আতঙ্কের নগরী নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লার ইসদাইর এলাকা। এখানে পান থেকে চুন খসলেই ঘটে স্বসস্ত্র হামলা। বিগত দুই বছরে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্ত বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই এলাকায় বেশ কয়েকটি সহিংসতার ঘটনায় প্রাণ হারান অন্তত ৪জন। ঘটনাগুলোর নেপথ্যে থাকা গুটি কয়েক কথিত বড় ভাইয়ের নেতৃত্বে গড়ে উঠা একাধিক কিশোরগ্যাং কাজ করছে।

আর ওই সব কিশোরগ্যাং দিয়ে নানান অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন ইসদাইর এলাকার শিমুল-জামান গ্রুপ। এই গ্রুপের অপর দুই হোতা শাহীন ও জাহাঙ্গীর ওরফে নাডা জাহাঙ্গীর। সম্প্রতি একটি ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ফিল্মি স্টাইলে কিশোরগ্যাংয়ের নেতৃত্বে থেকে ইসদাইর তথা ফতুল্লার আতঙ্ক শিমুল, জামান ও সোহাগ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অন্তত ৩০ জনের একটি বাহীনি নিয়ে সস্তাপুর এলাকায় হামলা চালায়।

এ সময় ওই স্থানে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকায় আশেপাশের দোকনগুলোর লাইট ভেঙ্গে ফেলেন তারা। যেন তাদের না দেখা যায়। পরে বেশ কয়েকটি দোকানে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়। তাদের ওই তান্ডবে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে দিকবিদিক ছুটে পালায়। তাদের তান্ডবের কারনে ওই পথের পথচারীরাও ভিন্ন পথে যেতে বাধ্য হন। অভিযোগ আছে তারা শুধু চাঁদাবাজি আর ভারাটে সন্ত্রাসের কাজই করেন না।

নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে আলোচিত মাদকের হাট চাঁনমাড়ি, চাষাড়া রেল লাইন ইসদাইর রেল লাইন এলাকার মদকের স্পটের মূল হোতা। রাতারাতি অর্থবিত্ত কামানোর জন্য এই শিমুল-জামান গ্রুপ স্থানীয় যুব সমাজকে মাদকে জড়িয়ে নিজেদের কিশোরগ্যাং গ্রুপের সদস্য বাড়াচ্ছে। তাদের নেতৃত্¦ে একাধিক স্পটে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে তার গ্যাংয়ের সদস্যরা। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদেও ওই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাকান্ডের বিষয়ে অভিযুক্ত থাকার খবর মিলেছে।

মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবজি, ইট-বালুর ব্যাবসার নামে এলাকার নির্মাণাধীন ভবন মালিকদের জিম্মি করে টাকা আদায় সহ নানান অপকর্ম করেই চলেছে দিনের পর দিন। শিমুল-জামানের নেতৃত্বে গড়ে উঠা কিশোরগ্যাংয়ের একাধিক সদস্য হত্যা মামলার আসামি। তবুও তারা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোসহ ভয়ের রাজত্ব কায়েম করছে হরহামেশা। এযেন দেখার কেউ নেই। সম্প্রতি গত ৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার ইসদাইর লাগোয়া সস্তাপুর এলাকায় স্থানীয় ক্যাবল অপরেটর মালিক মঞ্জুরুল হক তালুকদার থেকে চাঁদা দাবি করতে গেলে বাকবিতন্ডা ঘটে চাঁদাবাজ ও কিশোরগ্যাং হোতা শিমুল, জামান ও তাদের আরেক ভুমিদস্যু সহযোগী জাহাঙ্গীর ওরফে নাডা জাহাঙ্গীরের সাথে।

এক পর্যায়ে তারা হত্যা ও ঘুমের হুমকি দিয়ে চলে যায়। ওই ঘটনায় ১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় ফতুল্লা থানায় বাদি হয়ে তামীম ক্যাবল অপারেটরের কর্মচারি মো. শামীম বাদি হয়ে হত্যা ও লাশ ঘুমের হুমকি, দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা {মামলা নং-১২০(৩)/১}দায়ের করেছেন। ফতুল্লার চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও কিশোরগ্যাংয়ের হোতা কথিত বড় ভাই শিমুল-জামান সম্পর্কে তাদের নিজ এলাকায় খোঁজ নিতে গেলে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় বেশ কয়েকজন স্থানীয় মুরুব্বিদের সাথে।

তবে তাদের মধ্যে অনেকেই নিজের ক্ষতি হবে ভেবে আতঙ্কে তাদের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। জনা পাঁচেক সাহস করে কথা বললেও নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন। স্থানীয় মুরুব্বিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এলাকায় জামান ও শিমুল এবং তাদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কিশোরগ্যাংয়ের অত্যাচারে অতিষ্ট স্থানীয় বাসিন্দারা। এলাকায় নতুন কোন বসতি করতে হলে তাদের কথামত সব কিছুই করতে হয়। কথার অবাধ্য হলেই চলে নির্যাতন-নিপিরণ।

দিতে হয় মোটা অঙ্কের চাঁদা। থানা পুলিশের সহায়তা চাইতে গেলে তাদের বলয়ে থাকা কিশোরগ্যাং দিয়ে করানো হয় হামলা-লুটপাট। খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম আহমেদের নেতৃত্বে তারা রাজনীতিতে স্বক্রিয় হয়। পরে শিমুলকে নিজ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এর পরই যখন তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং প্রকাশ্যে মাদকের ব্যবসা শুরু করে এবং নারায়ণগঞ্জের আলোচিত মাদকের হাট চানমাড়ি ধখলে নিত হত্যাকান্ডের মত ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে।

এরপর মাসুম বিষয়টি জানতে পারলে তাদের দুরে সড়িয়ে দেয়। বর্তমানে ফতুল্লার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাস শিমুল-জামান গ্রুপ নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি তুচ্ছ ঘটনায় ফতুল্লা থানা সেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহাবুবুল হক তালুকদার টগরের উপরও অতর্কিত স্বসস্ত্র হামলা চালায়। এই বিষয়ে ভুক্তভোগীর সাথে কথা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, একটি বিষয়ে ঝামেলা হলে আমাকে মহানগর আওয়ামী লীগের এক বড় ভাই টেলিফোন করে বিষয়টি দেখার জন্য বলেন।

আমি তার কথা মত সেখানে যাই। পরে তাদের জাহাঙ্গীরকে আমি বলি ওই ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান করা হবে। এরই মধ্যে তার আগে থেকে দেওয়া খবরে শিমুল, জামান ও শাহিনের নেতৃত্বে ৩০-৫০ জন স্বসস্ত্র সন্তাসীরা আমার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। স্থানীয় ক্যবল অপারেটরের মামলায় ভাগড়া থাকায় অভিযুক্ত শিমুল ও জামানের বাড়িতে যেয়েও তাদের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

বার্তাবাজার/এম আই