আওয়ামী লীগের সাথে স্বতন্ত্র লীগ, জাপা লীগ ও শরিক লীগের আসন ভাগাভাগিকে নির্বাচন বলা দেশের জনগণের সাথে প্রতারণা। বাকশাল থেকে ডামি নির্বাচন সবই করা হয় এক ব্যক্তির হাতে সকল ক্ষমতা থাকার জোরে।

আজ ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১:৩০টায় পুরানো পল্টনের মেহেরবা প্লাজাস্থ দলের প্রধান কার্যালয়ে ‘৭ জানুয়ারি নির্বাচন ও সংসদ সাংবিধানিকভাবে অবৈধ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রীতম দাশের সঞ্চালনায় এবং প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম এর সভাপতিত্বে সভায় লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন দলের রাজনৈতিক সমন্বয়ক ফরিদুল হক।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মিডিয়া ও প্রচার সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন।

সভাপতির বক্তব্যে হাসনাত কাইয়ূম বলেন, আগের সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবার আগে, নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ করা সাংবিধানিকভাবে সম্পুর্ণ অবৈধ। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা আছে, ‘বর্তমান সংসদের মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, নতুন নির্বাচিতরা সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।’ অথচ দেখা গেলো আগের সংসদ সদস্যগণ মেয়াদ শেষ করার আগেই নতুন নির্বাচিতরা শপথ নিলেন।

সভায় জোনায়েদ সাকি বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ছিলো শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে হাওয়া একটা প্রহসনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে একটি আসনেও এমন কোনো প্রার্থী অংশ নেন নাই যিনি প্রধানমন্ত্রীর অনুরাগ প্রত্যাশী নন।

সভায় শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, বাংলাদেশে এখন ৬৪৮ জন সংসদ সদস্য আছেন, যেটা বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধান কোনভাবেই অনুমোদন করে না। সাংবিধানিক বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে আইনমন্ত্রী বলেছেন যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিতরা এমপি হিসেবে শপথ নিলেও সংসদে তারা কার্যভার গ্রহণ করার পর থেকে এমপি হিসেবে বিবেচিত হবেন। সেই ক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকে যায় যে তিনি আইনমন্ত্রী হিসাব যে বক্তব্য দিচ্ছেন সেটা কি আগের সরকারের আইনমন্ত্রী হিসেবে নাকি বর্তমান সরকারের আইনমন্ত্রী হিসেবে?

হাবিবুর রহমান রিজু বলেন, এই নির্বাচনে যেভাবে একজন ব্যক্তির নির্দেশে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে একই দলের একাধিক প্রার্থী দলের মনোনয়ন নিয়ে কিংবা দলের প্রধানের সরাসরি নির্দেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো সেটা নির্বাচনী আইন (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) অনুয়ায়ী অবৈধ। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী একই নির্বাচনে একই সংসদীয় আসনে একটা দলের একাধিক প্রার্থী অংশ নিতে পারেন না।

ফরিদুল হক তার বক্তব্যে সকলকে মনে করিয়ে দেন যে পঁচিশে জানুয়ারি বাকশাল প্রতিষ্ঠার দিবস। তিনি বলেন, যে বাকশাল আমলের মত এখনও বাংলাদেশের আইন-কানুন নিজেদের ইচ্ছামতো গায়ের জোরে ব্যবহার করত পারার যে সুযোগ এবং ক্ষমতা সেটা ক্ষমতাসীনরা পায় এই রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ক্ষমতাকাঠামোর মধ্যে থেকেই। এখানে দুই-তৃতীয়াংশ মেজোরিটি নিয়ে ক্ষমতায় থাকলে যেকোনো প্রধানমন্ত্রী তার নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ, সকল প্রতিষ্ঠানকে ইচ্ছেমতো ব্যবহারের সুযোগ পান। সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে এমনকি বাকশাল প্রতিষ্ঠা কিংবা ডামি নির্বাচন করেও ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের সামনে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই যে রাষ্ট্র সংস্কারের লড়াইয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে সেটাই আরও একবার পরিস্কার হলো।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এর জাতীয় নির্বাহী কমিটির অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভুইয়া, সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন, দপ্তর সমন্বয়ক নাঈমুল ইসলাম নয়ন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আদিল আমজাদ হোসেন, হাবিবুর রহমান রাজা, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন-এর সমন্বয়ক আহমেদ ইসহাক প্রমুখ।

বার্তা বাজার/জে আই