ঘন ঘন করোনার প্রাদুর্ভাব, বন্যা, নদী ভাঙ্গন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক গৃহহীন মানুষ তাদের বাড়িঘর ও সম্পত্তি হারিয়েছে। এসব গৃহহীন শিশু তাদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু এই কোমলতি শিশুগুলো স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার বয়সে জীবন-জীবিকার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে। ভাল ভাগ্যের সন্ধানে তারা শহরে পুনর্বাসন করতে বাধ্য হচ্ছে।
ছবিটি বাংলাদেশের সিলেটের দক্ষিণ সুরমা ডাম্পিং ইয়ার্ডে তোলা যেখানে প্রতিদিন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আবর্জনা আনা হয় এবং ফেলা হয়। সিটি কর্পোরেশনের আবর্জনা থেকে প্লাস্টিক পণ্য সংগ্রহ করে সিলেট শহরের বিভিন্ন বোতল কারখানায় প্রতি কেজি দরে বিক্রি করা তাদের অন্যতম প্রধান কাজ। আবর্জনা থেকে বোতল সংগ্রহ করার পরে, কখনও কখনও সব সহপাঠীরা মিলে একসাথে ফুটবল খেলতে যোগ দেয়।
যেখানে পৃথিবীর নিষ্ঠুর বিষবাষ্প তাদের জীবনের ভাল ভাল চাহিদাগুলোকে নিরবে নিভৃতে শেষ কর দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। ময়লার ভাগাড়ের মধ্যে জীবিকা নির্বাহের কাজে জড়িত হয়ে তারা নিজ নিজ শৈশবে বেড়া উঠার চমৎকার দিনগুলো যেমন হাসিমুখে ব্যাগ নিগে স্কুলে যাওয়া, স্কুলের খেলার সাথীদের সাথে খুনসুটি করা সবকিছুই হারিয়ে ফেলতেছে।
দারিদ্র্য বা দরিদ্রতা বলতে সাধারণত বুঝায় মানুষের জীবনযাত্রায় উন্নতির অক্ষমতা, যখন জীবনযাপনের জন্য কোনো ব্যক্তির নিকট তার ন্যূনতম অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়ের জন্য অর্থ ব্যয়ের সামর্থ্য থাকে না, তাকে চরম দরিদ্র্যতা বলে। এবং যে কোনো কাজ যা একটি শিশুর মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করে এবং একটি শিশুর শৈশব কেঁড়ে নিয়ে তাকে অর্থ উপার্জনে বাধ্য করে তাকে শিশুশ্রম বলে।
দারিদ্ররেখা বলতে এমন একটি মাথাপিছু মাসিক ভোগ ব্যায়ের পরিমাণ বোঝায় যেখানে কোনো ব্যক্তি দৈনিক ২২৫০ ক্যালেরিযুক্ত খাদ্য গ্ৰহণ করতে সক্ষম। যাদের দরিদ্ররেখা বা তার নিচে অবস্থান, তাদের জীবনচালনা খুব দুষ্কর,কষ্টসাধ্য ও দুঃসাধ্য এবং যার মারাত্মক প্রভাব শিশুদের উপর পড়ে, ফলে অল্প বয়সেই তারা শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়ে।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ঢাকাতেই ছয় লাখ পথশিশু রয়েছে। মানব উন্নয়ন সূচকে ১৩৮তম স্থানে থাকা একটি দেশ, যেখানে জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে সেখানে এই শিশুরা সামাজিক স্তরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরের প্রতিনিধিত্ব করে।
লেখক এবং ছবি : জিয়াউল হক