দেশের প্রথম চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। ২০২১ সালের ২৯ মার্চ থেকে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। চিকিৎসা-গবেষণায় দেশের আইডল হয়ে ওঠা এ প্রতিষ্ঠান থেকে এখন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়া যেন নবীন চিকিৎসকদের জন্য একটি আকাঙ্ক্ষিত বিষয়।

তবে, যার নেতৃত্বে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে, খোদ সেই প্রতিষ্ঠানপ্রধানের (উপাচার্য) বিরুদ্ধেই এবার উঠেছে ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়া অবৈধভাবে পদোন্নতি পাওয়ার চেষ্টা’সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ‘নীরব’ আলোচনা-সমালোচনা আর পক্ষ-বিপক্ষের কথার লড়াই শুরু হয়েছে বিএসএমএমইউয়ে।

এসব বিষয়ে তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে, কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ।

গণমাধ্যমের হাতে আসা এ সংক্রান্ত এক লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শারফুদ্দিন আহমেদ ২০০৪ সালের ২৪ এপ্রিল হতে (স্মারক নং- ২০০৪/৮০৯৩) সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি পান। তবে, অভূতপূর্ব নিয়মে ২০০৭ সালে পুনরায় একই পদে দ্বিতীয়বার ভূতাপেক্ষভাবে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে ২০০১ সালের ১২ জুলাই হতে (স্মারক নং ২০০৭/৫৪) পদোন্নয়ন লাভ করেন।’

এছাড়া অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শারফুদ্দিন আহমেদ নিজে স্নাতকোত্তর কোর্সে অন্তর্ভুক্তির সময় অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেন। ২০০২ সালের ৩০ জুন অনুষ্ঠিত ১২তম সিন্ডিকেট সভায় ‘বিষয়টি আইনসম্মত নয়’ বলে উল্লেখ করা হয়।

শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই হতে চেয়েছিলেন সহযোগী অধ্যাপক

বিএসএমএমইউয়ে সংরক্ষিত ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের নথি অনুযায়ী, ২০০১ সালের ২ জুন ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে ব্যক্তিগত পদোন্নয়নের ব্যাপারে গঠিত নির্বাচন কমিটির কাছে সাক্ষাৎকার দেন। তখন তিনি হাসপাতালটির চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে (চলতি দায়িত্ব) ছিলেন। পদোন্নতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মতো প্রকাশনা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল না।

সাক্ষাৎকার শেষে নির্বাচন কমিটির মন্তব্যে বলা হয়, শারফুদ্দিন আহমেদের পদোন্নতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী শিক্ষাকতার কোনো শর্ত পূরণ করেননি। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্তীকৃত ও প্রকাশনা থাকায় বিশেষ বিবেচনায় সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নয়ন দেওয়া যায়। বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিল সভায় প্রেরণ করার জন্য সুপারিশকৃত বলেও জানানো হয়।

তবে, গঠিত সেই কমিটি অন্য দুই চিকিৎসকের (নাক কান ও গলা বিভাগের তৎকালীন সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু সফি আহমেদ আমিন এবং পেডিয়াট্রিক বিভাগের তৎকালীন সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান) পদোন্নতিতে সব শর্ত পূরণ হয়েছে বলে মন্তব্যে উল্লেখ করেন।

চার শর্তে ২০০৪ সালে সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ

ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ ২০০১ সালে সহযোগী অধ্যাপক হতে সাক্ষাৎকার দিয়েও নির্বাচন কমিটির শক্ত সুপারিশ না থাকায় পদোন্নতিপ্রাপ্ত হতে পারেননি। এরপরও তিনি সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়মিত না হয়েই সহযোগী অধ্যাপকের পদোন্নতি বাগিয়ে নেওয়ার নানা চেষ্টা চালিয়ে যান। ২০০৪ সালের ২৪ এপ্রিল ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ আবারও বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর আবেদন করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ৪ নভেম্বর সিন্ডিকেট মিটিংয়ে চারটি শর্তে তাকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ওই বছরের ৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ আবদুল গফুর স্বাক্ষরিত এবং শারফুদ্দিনকে পাঠানো একটি চিঠিতে নিয়োগপ্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে নিয়োগের সম্মতিপত্র বিভাগীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে রেজিস্ট্রার অফিসে জমা দিতে বলা হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৪ এপ্রিল ২০০৪ সালের আবেদনের সূত্রে এবং গত ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাকে জানানো যাচ্ছে যে আপনি বর্তমানে চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের যে পদে নিয়োজিত আছেন, সেই পদটিকে সহযোগী অধ্যাপক পদে আপগ্রেড করে ব্যক্তিগত পদোন্নয়নের মাধ্যমে উক্ত পদে আপনাকে নিম্নলিখিত শর্তে নিয়োগ করা হয়েছে-

> ১০,৭০০-১৩,১০০/- টাকা বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী নির্ধারিতব্য মূল বেতন এবং অন্যান্য ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে।

> নিয়োগকৃত পদের দায়িত্বসহ অব্যবহিত পূর্ব পদের দায়িত্বও পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন বা পৃথক কোনো ইউনিট দেওয়া হবে না।

> এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন (১৯৯৮ সনের ১নং আইন), বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত ও প্রণীতব্য সংশ্লিষ্ট সব সংবিধি, অধ্যাদেশ, প্রবিধান ও নিয়ম অনুযায়ী চাকরি নিয়ন্ত্রিত হবে।

> আপনার এমএস ডিগ্রিপ্রাপ্তির তারিখ (২৬-৪-২০০৪ ইং) থেকে এ নিয়োগ কার্যকর বলে গণ্য হবে।

পদোন্নতির সময় পাল্টে আবার হয় ২০০১ সাল!

২০০৪ সালে কয়েকটি শর্তে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পেলেও ২০০৭ সালে এসে আবারও ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের নিয়োগের সময় পাল্টে যায় ভূতাপেক্ষভাবে। এমনকি প্রাক্তন বেতন-স্কেল ১০,৭০০-১৩,১০০ টাকার পরিবর্তে নতুন জাতীয় বেতন-স্কেল অনুযায়ী ১৫,০০০-১৯,৮০০ টাকা করা হয়।

তৎকালীন রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ আবদুল গফুর স্বাক্ষরিত শারফুদ্দিন আহমেদ বরাবর পাঠানো আরেক চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনি ২০০৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তারিখে পুনঃআবেদন করেছিলেন। সেই সূত্রে জানানো যাচ্ছে যে, গত ২০০১ সালের ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত এবং পরবর্তী ৪ আগস্টের একাডেমিক কাউন্সিলের ৯ম সভার (কার্যবিবরণীর) সুপারিশ অনুযায়ী পদোন্নতি কার্যকর করার জন্য ২০০১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তারিখের স্মারক (আদেশ নং-৭১৭১) দ্বারা গঠিত বিশেষ কমিটির সুপারিশ ও ভাইস-চ্যান্সেলরের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে চক্ষু বিজ্ঞান-বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের যে পদে আপনি নিয়োজিত ছিলেন, সেই পদটিকে ২০০৪ সালের ৯ নভেম্বর তারিখের স্মারক (আদেশ পত্র নং-বিএসএমএমইউ/২০০৪/৮১০৭) দ্বারা আপগ্রেড করে নির্ধারিত শর্তে ব্যক্তিগত পদোন্নয়নের মাধ্যমে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।’

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আপনার উপরোক্ত পুনঃআবেদন অনুযায়ী ভাইস-চ্যান্সেলরের গত ২৮ ডিসেম্বর (২০০৬ সাল) পুনঃবিবেচনার পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত আদেশ আংশিক পরিবর্তন করে আপনার ব্যক্তিগত পদোন্নয়নের তারিখ ভূতাপেক্ষভাবে ২০০১ সালের ১২ জুলাই থেকে উক্ত পদটিকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে আপগ্রেড করে প্রাক্তন বেতন স্কেল ১০,৭০০-১৩,১০০/- টাকা (বর্তমানে যা ২০০৫ ইং থেকে নতুন জাতীয় বেতন স্কেল ১৫,০০০-১৯,৮০০/- টাকায় কার্যকর) হিসেবে নির্দেশক্রমে গণ্য করা হলো।’

প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনিয়মের খবরে যা বলছেন চিকিৎসক-কর্মকর্তারা

বিএসএমএমইউয়ে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর থেকে নিজেকে নানা অনিয়মে আবদ্ধ করে ফেলেন। তার বিরুদ্ধে প্রতিটি পদোন্নতিতে ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রহণের কথা শোনা যায়। এবার শুনছি তিনি নিজেই অবৈধ প্রক্রিয়ায় পদোন্নতি পেয়েছিলেন। খুব স্বাভাবিকভাবে ওনার থেকে এর চেয়ে বেশি আশা করার কিছু নেই।

তিনি বলেন, তিনি উপাচার্য হওয়ার পর থেকে অন্তত ১০ থেকে ১১ জন আত্মীয়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি দেন। সেগুলোর কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। কিছু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও নিম্ন সারির কিছু পত্রিকায় দেওয়া হয়। যেগুলো মানুষ কখনই পড়ে না। তিনি আসার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কাজ করছেন ঠিকই, তবে অনিয়ম-দুর্নীতিতে তিনি অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এক ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সব ডাক্তাররাই একটি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যান। কিন্তু শোনা যাচ্ছে আমাদের বর্তমান ভিসি স্যারকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনে ঢোকার জন্য কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি। তিনি অনেকটা নিজের শক্তি খাটিয়ে এ কোর্সে ঢুকে গিয়েছিলেন। আমি নিজে বিএসএমএমইউতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করছি, যখন শুনেছি ভিসি স্যারের পোস্ট গ্রাজুয়েশনই অবৈধ, তখন থেকে নিজের পড়াশোনার মান নিয়ে কনফিউশনে পড়ে গেছি। যাকে আমরা এত দিন আইডল হিসেবে দেখে এসেছি, তার মধ্যেই দেখছি অনেক সমস্যা।

তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের সময় ভিসি স্যারসহ বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে অনেক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এবার বাস্তবেই তা বুঝতে পারছি।

শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডা. শারফুদ্দিনের ব্যাপার আমার ‘নো কমেন্ট’। কারণ, তিনি আমার উত্তরসূরি। এখন কোনো বিষয়ে তার বিষয়ে কমেন্ট করাটা ঠিক হবে না। বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে আমি আগে কথা বলতাম। কিন্তু কথা বলার পরপরই দেখি আমার বিরুদ্ধে ‘গালিগালাজ’ শুরু হয়ে যায়, যা কোনো একজন ভদ্রলোকের পক্ষে শোনা সম্ভব নয়। যে কারণে আমি একদম চুপ মেরে গেছে। কোনো কিছুতে আর কথা বলি না।

ভিসি শারফুদ্দিন আহমেদ ছাড়া অন্য কেউ হলে তার ব্যাপারে আপনার অবস্থান কী হতো— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার অবস্থান সবসময়ই অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আমার ছেলের ইন্টারভিউয়ের সময় বোর্ডে আমি সভাপতিত্ব করিনি। আমার বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারবে না। অফিসিয়াল নোটিশ দিয়ে অমুক কমিটির সভাপতি থাকবেন অমুক— এগুলো আমার পক্ষে করা কখনই সম্ভব নয়। কিছু জিনিস আমি মেনে চলেছি, কিন্তু অনেককেই দেখছি মেনে চলছে না। সেটা তাদের ব্যাপার। এখন এগুলো দেখভাল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আছে। তারা যদি ঠিক মতো দেখভাল না করে, সেটা তাদের ব্যাপার।’

‘আমি মনে করি প্রত্যেকেরই জবাবদিহিতা থাকা উচিত। জবাবদিহিতা না থাকলে যে কেউ উচ্ছৃঙ্খল হয়ে যেতে পারেন। আমি মনে করি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচিত তাদের নিজ নিজ দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে পালন করা।’

কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, পদোন্নতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী যেসব কাগজপত্র ও যত খানি যোগ্যতার প্রয়োজন হয়, সেগুলো ছাড়াই যদি কেউ পদোন্নতি পেয়ে যান তাহলে সেটি অবশ্যই অবৈধ। এক্ষেত্রে যারা পদোন্নতি দিয়েছেন তারা অবৈধ কাজ করেছেন। শারফুদ্দিনের বিষয়টি আমি জানি না, তার শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়েও আমার জানা নেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, একজন সাবেক উপাচার্য হিসেবে বর্তমান উপাচার্যের বিষয়ে এসব অভিযোগ শুনলে খুবই কষ্ট হয়। বিএসএমএমইউর শুরু থেকে আমি ছিলাম। প্রথমে শিক্ষার্থী হিসেবে ঢুকেছি, বের হয়েছি উপাচার্য হয়ে। এখন যদি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কোনো খারাপ খবর শুনি, নিজের কাছেও খারাপ লাগে।

‘এই ধরনের ইরেগুলার (নিয়মবহির্ভূত) কাজ করলে তো হবে না। আপনি উপাচার্য (শারফুদ্দিন আহমেদ) হয়েছেন, আমরা খুশি। ভালো করছেন আরও ভালো করবেন। আপনার উচিত কাজে মনোযোগ দেওয়া এবং ঠিক মতো কাজ করা। কিন্তু আপনি যদি এরকম স্বজনপ্রীতি করেন, সেটা তো উচিত না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জবাবদিহিতার জায়গা হলো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। উপাচার্যসহ সবারই তাদের কাছে জবাবদিহিতা থাকার কথা। কিন্তু তারা নিয়মিত এসব ইনকোয়ারি (অনুসন্ধান) করে না। যদি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আসে, তাহলে তারা কাজ করে।’

‘আমি যত দিন ভাইস চ্যান্সেলর ছিলাম তখন তো শুধু জবাবদিহিতা নয়, এমন অস্থিরতার মধ্যেও ছিলাম। বর্তমানে যিনি ভিসি, তার কোনো জবাবদিহিতা থাকবে না? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবশ্যই বিষয়টি দেখেছে।’

‘আমি যত দিন উপাচার্য ছিলাম, ওই সময়ে ওনার কোনো পদোন্নতি হয়নি। যত দিন দায়িত্বে ছিলাম, আমার কাছে অনেকেই অনেক রকম চাহিদা নিয়ে এসেছে। কিন্তু আমি কোনোরকম পাত্তা দিইনি। এমনকি তাদের চাহিদা মতো পদোন্নতি আর নিয়োগ না দেওয়ায় আমার ইচ্ছার বাইরে চাকরি ছাড়তে হয়েছিল। কিন্তু আমি কোনো কিছুতেই আপস করিনি। যদি আপস করতাম, তাহলে হয়তো আর কিছুদিন উপাচার্য হিসেবে থাকতে পারতাম।’

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, পদোন্নতি সম্পর্কে আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ তোলা হয়েছে সব মিথ্যা। আমি ১৯৮৫ সালে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট করে ১৯৯১ সালে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হয়েছি। এরপর ২০০৭ সালে আমি অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হয়েছি। যারা আমার পদোন্নতি ও ডিগ্রি নিয়ে কথাবার্তা বলছে, তাদেরই বরং কোনো ডিগ্রি নেই।

‘আমাদের এক ট্রেজারারের ব্যাপারে, পদোন্নতি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় রিপোর্ট হয়েছে। সে এখন আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে নিজের পজিশনটা শক্ত করার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে কোনো সত্যতা নেই। এখন পর্যন্ত আমার চেয়ে ভালো এ বিশ্ববিদ্যালয় কেউ চালায়নি, এমনকি ভবিষ্যতেও এমনভাবে চালানোর সম্ভাবনা কম। ওরা এ পদটা চায়, আর আমি যেন দ্বিতীয় মেয়াদে আর দায়িত্ব না পাই। এজন্য তারা আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। সত্যিকার অর্থে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতিতে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

বার্তা বাজার/জে আই