• সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত
• কেন্দ্রের সঙ্গেও যোগাযোগ বৃদ্ধি করছেন তারা
• দলীয় কর্মসূচিতেও অংশ নিচ্ছেন বঞ্চিতরা
• প্রতিদ্বন্দ্বীর দুর্বলতাকে কাজে লাগাচ্ছেন তারা
• একাধিক প্রার্থী থাকায় বাড়ছে দলীয় কোন্দল

আগামী ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনরা সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। দলীয় প্রার্থীর সম্পর্কে খোঁজখবরও নিচ্ছেন দলটির হাইকমান্ড।

তবে, দলের হাইকমান্ডের নজর কাড়তে এখন থেকেই মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন গতবারের মনোনয়নবঞ্চিতরা। বিভিন্ন দিবস, রোজায় ইফতার সামগ্রী বিতরণ থেকে শুরু করে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। সামর্থ্য অনুযায়ী দুস্থ ও অসহায়দের সহযোগিতা করছেন। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট চার মনোনয়নবঞ্চিত নেতাও এখন নিজ এলাকায় বেশ সক্রিয়। প্রতিনিয়ত তারা মাঠেই অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্র মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা আগেভাগেই নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন। দলের বা নিজস্ব বলয়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন। গ্রহণ করছেন আগামী নির্বাচনের পরিকল্পনা। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক এবং বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তাদের বঞ্চিত করায় দেশজুড়ে আলোচনা ও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল দলটিকে। তারা যে মনোনয়নবঞ্চিত হবেন তখন কেউ ভাবতেও পারেননি। শুধু ওই চার নেতা নয়, অনেকেই মনোনয়ন পাননি। যারা গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি তারাই এখন নিজ নিজ এলাকায় প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন। নিজেকে ভোটারদের মাঝে নতুন করে উপস্থাপন করছেন বলে জানা গেছে।

‘আগামী নির্বাচনে নিজ যোগ্যতায় জিতে আসতে হবে’— জানিয়ে শেখ হাসিনা বৈঠকে আরও বলেন, ‘আপনাদের সবার আমলনামা আমার হাতে আছে। অন্যান্য নির্বাচনে আমরা কেন্দ্র থেকে বিভিন্নভাবে সাপোর্ট দিয়ে তুলে এনেছি। আপনারা যেমন সাপোর্ট চেয়েছেন, দিয়েছি। কিন্তু এবার কোনো রকম সাপোর্ট দেওয়া হবে না। নিজের যোগ্যতায় নিজেরই জিতে আসতে হবে…

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের কাজটা জনগণের সঙ্গে। জনগণের সেবা, জনগণের কাছাকাছি থাকতেই আমরা রাজনীতি করি। রাজনীতি হলো জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ। জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া। আগামী নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। দলের নেতাকর্মীরা নিয়মিত জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরাও মানুষের দুঃখ ও কষ্টে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী দ্বাদশ নির্বাচন করার জন্য আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভোটারদের কাছে যাচ্ছি, প্রতিনিয়ত ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি।’

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজ নির্বাচনী আসনে যাতায়াত বাড়িয়েছেন। নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে শোডাউন দিচ্ছেন। নির্বাচনকে টার্গেট করে বিভিন্ন কর্মসূচিও হাতে নিচ্ছেন। ফলে বর্তমান সংসদ সদস্যরাও বেশ চাপের মধ্যে আছেন বলে অনেকে মনে করছেন।

নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ দলগতভাবে সর্বাত্মক প্রস্তুত। জনগণের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্পর্ক আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার এলাকার জনগণ আমাকে ভালোবাসে। তারা এটা বলেন যে আপনি নৌকার প্রতীক নিয়ে আসেন, ইনশাল্লাহ আপনার সঙ্গে কারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না

ফরিদপুরের এক নেতারা সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা এলাকায় গেলে বর্তমান সংসদ সদস্যদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। সাবেক এমপিরা কর্মীদের নিয়ে মাঠে থাকলে বর্তমান সংসদ সদস্যকেও মাঠে থাকতে হয়। এতে ভোটাররা বিভ্রান্ত হন।

তিনি আরও বলেন, কে মনোনয়ন পেলেন, কে পেলেন না— এটা ঠিক করবে দলের মনোনয়ন বোর্ড। তার আগে নেতাদের সক্রিয়তা নির্বাচনের মাঠকে অস্থির করে তুলছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ দলগতভাবে সর্বাত্মক প্রস্তুত। জনগণের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্পর্ক আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার এলাকার জনগণ আমাকে ভালোবাসে। তারা এটা বলেন যে আপনি নৌকার প্রতীক নিয়ে আসেন, ইনশাল্লাহ আপনার সঙ্গে কারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না।’

এদিকে, আগামী নির্বাচনে কারও মুখ দেখে নয়, জরিপ কিংবা অতীতের আমলনামা দেখে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে— এমনটি জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির সপ্তম সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সংসদ সদস্য এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন বেশ কঠিন হবে। ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ নেই, সহজ ভাবার কোনো সুযোগ নেই। এ নির্বাচনে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হবে, নানা অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করা হবে। এসব বিষয়ে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে।’

রাজনীতি হলো জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ। জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া। আগামী নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। দলের নেতাকর্মীরা নিয়মিত জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরাও মানুষের দুঃখ ও কষ্টে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি

‘আগামী নির্বাচনে নিজ যোগ্যতায় জিতে আসতে হবে’— জানিয়ে শেখ হাসিনা বৈঠকে আরও বলেন, ‘আপনাদের সবার আমলনামা আমার হাতে আছে। অন্যান্য নির্বাচনে আমরা কেন্দ্র থেকে বিভিন্নভাবে সাপোর্ট দিয়ে তুলে এনেছি। আপনারা যেমন সাপোর্ট চেয়েছেন, দিয়েছি। কিন্তু এবার কোনো রকম সাপোর্ট দেওয়া হবে না। নিজের যোগ্যতায় নিজেরই জিতে আসতে হবে। আপনাদের আমলনামা দেখে মনোনয়ন দেওয়া হবে।’

‘জরিপের মাধ্যমে আমলনামা তৈরি করা হয়েছে। এখনই মাঠে যান, ভোটারদের কাছে ভোট চান।’ প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের এলাকামুখী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আরও বলেন, ‘উন্নয়ন কাজ চলছে, চলবে। কিন্তু মানুষের কাছে ভোট চাইতে হবে। আমাদের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের যেসব উন্নয়ন আছে, সেসব নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালাতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একাধিক সদস্য বলেন, গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সদস্য মনোনয়ন পাননি। এবার তাদের দেওয়া হতে পারে। গত বছর তাদের দল গোছাতে রাখা হয়েছিল। তারাও এখন মাঠে যাচ্ছেন। যোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজ নির্বাচনী আসনে যাতায়াত বাড়িয়েছেন। নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে শোডাউন দিচ্ছেন। নির্বাচনকে টার্গেট করে বিভিন্ন কর্মসূচিও হাতে নিচ্ছেন। ফলে বর্তমান সংসদ সদস্যরাও বেশ চাপের মধ্যে আছেন বলে অনেকে মনে করছেন

‘গত নির্বাচনে তাদের যে সমস্যাগুলো মনোনয়ন বোর্ড দেখেছিল তারা হয়তো সেগুলো কভার করতেই মাঠে যাচ্ছেন। শুধু মনোনয়নই নয়, তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ালে দলও লাভবান হবে।’

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা আরও বলেন, আমাদের প্রবীণ তিন সংসদ সদস্য মারা যাওয়ার পর একটি উপনির্বাচন হয়েছে। সে সময় ঢাকা-১৪-সহ তিন উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ৯৪ জন। কুমিল্লা- ৫ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী সর্বোচ্চ ৩৫ জন। ঢাকা- ১৪ থেকে ৩৩ জন এবং সিলেট- ৩ থেকে আওয়ামী লীগের টিকিট চেয়েছেন ২১ জন। সেখানে আওয়ামী লীগের একজন করে মনোনয়ন দিলেও প্রত্যাশী ছিলেন অনেক। তার মানে অনেকেই মনোনয়ন চাইবেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে মাঠে নামলে দলের প্রচার-প্রচারণা বেশি হয়। কিন্তু অনেক স্থানে সংঘাতের মতো ঘটনাও ঘটে। নির্বাচন আসলে দলীয় কোন্দলও দেখা দেয়। কারণ একটাই, সবাই এমপি হতে চায়।