‘বাবা’ নামক ব্যক্তির কাছে সন্তান অপার্থিব এক ভালোবাসার নাম। যেখানে নেই কোন চাওয়া পাওয়া, টাকার মোহ কিংবা কোন ধরনের স্বার্থ। সন্তানদের ঘিরেই বাবাদের স্বপ্নের পৃথিবী। কল্পনার পাতায় পাতায় আঁকেন শত সুখের আল্পনা। ছেলে লেখাপড়া করে ভালো রেজাল্ট করবে, সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, মানুষের সেবা করবে, ভালো কোনো পেশায় নিজেকে নিয়জিত করবে, এমন কত শত স্বপ্ন দেখেন বাবারা। বটবৃক্ষের ন্যায় বাবার ছায়াতলে সন্তান সবসময় নিরাপদ থাকে। বাবা শব্দটি দায়িত্ব ও ভালোবাসায় ঘেরা। বাবা হলেন শ্রদ্ধা, ভয়, উৎসাহ, নির্দেশনা ও নির্ভরতার চূড়ান্ত ঠিকানা। যার হাত ধরে সন্তানরা দুর্গমপথ হেঁটে যায় স্বপ্নসুখে। সন্তানের জীবনে যেন কষ্ট-ক্লেশের কোনো স্পর্শ না লাগে, সে জন্য বাবা হন অতন্দ্র প্রহরী।

কিছু কিছু সন্তানের জন্য বাবার জীবনে ঘটে লাঞ্ছনা-বঞ্চনা। অনেক সময় সন্তানের অপরাধ বা অনিয়মের জন্য বাবারা ক্ষমা চাইতেও কুন্ঠা বোধ করেন না। কিন্তু যদি ক্ষমাটা সন্তানের কাছে চাইতে হয়! আবার তা যদি গ্রাম্য সালিশে রায়ের মাধ্যমে হয়! সে সাথে ক্ষমা না চাইলে যদি বেতের আঘাতের রায় হয়?

পারিবারিকভাবে বিরোধ ও ছেলেকে প্রহারের জেরে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে বাবাকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং ক্ষমা চাইতে বলা হয়, ক্ষমা না চাইলে বাবাকে বেতের আঘাত করা হবেও বলে রায় দেওয়া হয়। ঘটনাটি ঘটে নোয়াখালী হাতিয়া উপজেলার বুডিরচর ইউনিয়নে। বিষয়টি সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশের পর তা মূহুত্বের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন ধরে সোস্যাল মিডিয়া এবং সচেতন মহলে চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা। অনেকে বলছেন, এমন সালিশদার এবং সন্তানকে প্রকাশ্যে এনে শাস্তি দেওয়া হোক। কখনো যেন এমন নিকৃষ্ট এবং ঘৃণিত কাজ কেউ না করতে পারে।

ভুক্তভূগী মাহে আলম ব্যাপারী (৭০) জানান, আমার ছেলে নুরুল আলম বাড়িতে যতটুকু জায়গা প্রাপ্য ততটুকু ভোগ করে। কয়েকদিন আগে সে আমার অন্য একটি জায়গা জোর পূর্বক দখল করতে গেলে তাকে আমি বাঁধা প্রদান করি, সে এসে আমার গলা চিপে ধরে মাটিতে পেলে দেয়। আমি সেখান থেকে উঠে হাতে থাকা লাঠি দিয়ে তাকে একটা বাড়ি দিয়। এটা নিয়ে সে সমাজে বিচার চাইলে গত শুক্রবার বিকেলে সালিশদারেরা আমার বাড়িতে আসেন। বিচারের এক পর্যায়ে তাঁরা আমার ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং ছেলের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। ক্ষমা না চাইলে বেত দেওয়ার কথাও বলেন।

তিনি আরো জানান, যাকে আমি ছোট থেকে বড় করেছি তার কাছে আজ আমি মাপ চাইতে হবে, না হলে আমাকে বেত দিবে। আমি খুবই ব্যাথিত হয়েছি। সালিশদারদের রায় আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ইউপি সদস্য নুরুল আমিন বলেন, আমাদের সালিশদারদের মধ্যে একজন ক্ষোভের বসে এ রায় দিয়েছে, তবে তা কয্যকর করা হয়নি।

শূন্যেরচর হাজী আলতাফ হোসেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো: আকতার উদ্দিন হাওলাদার বলেন, একজন বাবা হিসেবে সমাজের এহেন রায়ে আমি ভীষণ ভাবে লজ্জিত এবং স্থম্ভিত।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আমি বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। যদি তা সত্য হয়ে থাকে তা মোটেও ঠিক হয়নি। ভুক্তভোগী যদি আইনি সহায়তা চাই আমার পক্ষ থেকে সর্বাত্তক সহযোগিতা করবো।

বার্তাবাজার/এম আই