শত কোটি টাকার ৫ ব্যাংক মালিক অংশ নিচ্ছেন এবারের নির্বাচনে। আলোচিত এসব ব্যবসায়ীর রয়েছে একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান। সফল এসব ব্যবসায়ী নিজ নিজ ক্ষেত্রে পরিচিত হলেও রাজনীতির মাঠে এবার চারজন নৌকা ও একজন লড়ছেন স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকে।

তাদের মধ্যে, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টার সালমান এফ রহমান ঢাকা-১ আসনে, আলহাজ্ব মোরশেদ আলম নোয়াখালী-২, আনোয়ার হোসেন খান লক্ষ্মীপুর-১, মো. ওয়াকিল উদ্দিন ঢাকা-১১ এবং আব্দুল কাদের আজাদ (এ কে আজাদ) ফরিদপুর-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

এই পাঁচ জনের মধ্যে নির্বাচনের হলফনামায় সবচেয়ে বেশি সম্পদের মালিক সালমান এফ রহমান, তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৫৪ কোটি ৭৬ লাখ ৭১ হাজার ১৩৫ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন আলহাজ্ব মোরশেদ আলম, তার সম্পদের পরিমাণ ১৭৯ কোটি ৯৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন একে আজাদ যার সম্পদ রয়েছে ১৭৮ কোটি ৬৩ লাখ ১১ হাজার ৭৯ টাকা। আনোয়ার হোসেন খান, ১৭৮ কোটি টাকা ও মো. ওয়াকিল উদ্দিনের ১১০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।

এ.কে.এম. রহমতুল্লাহ কে সরিয়ে ঢাকা-১১ আসনে প্রথমবারের মত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী করা হয়েছে মো. ওয়াকিল উদ্দিনকে। প্রতীক পেয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আর ফরিদপুর-৩ আসনে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আব্দুল কাদের আজাদ (একে আজাদ)। তার বিপরীতে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন জেলা আ’লীগে সভাপতি শামীম হক।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের আরেক সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আনোয়ার হোসেন খান লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি ওই আসনের বর্তমান এমপি।

বেঙ্গলগ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ মোরশেদ আলম নোয়াখালী-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। মোরশেদ আলম এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য।
এদিকে ঢাকা-১১ আসন থেকে প্রথম বারের মতো নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. ওয়াকিল উদ্দিন।

আলোচিত দেশের এই শীর্ষ ব্যবসায়ীরা নির্বাচনী আইন আনুযায়ী তাদের হলফনামা জমা দিয়েছেন। সেখানে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ও হা-মিম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। একে আজাদের মোট ১৭৮ কোটি ৬৩ লাখ ১১ হাজার ৭৯ টাকা। নগদ টাকা আছে (স্ত্রীসহ) ১২ কোটি ১০ লাখ ২৯ হাজার ৭৬৪ টাকা। শেয়ারবাজার বাজারে ও বন্ড আছে ১৫ কোটি ৮৭ লাখ ১০ হাজার ৫৮৬ টাকা। সেভিংস ১ কোটি ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার ৯৭৮ টাকা। নিজের ও স্ত্রীর নামে অকৃষি জমি আছে ১২ কোটি ৭৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮২৫ টাকা।

আলহাজ্ব মোরশেদ আলম, নির্বাচনী হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাশ মোরশেদ আলম জানান, তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১৭৯ কোটি ৯৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। তার বার্ষিক আয় ৬ কোটি ৫০ লাখ ৫ হাজার। আর ব্যয় ২ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৭২৩ টাকা। এর মধ্যে শেয়ারবাজার ও ব্যাংককে আমানত রয়েছে ৭১ কোটি ৯২ লাখ ৪৪ হাজার ২৬৮ টাকা। তার কাছে নগদ টাকা আছে নগদ আছে ৪ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার। তার স্ত্রীর কাছে আছে ৩ কোটি ৯ লাখ ৬৮ হাজার ৯৯৭ হাজার। ব্যবসা থেকে তিনি সম্মানি পান ৫০ লাখ ১০ হাজার টাকা।

মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. ওয়াকিল উদ্দিন। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১১০ কোটি ৭৫ লাখ ৮২ হাজার ৩২৭ টাকা। তিনি স্বদেশ প্রোপার্টির এমডি। এছাড়াও তিনি একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় পর্ষদের সদস্য হিসেবে রয়েছেন। হলফনামায় তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন। সম্পদের হিসাবে তিনি জানান, বাড়ি/ এপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে তার আয় ১ কোটি ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫৯ টাকা। এছাড়া শেয়ার/সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে আয় ৫৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬১০ টাকা, চাকরি থেকে আয় ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। তার নিজের নামে নগদ ১১ কোটি ২৬ লাখ ১৩ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা, তার স্ত্রীর নামে ২ কোটি ১৫ লাখ ৮০ হাজার ১৭১ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত সম্পদের পরিমাণ ৫৩ লাখ ৫১ হাজার ৪৯৫ টাকা রয়েছে তার স্ত্রী ও সন্তানদের রয়েছে যথাক্রমে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯৮ হাজার ৭৯৪ টাকাও ১৭ লাখ ২৪ হাজার ৬৩১ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির শেযার ২৩ কোটি ৩৯ লাখ ৮ হাজার ৯১৯, তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে রয়েছে যথাক্রমে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ২ হাজার ১০টি ও ১২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার। তার ও স্ত্রীর নামে দুটি গাড়ি রয়েছে যেগুলোর দাম যথাক্রমে ১ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও ২১ লাখ টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হিসেবে ঋণ নিয়েছেন ৩৪ কোটি টাকা।

আনোয়ার হোসেন লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছে। তিনি বর্তমানে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। এছাড়াও তিনি আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও এমডির দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি একাধিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য পদে রয়েছেন। হলফনামায় তিনি স্নাতকোত্তর পাশ দেখিয়েছেন। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১৭৮ কোটি ৪৪ লাখ ২২ হাজার ১০১ টাকা।

কৃষিখাত হতে বার্ষিক আয় ২৩ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৯ টাকা, বাড়ি/এপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে আয় ৫৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪২৬ টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ৫২ লাখ ৭ হাজার ৪২১ টাকা, শেয়ার, সঞ্চপত্র/ব্যাংক আমানত ৩১ লাখ ১ হাজার ৭৩০ টাকা। চাকরি থেকে আয় ২৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। নগদ টাকা রয়েছে ৯ কোটি ৩৫ লাখ ৮৮ হাজার ৫৮৬ টাকা আর তার স্ত্রী রয়েছে ৮৫ লাখ ৮৩ হাজার ৬৩৩ টাকা। ব্যাংকে ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছেন ৭৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪১৬ টাকা আর ২০ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬৮ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ৮ কোটি ৬৫ লাখ ৩২ হাজার ২৪৮ টাকা আর তার স্ত্রীর রয়েছে ৯ কোটি ৭৯ লাখ ১৫ হাজার ৭১৩ টাকা। বিভিন্ন ধরনের আমানত ও সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৩ কোটি ১ লাখ ২১ হাজার টাকা, ২০ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬৮ টাকা। গাড়ির দাম ৯০ লাখ টাকা। ৭ লাখ টাকা। স্বর্ণ অন্যান্য ধাতু রয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা ও ২৫ লাখ টাকার। তার ঋণ রয়েছেন-একক ঋণ রয়েছে ২৪ কোটি ৪৯ লাখ ১৬ হাজার ৪৬৩ টাকা।

সালমান এফ রহমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়াও তিনি আইএফআইসি ব্যাংককের চেয়ারম্যান এবং দেশের বৃহৎ গ্রুপ অব কোম্পানি বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। নির্বাচনী হলফনামায় তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৫৪ কোটি ৭৬ লাখ ৭১ হাজার ১৩৫ টাকা। এর মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ২৯৫ কোটি ৫২ লাখ ১২ হাজার ৯১৬ টাকা। তার নগদ টাকা পরিমাণ সাড়ে ৫৮ লাখ টাকা। তার ও স্ত্রীর মিলিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা। তার গাড়ির দাম ৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এছাড়া আসবাবপত্র রয়েছে ১ কোটি ৯১ লাখ টাকার। কৃষি জমি রয়েছে ৫ কোটি ৭২ লাখ টাকার। দালান, আবাসিক ও বাণিজ্য মিলিয়ে ৩২ কোটি ৪৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। তবে ঋণ আছেন প্রায় ৮১ কোটি টাকা।

বার্তাবাজার/এম আই