ওয়েস্ট বেইজড পাওয়ার প্ল্যান্ট পরিদর্শনে বর্তমানে চীন সফরে রয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। সফরে মেয়রকে সঙ্গ দিচ্ছেন প্রায় ১০ জন উল্ল্যেখযোগ্য সরকারী কর্মকর্তা সহ একাধিক কাউন্সিলর গন। যাদের মধ্যে কেবল মাত্র একজন ব্যাতিত কারোই বর্জ্য্ বিদ্যুৎ প্রকৌশল সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা নেই। সফরে থাকা বেশিরভাগ কর্মকর্তাই ডেপুটেশনে আছেন। জরুরী সরকারী সফরের এমন অযৌক্তিক বহর সৃষ্টি হওয়ার ব্যপারে বিরুপ মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা ।

কেবল চীন সফর নয়, বিগত এক বছরে এমন আরো প্রায় ১০টির বেশী দেশে তুলনামুলক অপ্রয়োজনীয় বহর নিয়ে সরকারী অর্থ অপচয় করে ভ্রমনের ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন অনেকেই। যদিও ভ্রমনের ব্যাপারে মেয়রের বক্তব্য আয়োজক সংস্থার আমন্ত্রণ ও নির্বাহী ব্যবস্থাপনায় যাবতীয় ব্যায় নির্বাহ করা হয়েছে। তবুও প্রায় তিন মাস কার্যালয়ে উপস্থিত না থাকা এবং বহর নিয়ে যখন তখন যে কোন অনুষ্ঠানে যোগ দানের বিষয়টি ইতিবাচক ভাবে দেখছেন না নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞগণ।

প্রয়োজনীয় নথি এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, চলতি মাসের ১৮ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্লান্ট পরিদর্শনে চীন সফরে থাকবেন আতিকুল ইসলাম। ৮ দিনের এ সফরে মেয়রের সঙ্গে আছেন একান্ত সচিব, কাউন্সিলরসহ ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল। মেয়রের সফরসঙ্গীরা হলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (১) মোহাম্মদ শের আলী, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (২) সেলিম রেজা, ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর (৩) এসএম শরিফ-উল ইসলাম, ডিএনসিসির চিফ এস্টেট অফিসার (৪) ড. মোহাম্মদ মাহে আলম, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (৫) বেলাল হোসেন, মেয়রের একান্ত সচিব (৬) শাহ মুজাহিদ উদ্দিন, ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) (৭) এসএম শফিকুর রহমান, ডিএনসিসির ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর (৮) ইসহাক মোল্লা, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর (৯) জাকির হোসেন জনি, সংরক্ষিত ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর (১০) সাহিদা আক্তার শিলা। এর মধ্যে ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এসএম শফিকুর রহমান শুধু করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাকিরা ডেপুটেশন এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সহ একাধিক কাউন্সিলর রয়েছেন।

জানা যায়, ইতিপূর্বে গত ৯ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কোরিয়া ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল সফর করেন। সফরে তার সঙ্গী ছিলেন একান্ত সচিব শাহ মুজাহিদ উদ্দিন। তারপূর্বে ৩রা এপ্রিল সৌদি আরবে ওমরাহ হজ পালন করতে যান মেয়র আতিক। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়, সফরকালে মেয়র বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন। প্রায় সপ্তাহখানেক সেখানে অবস্থান করেন তিনি।

বিশ্বব্যাংকের ট্রান্সফর্মিং ট্রান্সপোর্টেশনের ২০তম সম্মেলন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ১৩ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের নেতৃত্বে একটি দল ওয়াশিংটন ডিসিতে যায়। সে দেশে ছিলেন মেয়র। সফরকালে মেয়র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের আয়োজনে বিভিন্ন সভা-সমাবেশেও বক্তব্য দেন।

আধুনিক পদ্ধতিতে, মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব আহরণ পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিতে ১৫ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান মেয়র আতিক। এ সফরে প্রতিনিধিদলে ছিলেন ১৯ জন।

ব্যাংককে এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে গ্লোবাল ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন সেন্টার লঞ্চ অনুষ্ঠানে ৩০ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাইল্যান্ড সফর করেন মেয়র। ‘প্যারাডাইম শিফট-স্কেলিং দ্য এসডিজি ৬.২ ইমপ্যাক্টস’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং ইউনিসেফ যৌথভাবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে।

১৫ নভেম্বর মিশরের শারম-আল-শেখে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস সেন্টার আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশ নিতে ১৪ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত মিশর সফর করেন। ১৭ নভেম্বর মিশরের শারম আল-শেখে ক্লাইমেট অ্যাকশন জোনে প্যানেল আলোচনায় ছিলেন।

ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস অ্যাওয়ার্ড-২০২২ এর আমন্ত্রণে গত বছরের ১৮ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত আর্জেন্টিনা সফর করেন। বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কাজ করায় তাকে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস অ্যাওয়ার্ড-২০২২ প্রদান করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেয়রদের নিয়ে গঠিত বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম সি-৪০ সিটিস।

ভলিবল ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে গত ২০২২ এর সেপ্টেম্বরে নেদারল্যান্ডস সফরে যান। সফরে তিনি চার দিন অতিবাহিত করেছেন।

মাইগ্রেশন কাউন্সিল এবং বিশ্বব্যাংকের আমন্ত্রণে গত বছর ১৫ মে থেকে ২৬ মে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন আতিকুল ইসলাম। তিনি এমএমসি লিডারশিপ বোর্ড মিটিং, ডিজাস্টার ডিসপ্লেসমেন্ট, জেনারেল অ্যাসেমব্লি মিটিংসহ ইত্যাদি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, এ ধরনের সফরে যে অবিচার হচ্ছে, শুধু সেটি টাকায় হিসাব করা যাবে না। টাকা তো একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের যে কর্মঘণ্টা, বিদেশে যাওয়ায় তারা কর্মস্থলে থাকছেন না। যে সময়টা থাকছেন না, তার একটি মূল্য আছে। এর জন্য যদি তারা বলে বিদেশি সংস্থা আমাদের টাকা দেয়, এরপরও এ ধরনের সফর প্রশ্নবিদ্ধ।

উচ্চতর পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা নেতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। একদিক থেকে কৃচ্ছ্রসাধনের সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করছেন, সমাজকে একটা ভুল
বার্তা দিচ্ছেন। তারা অর্থ অপচয় করছেন বলে মত দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

মেয়র আতিকুল ইসলাম বর্তমানে চীনে অবস্থান করছেন। তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে পরিচয় এবং কথা বলতে চাওয়ার কারণ জানিয়ে এসএমএস দিলেও তিনি সাড়া দেননি।

ই.এক্স/ও.আর