সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি প্রতিরোধ, ভূমি দস্যু ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর আইনিব্যবস্থা গ্রহণ, স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন, তরুণদের প্রশিক্ষণ ও প্রবাসীদের নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণের বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ঢাকা-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. হাবিবুর রহমান তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
রোববার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।
ডা. হাবিুবর রহমান বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-২ আসনের বিভিন্ন এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে ফ্রি চিকিৎসা করার মাধ্যমে মানুষের সেবা করে আসছি। বর্তমানে আরও ব্যাপকভাবে মানুষের সেবা করার জন্য দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আমি ঢাকা-২ আসনের মাটির সন্তান। যদি সুষ্ঠু ভোট হয়, মানুষ তাদের ভোট দিতে পারে অবশ্যই আমি জয়ী হবো। এখনো পর্যন্ত আমি সুষ্ঠু ভোটের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনের প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থাবান।
নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি সুশাসন প্রতিষ্ঠায় স্থানীয়দের ক্ষমতায়নের কথা বলেছেন। তিনি ঢাকা-২ আসনের সব স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনকে দলমত নির্বিশেষে ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে পরামর্শক কমিটি গঠন করে ঢাকা-২ আসনের উন্নয়ন পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়নের কথা বলেন। এ ছাড়া সকল জরুরি সেবা ওয়ার্ড পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণের প্রচেষ্টা চালানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক প্রতিরোধ গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি সমাজের সর্বস্তরে প্রবেশ করে আমাদের নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতীক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আপনাদের সকলের সহযোগিতায় দুর্নীতিমুক্ত সেবা প্রদান নিশ্চিতের লক্ষ্যে আমি সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাব।
মাদক ও ভূমিদস্যু মুক্ত আধুনিক ঢাকা-২ গঠনের প্রত্যয় ইশতেহারে যুক্ত করে তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যুরা ঢাকা-২ আসনের জনগনের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। জনগণকে সাথে নিয়ে তীব্র সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে ভূমিদস্যু ও মাদকমুক্ত ঢাকা-২ আসন গঠন করতে সচেষ্ট থাকব।
পরিকল্পিত নগরায়ন, পরিবেশ ও জ্বালানি সংকট নিরসনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, খাল ও শাখা নদীগুলো সংস্কার করে পূর্বরূপে ফেরত নিয়ে আশপাশে পার্ক ও অবসর বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। তীব্র জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকারি উদ্যোগকে ফলপ্রসূ করে ঢাকা-২ আসনের সব এলাকায় গ্যাস সংযোগ ও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের ব্যবস্থা করা হবে ।
তিনি স্বাস্থ্যসেবার গুণগতমান উন্নয়নের লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকসহ ওয়ার্ড ইউনিয়নভিত্তিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়নের ওপর কাজ করা প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি ঢাকা-২ বাসীদের জন্য রিমোট ও ভার্চুয়াল চিকিৎসাসেবার আওতায় আনা, মোবাইল মেডিকেল ইউনিট স্থাপন, নারী, শিশু ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষ সেল গঠনের কথা ইশতিহারে ঘোষণা করেন।
তারুণ্যের আয়নায় স্মার্ট ঢাকা-২ গঠেনের জন্য তরুণদের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগীভাবে গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি ইশতেহারে সংযুক্ত করেন।
ঢাকা-২ আসনের রাস্তাঘাট প্রশস্তকরণ, নতুন রাস্তা নির্মাণ, বিভিন্ন নদীগুলোর ড্রেজিং, সংস্কার, ভাঙনকবলিত এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ, কামরাঙ্গীরচর-খোলামুড়া সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের কথা ইশতেহারে বলেন। ইশতেহারে বয়স্কদের জন্য সিনিয়র সিটিজেন সার্ভিস চালু, নারীদের জন্য এলাকার সড়কে নিরাপত্তা, পরিবহন সহজলভ্যতাসহ নারীবান্ধব অঞ্চল বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত করেন।
বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে নজরদারি বৃদ্ধিতে এলাকাভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ, ঢাকা-২ আসনে উৎপাদিত ফসল বিদেশে রপ্তানি করার বিষয়ে প্রবাসে থাকা ঢাকা-২ এলাকাবাসীদের সম্পৃক্ত করে কৃষকদের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন।
ডা. হাবিবুর রহমান কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দীর্ঘদিন কেরানীগঞ্জসহ ঢাকা-২ আসনে সেচ্ছাসেবকদের সংগঠিত করে বিভিন্ন সেচ্ছাসেবামূলক কাজে নিজেকে জড়িত রেখেছেন। বিশেষ করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে যখন সবাই ঘর বন্দি ছিলেন সেই সময়ে তিনি ডক্টর এসোসিয়েশন অব কেরানীগঞ্জের সহায়তায় মোবাইল হাসপাতাল পরিচালনার মাধ্যমে করোনাক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে ব্যাপক প্রসংশিত হয়েছেন।
বার্তাবাজার/এম আই