দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে আওয়ামীলীগের নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি। এবারসহ তিনি টানা চারবার নৌকা প্রতীক পেলেন। কিন্তু তিনবার পরাজিত প্রার্থী হিসেবে এবারও ভরাডুবি হবার আশংকায় তার মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবিতে চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ হয়েছে। রোববার থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পৃথক পৃথক সময়ে এসব বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে জাফর অনুসারী তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়নের চিঠি পেয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপির বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ আসনে আমাকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি ও চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার সকল নেতাকর্মী ও মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র মতে, ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সালাহ উদ্দিন আহমদ প্রথম নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে ৫০ হাজার ৮২৯ ভোট পান। এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন তিনি। পরে ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বার নৌকা মনোনয়ন পেয়ে ৭৪ হাজার ২৯৭ ভোট পান। সেবারও বিএনপির সালাহউদ্দিনের কাছে পরাজিত হন নৌকার সিআইপি সালাহ উদ্দিন। সর্বশেষ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সালাহউদ্দিন আহমদ কারাবন্দি থাকায় তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমেদ বিএনপির টিকিটে ভোট করেন। সেবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকার টিকেট পান সালাউদ্দিন আহমদ সিআইপি। এবারও বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন পত্নী এডভোকেট হাসিনা আহমদের কাছে ৩৫ হাজার ৪০১ ভোটে হেরে ‘হ্যাট্টিক’ পরাজয় বরণ করেন আওয়ামী লীগের সালাহউদ্দিন আহমদ।

চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহিদুল ইসলাম লিটু বলেন, চকরিয়া-পেকুয়া সংসদীয় আসনটি একসময় বিএনপি-জামাতের ঘাটি হিসেবে পরিচিত ছিল। স্বাধীনতার পর এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বারবার পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জাফর প্রথম দলীয় এমপি হিসেবে জয় পেয়ে দুই উপজেলাকে আওয়ামী লীগের উর্বর ঘাঁটিতে পরিণত করেছেন। এর আগে তিনবার নৌকার মনোনয়ন পেলেও নির্বাচনের সময় ছাড়া এলাকার জনগণ ও নেতাকর্মীদের সাথে কোন তেমন যোগাযোগ রাখতো না বর্তমান মনোনয়ন পাওয়া সালাহ উদ্দিন আহমদের। তাই তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি, বিএনপি-জামায়াতের কাছে বারবার পরাজিত ব্যক্তিকে দেয়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত ও স্বাধীনতার পর দলের মুখ উজ্জ্বল করা ব্যাক্তিকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে চকরিয়া পৌরশহরের থানা রাস্তার মাথায় সিস্টেম চকরিয়া কমপ্লেক্স চত্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ছৈয়দ আলম কমিশনারে সভাপতিত্বে জাফর আলমের সমর্থনে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে চকরিয়া, পেকুয়া ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।

সমাবেশে নারী-পুরুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। স্থান সংকুলান না হওয়ায় মানুষের স্রোত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া পৌর শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে চকরিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার রকীব উর-রাজা, চকরিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নিয়ে যান ও জনচলাচল পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখেন।

অপরদিকে, সোমবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চকরিয়া পৌরশহরের এক রেস্তুরায়া আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংসদ সদস্য জাফর আলম।
নৌকা প্রতীকে দলের প্রার্থী হিসেবে সালাহউদ্দিন আহমদের নাম ঘোষণা করা হলেও আপনি কেন স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি জাফর আলম শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন- স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর এই আসনে আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে জনগণের খুব কাছাকাছি ছিলাম। এজন্য জনগণ এবারের নির্বাচনেও আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে রয়েছেন। তাই জনগণের সেই ভালবাসা থেকে আমি কোনদিন দূরে থাকতে চাই না। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে এ আসনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে মাঠে কাজ করছি।

জাফর আলম আরও বলেন, ইতোমধ্যে দলের প্রধান শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, দলের মধ্যে যদি কোন সম্ভাবনাময়ী প্রার্থী থাকে, তারা যদি মনোনয়ন নাও পান, তাহলে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন। আমিও সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। কারণ এই আসনে যাকে এবার নৌকা প্রতীকের প্রার্থী করা হয়েছে তিনি ইতোপূর্বে তিনবার নির্বাচন করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি দলের দুঃসময়ে কোন নেতাকর্মীর পাশেও ছিলেন না। এমনকি বিএনপি-জামায়াতের আগুন-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে রাজপথেও ছিলেন না। তাই দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে চকরিয়া-পেকুয়া-মাতামুহুরী উপজেলার জনগণ তার কাছ থেকে অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এবারও তার নিশ্চিত ভরাডুবি হবে জেনে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সচেতন জনগণ আমার পক্ষেই আছেন এবং তারা আমাকে আবারও এমপি হিসেবে জয়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই আসন উপহার দেবেন।

উল্লেখ্য, ২৬ নভেম্বর বিকালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউস্থ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অন্য প্রার্থীদের সাথে চকরিয়া-পেকুয়ার আসনের জন্য সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপির হাতে মনোনয়নের চিঠি তুলে দেন। এর আগে বাংলদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত প্রার্থীদের চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।

বার্তা বাজার/জে আই