জাতীয় সংসদের ১১৪, পটুয়াখালী-৪ আসনের বর্তমান এমপিকে ‘রাতের ভোটের এমপি’ বলে বেফাঁস মন্তব্যের কারণে সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ মাহবুবুর রহমান তালুকদার কে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর মুঠোফোনে জানান, “বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। এরপরজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে শোকজ করা হয়েছে। তিনি শোকজের জবাবও দিয়েছেন। এসব কাগজপত্র আমরা কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে যে, পরবর্তি নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তাকে যেন বহিস্কার করা না হয়।

কিন্তু আমরা জটিলতা এড়ানোর জন্য জেলা কমিটির মিটিংয়ে তাকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়েছি। আবার কেন্দ্র থেকে যদি নির্দেশ দেয় তাহলে আমরা তাকে স্বপদে ফিরিয়ে দেবো। এখন ১নং সহ সভাপতি যে আছে সে সভাপতির দায়িত্ব পালন করবে।”

কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান জানান, “আমি এখন পর্যন্ত এ ব্যপারে কোন চিঠি হাতে পাইনি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন খবর শুনতেছি।”

কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব তালুকদার মুঠোফোনে জানান, “উপজেলা সভাপতির যে বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে সেটি এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় যা নিয়ে বাইরে কোথাও আমরা মিটিং পর্যন্ত করতে পারতেছিলাম না। যে কারণে জেলা আওয়ামীলীগের কাছে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। এরপর জেলা আওয়ামীলীগ তাকে শোকজ করেছে কিন্তু শোকজের জবাব সন্তোষজনক হয়নি। এরপর গত ২৩ মে তারিখে জেলা আওয়ামীলীগের একটি বর্ধিত সভা হয়েছে সকল উপজেলার নেতৃবৃন্দদের নিয়ে। সেখানে সিদ্বান্ত হয়েছে যে, সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতির প্রস্তাব কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কাছে পাঠানো হোক।

উল্লেখ্য, উপজেলার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের ছাত্রলীগ কর্মী রুমান পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের বর্তমান এমপি অধ্যক্ষ মোঃ মহিববুর রহমানের একটি ছবি ফেসবুকে ‘মানবতার ফেরীওয়ালা’ লিখে পোষ্ট করায় গত ৬ মার্চ, বৃহস্পতিবার বিকেলে রুমানকে মুঠো ফোনে হুমকী দেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মাহবুবুবর রহমান।

এসময় তিনি বলেন, ৭০ বছরের মধ্যে ৬০ বছর কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সেক্রেটারী আমি আর আমার বাপে। তুই বেটা কি কছ, ছেমড়া। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ করতে হলে আমার কাছ থেকে সার্টিফিকেট নেতে হবে। তোর রাজনীতি করাডা আমি দেহাইতেছি।’

মুহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হওয়া ওই অডিওতে আরও শোনা যায় তিঁনি বলছেন, ‘তোর এমপি মানবতার ফেরীওয়ালা কি করছে, আমারে বুঝাইয়া দে। কয় কিলোমিটার রাস্তা
করছে? রাতে ভোট হইয়া গেছে, হেই এমপি তোর। আওয়ামীলীগ আমি আর আমার বাপে। অন্যরা রাজাকার।’

এরপর উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবন্দরা এ ঘটনার প্রতিবাদে ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুবের বহিস্কার দাবীতে লাগাতার মানববন্ধন কর্মসূচী পালন শুরু করে। এতে দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষায় জরুরী বৈঠকে বসে উপজেলা আওয়ামী লীগ। সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে দলীয় সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতির রেজুলেশন পাঠানো হয় জেলায়।

বার্তাবাজার/এম আই