মদের পার্টি করার টাকা যোগার করতে ইজিবাইক চালক শাকিলকে গলা কেটে হত্যার পর তার ইজিবাইক ছিনতাই করেন কিশোর গ্যাংয়ের চার সদস্য। পুলিশ অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন জনি (২০), শারাফাত (২০), ইব্রাহিম চান (২১), সাব্বির হোসেন মেহেদী (২২)।

রোববার (২১ মে) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গত ১৯ মে সকাল ৬টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন মঠবাড়ী পদ্মা রেলওয়ে সেতুর নিচে পরিত্যক্ত ইটের খোলার ভেতরে একজনের গলাকাঁটা লাশের খবর পায় সেখানকার থানা পুলিশ। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, মৃতদেহটি একই ইউনিয়নের পালিরা গ্রামের মৃত সিদ্দিক মিয়ার ছেলে শাকিলের (১৭)। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শাকিলের পরিবারের সদস্যরা মৃতদেহটি শাকিলের বলে শনাক্ত করেন।

নিহত শাকিলের পরিবার জানায়, শাকিল দশম শ্রেণির ছাত্র, তার বাবা ছোটবেলায় মারা যায়। বাসায় শাকিল তার অসুস্থ মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে থাকতেন। নিজের পড়াশোনা, মায়ের চিকিৎসা ও সংসারের খরচ মেটাতে শাকিল স্কুল শেষে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ইজিবাইক চালাতেন। প্রতিদিনের মতো শাকিল গত ১৮ মে বিকেলে ইজিবাইক নিয়ে বের হন। অনেক রাত হয়ে হলেও বাসায় ফেরেন না। পরদিন সকালে তার মরদেহ উদ্ধার হয়।

পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পুলিশ মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করার সময় দেখতে পায়, ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা থেকে দেহ প্রায় বিচ্ছিন্ন করা হয় তার। পিঠে ১১টি এলোপাতাড়ি চাকুর ক্ষত এবং পেটে চাকু মারায় নাড়িভুড়ি বের হয়ে যায়।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় পর শাকিলের বড় বোন মোছা. সীমা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পরে ঢাকা জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা তদন্ত শুরু করেন।

প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করে, আসামিরা ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে শাকিলকে পরিত্যক্ত ইটখোলায় নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। তদন্ত টিম ঘটনাস্থল ও এর আশেপাশের এলাকায় তথ্য-প্রযুক্তি প্রয়োগ করে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

পুলিশ জানায়, প্রযুক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আসামিরা তাদের মোবাইল বন্ধ করে বিভিন্ন জেলায় পালিয়ে গেছেন। প্রায় টানা ২৪ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার চারজনই মাদকাসক্ত এবং কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য। পরে গ্রেফতার আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি রক্তমাখা সুইসগিয়ার চাকু, আসামিদের ব্যবহৃত রক্তমাখা সিএনজি ও ইজিবাইক জব্দ করে পুলিশ।

পুলিশ সুপার জানান, গত ১৮ মে আসামিরা একটি ইজিবাইক ছিনতাই করে ব্যাটারি বিক্রির টাকা দিয়ে মদের পার্টি করবে বলে পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক ওইদিন সন্ধ্যায় একটি সিএনজি ভাড়া নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কাউচাইল ঘাটে টার্গেট ইজিবাইকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। পরবর্তীতে কোনো ইজিবাইক না পেয়ে গ্রেফতার শরাফত ও জনি কাটাল ঘাট এলাকা থেকে সামনে এগিয়ে গিয়ে শাকিলকে পান।

আসাদুজ্জামান আরও বলেন, নিহত শাকিল গ্রেফতার জনির পূর্ব পরিচিত হওয়ায় শাকিলকে নির্জন জায়গায় ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া সহজ হবে মনে করেন। জনি, শরাফাত এবং সাব্বির শাকিলের ইজিবাইকে উঠে ঘুরতে ঘুরতে শাকিলকে নিয়ে মঠবাড়ী পরিত্যক্ত ইটখোলায় যান। অন্যদিকে, ইব্রাহিম সিএনজি নিয়ে তাদের পিছু পিছু যান। এরপর ঘটনাস্থলে পৌঁছানো মাত্রই পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক শারাফাত সুযোগ বুঝে সুইসগিয়ার দিয়ে শাকিলের গলায় আঘাত করেন। এতে শাকিল ইজিবাইক থেকে পড়ে গেলে তার গলা চেপে ধরা হয়। চিৎকার শুরু করলে তখন জনি পেছন থেকে শাকিলের পিঠে এলোপাতাড়ি চাকু মারতে থাকেন। কিন্তু তারপরও শাকিল চিৎকার ও দাপাদাপি করতে থাকলে জনি, সাব্বির এবং ইব্রাহিম চান শাকিলের মাথা ও হাত-পা চেপে ধরেন। শরাফাত শাকিলকে সুইসগিয়ার দিয়ে মাথার সামনে-পেছনে আঘাত করে মাথা প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মৃত্যু নিশ্চিত করার পর শরাফত, জনি ও ইব্রাহিম সিএনজিতে করে চলে যান।

বার্তা বাজার/জে আই