স্বাধীনতা পরবর্তী স্বপ্ন যাত্রার ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে পরীক্ষামূলক যাত্রায় সফল ভাবে পর্যটন নগরী কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে পৌছেছে। কক্সবাজারের উৎসুক মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছাসে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ইতিহাসে রচিত হলো মাইল ফলক।
আজ রবিবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ট্রেনটি কক্সবাজার স্টেশনে পৌছায়। এসময় হাজার হাজার নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন। তারও আগে সকাল ৯টায় ৮টি বগি নিয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে কক্সবাজার অভিমুখে প্রথম ট্রেনটি ছেড়ে যায়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নাজমুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী নতুন নির্মাণের পর রেলপথ পরিদর্শন করা হয়। এটাও তারই একটি অংশ। পরিদর্শনে রেলওয়ে পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক রুহুল কাদের আজাদের নেতৃত্বে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ট্রেনে ছিলেন।
যাত্রাকালে কর্মকর্তারা প্রকল্পের আওতায় দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু, কক্সবাজার সদর সহ মোট ৯টি স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে প্রকল্প পরিদর্শন করেন।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া বলেন, প্রায় শত বছরের পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কালুরঘাট সেতুটি এই রুটে ট্রেন চলাচলের অন্যতম বাধা ছিল। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একদল প্রকৌশলী গত আগস্ট মাসে এই সেতুর সংস্কার কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ওয়াকওয়ে ও ওয়েল্ডিংয়ের কাজ বাকি আছে। কাজ শেষ হতে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
সূত্র জানায়, সব কিছু ঠিকটাক থাকলে পূর্ব নির্ধারিত সময় আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন এই রেলপথের উদ্বোধন করবেন। ১লা ডিসেম্বর থেকে এই রুটে বানিজ্যিক ভাবে ট্রেন চলাচলের কথা রয়েছে।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে চট্টগ্রামের দোহাজারী-রামু, রামু-কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের ঘুমধুম সীমান্ত পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল কক্সবাজারে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার পাশাপাশি মিয়ানমারসহ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করা। এই প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিলো ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। পরে ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং বাকি ৬ হাজার ৩৪ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের। ২০১৮ সাল থেকে প্রকল্প নির্মান কাজ শুরু হয়।
এর প্রকল্পের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ দেশের সর্বাধুনিক সুবিধা সম্বলিত কক্সবাজারের আইকনিক (ঝিনুক আকৃতির) স্টেশন।
কক্সবাজার ৩ আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল জানান, এই রেল সংযোগের ফলে দেশের সর্ব দক্ষিনাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে।
বার্তাবাজার/এম আই