আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়ে এটি যেন একটি ‘মডেল’ নির্বাচন হয়, তা কামনা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

এর বিপরীতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে-অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর। উল্লেখ্য, গত সোমবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্ষমতায় যাওয়া বা পরিবর্তন আনার একমাত্র উপায় নির্বাচন।

তবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে সংঘাত, সহিংসতা; এমনকি সাংবিধানিক সংকট তৈরি হলে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতার পালাবদল বিচিত্র কিছু নয়। এরকমটি ঘটলে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে, যা কারও কাম্য নয়। বস্তুত রাজনৈতিকভাবে অসহিষ্ণু এ দেশটিতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কেবল সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না; আমদানি-রফতানি কার্যক্রমসহ দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ সরকারের রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা মোটেই কাম্য নয়।

সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগের মধ্য দিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে ১৩তম নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে, যেখানে প্রথমবারের মতো প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার পদে একইসঙ্গে তিনজন সিনিয়র সচিব পর্যায়ের সাবেক কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি দুজনের মধ্যে একজন জেলা ও দায়রা জজ এবং অপরজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। ইতঃপূর্বে কেএম নূরুল হুদা, কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ ও ড. এটিএম শামসুল হুদা কমিশনের সিইসি ও কমিশনার পদে সর্বোচ্চ একজন সাবেক সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় চারটি নির্বাচন ছাড়া বাদবাকি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। হতাশাজনক হলো, একটি গণতান্ত্রিক দেশে যতটা শক্তিশালী নির্বাচনি ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন, তার ধারেকাছেও আমরা যেতে পারিনি। আশার কথা, নতুন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বিরাজমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে বলেছেন, সব দলকে নির্বাচনমুখী করাই হবে তার কমিশনের মূল লক্ষ্য। এক্ষেত্রে তারা কতটা সফল হন, এটাই এখন দেখার বিষয়।

মূলত দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার সম্পর্ক শত্রুতায় পর্যবসিত হওয়ায় গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ও দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি হুমকির মুখে পড়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অব্যাহত সংঘাত ও নৈরাজ্যের যে প্রেক্ষাপট দেশে তৈরি হয়েছে, তা থেকে বের হওয়া জরুরি এবং এজন্য অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তথা প্রশ্নহীন নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নতুন নির্বাচন কমিশনের হাতে খুব বেশি সময় নেই। এর মধ্যেই সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। দশকের পর দশক ধরে দেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা, সংঘাত ও প্রাণহানির পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকুক, আমরা তা চাই না। অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নবগঠিত নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে একটি ‘মডেল নির্বাচনে’ পরিণত করবে, এটাই প্রত্যাশা।