ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের ১১ বছর পূর্তি হলো আজ। শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকালে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার কারখানাটির সামনে নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা ফুল হাতে এসে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন৷ এসময় নিহত ও আহত শ্রমিকদের স্বজনরা গণমাধ্যমকে তাজরিনের মালিকের শাস্তির দাবি জানান।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শ্রমিক নেতাসহ সাধারণ শ্রমিকরা তাজরিন ফ্যাশনের মালিক দেলোয়ার হোসেনের শাস্তি এবং তাজরিনের ভবনটি ভেঙে এখানে শ্রমিকদের পুনর্বাসন অথবা হাসপাতাল তৈরি করার দাবী জানান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন বলেন, ১১ বছর পার হলেও তাজরিনের ঘটনায় কোনো বিচার হয়নি। বরং পত্রিকার মাধ্যমে জানা গেছে, তাজরিনের মালিক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনকে ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছে। এটা একধরনের পুরস্কার।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে বলা হচ্ছে সাক্ষী পাওয়া না যাওয়ায় মামলা শেষ করা যাচ্ছে না। অথচ আহত শ্রমিক, স্থানীয়সহ সবাই প্রস্তুত আছেন সাক্ষ্য দিতে। এটা একধরনের বিচার না করার অজুহাত।
এর আগে, শুক্রবার সকালে অগ্নিকাণ্ডের ১১ বছর পূর্তিতে কারখানার সামনে ফুল দিয়ে নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, অগ্নিকান্ডে আহত ও নিহতদের স্বজন এবং শিল্প পুলিশ সদস্যরা।
পরে পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগ, ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কাস, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ব্যানার হাতে মিছিল নিয়ে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে নিহত শ্রমিকদের শ্রদ্ধা জানায়।
এদিকে, তাজরিন ট্রাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তাজরীন ফ্যাশনের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।
এব্যাপারে শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দায়ের করা মামলায় ইতোমধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বিচার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সব প্রকার সহযোগিতা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে বিষয়ে তারা সোচ্চার আছেন।
প্রসঙ্গত, ১১ বছর আগে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় আগুন লাগে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরিন ফ্যাশনের আটতলা ভবনে। ভয়াবহ আগুনের কথা এখনও মনে পড়ে আঁতকে ওঠেন ভুক্তভোগীরা। তাজরিন ফ্যাশনে এক হাজার ১৬৩ জন শ্রমিক কাজ করতেন। দুর্ঘটনার সময় ৯৮৪ জন শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। মরদেহ শনাক্ত হওয়ায় ৫৮ জনকে পরিবার ও স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অন্যদের মরদেহ শনাক্ত না হওয়ায় তাদের জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বার্তাবাজার/এম আই
