমিক নিয়ে যাই বিভিন্ন ক্ষেত-খামারে কাজের জন্য। তবে বেশ কয়েকদিন ঠান্ডা থাকায় শ্রমিক আগের তুলনায় কম। তারা মজুরি নিয়ে যে অভিযোগ করেছে সেটা সঠিক নয়।
রাজৈর পৌরসভার মেয়র নাজমা রশীদ বলেন, জেলা প্রশাসক জমির ব্যবস্থা করে দিলে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে শ্রম হাটের জন্য একটি সেড করে দেয়া হবে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. মারুফুর রশিদ খান বলেন, শ্রম হাটের জন্য একটি নিরাপদ স্থানে দ্রুত একটি সেড তৈরি করে দেয়া হবে। যাতে করে দ্রুত শ্রম হাটে আসা শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের কস্ট লাঘব হবে।
বার্তাবাজার/এম আই