মাদারীপুরের রাজৈরে স্বতন্ত্র বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষ দখল করে স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ ক্যাম্প। সাত দিনের অনুমতি নিয়ে সাত বছর পেরিয়ে গেলেও ছাড়েননি অধ্যক্ষের কক্ষ। পুলিশ থাকার কারনে কমে গেছে শিক্ষার্থী সংখ্যা, নতুন ভর্তিতেও নেই আগ্রহ। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জেলার শিক্ষা দপ্তরে ধন্যা দিয়েও এত বছরেও কোন সমাধান মেলেনি। বর্তমানে ধ্বংসের পথে রয়েছে কলেজটি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে নাম মুছে যাবে চিরতরে। পুলিশের ভাষ্য শিক্ষার্থী না থাকার কারণে ক্যাম্পটি এখনো রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও স্থানীয়দের দাবি পুলিশ থাকার কারনে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে না।

জানা যায়, রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ী ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দিতে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় মাদারীপুর জেলার একমাত্র পল্লীশ্রী টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ। শুরুতে কলেজটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। এক সময় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল কলেজটিতে, ছিল হোস্টেলও। বেশ সুনাম কুড়িয়ে কারিগরি শিক্ষায় অবদান রাখতে শুরু করে কলেজটি। ২০১৬ সালের শেষের দিকে স্থানীয় রাজনীতির কারনে দুই পক্ষের তুমুল দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। দুই পক্ষের সংঘাত ঠেকাতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তখন পুলিশদের থাকার ব্যবস্থা করতে তৎক্ষনাৎ কলেজটিকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কলেজের অধ্যক্ষকে বলা হয় চলমান সংকট নিরসনে আপনার কলেজে পুলিশ সদস্যদের এক সপ্তাহ থাকার ব্যবস্থা করে দিন। সেই থেকে কলেজে স্থাপন করা হয় পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প। কলেজে বিগত দিনে যে পরিমান বিদ্যুৎ বিল প্রদান করা হতো ক্যাম্প হওয়ার পরে তা কয়েকগুন বেড়ে যায়। বছরের পর বছর ধরে সেই বিলও গুনতে হয় কলেজ কতৃপক্ষকে। বহু চেষ্টা করেও পুলিশ ক্যাম্প সরাতে পারেনি কলেজ কতৃপক্ষ। পুলিশ সদস্য থাকার কারনে ছাত্র-ছাত্রীরা স্বাভাবিকভাবে চলা ফেরা করতে পারে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে বাধা হয়ে দাড়ায় পুলিশ ক্যাম্পটি। এছাড়া বিভিন্ন কারনে প্রতি বছরই শিক্ষার্থী সংখ্যা কমতে থাকে। বর্তমানে তা দাড়িয়েছে ১৫ জনে। পুলিশ ক্যাম্পের ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, আশ্রমসহ অনেক জায়গায় ফাঁকা রুম রয়েছে যেখানে ক্যাম্প স্থানান্তর করা যায়। দ্রুত পুলিশ ক্যাম্পটি সরানো না হলে কলেজটি আর কলেজ থাকবে না। ক্যাম্পটি সরানোর জন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ জেলা শিক্ষা দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েও কোন সমাধান পায়নি কলেজ কতৃপক্ষ। কলেজটির সেই আগের পরিবেশ থাকলে এতদিনে কলেজটি এমপিওভুক্ত বা জাতীয়করণের আওতায় চলে যেত বলে তাদের বিশ্বাস। তাই সরকারের দৃষ্টি কামনা করছেন কলেজ কতৃপক্ষ।

টুম্পা নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, কলেজে ক্লাস করার মতো কোন পরিবেশ নাই। পুলিশ সদস্যরা ঘোরাফেরা করে, মাতামাতি করে। মেয়েদেরকে শুনতে হয় বিভিন্ন ধরনের কথা। কলেজে শিক্ষার পরিবেশ করে দিতে সরকারের কাছে দাবি জানাই।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রবীন মন্ডল বলেন, এক সপ্তাহের কথা বলে কলেজে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। সাত বছর হয়ে গেলেও ক্যাম্প সরানোর নাম নেই। সংস্লিষ্ট সব দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েও কোন সমাধান পাইনি। অনুকূল পরিবেশ না থাকার কারনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে ১৫ জনে দাড়িয়েছে। কলেজটি এখন ধবংসের পথে। সরকারের কাছে দাবি জানাই প্রতিষ্ঠানটি রক্ষায় দ্রুত যেন ব্যবস্থা নেন। পাশাপাশি কলেজটি এমপিওভুক্ত বা জাতীয়করণ করে সরকারের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়া হয়। পুলিশ ক্যাম্পেটি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, আশ্রমসহ অনেক জায়গা ফাঁকা কক্ষ রয়েছে যেখানে ক্যাম্প স্থানান্তর করা যায়।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি ইয়াকুব খান শিশির বলেন, বিষয়টি দু:খজনক। তাদের জন্য অন্য কোন জায়গার ব্যবস্থা করা যেতে পারতো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যেন ধবংস হয়ে না যায় তার জন্য প্রশানসনের সচেতন হওয়া উচিৎ ও দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিবচর ও রাজৈর সার্কেল) রাব্বি হোসেন বলেন, আমি ক্যাম্পটি পরিদর্শন করেছি। কলেজটিতে শিক্ষার্থী না থাকায় ক্যাম্প এতদিন রাখা হয়েছে। ক্যাম্প সরানোর সিদ্ধান্ত নিতে যথাযথ কতৃপক্ষর সাথে আলোচনা করে সমাধান দেয়া হবে।

রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপমা ফারিসা বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি অবগত না বিধায় কোন মতামত দিতে পারছিনা। তবে ঘটনা জেনে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, কোন লিখিত অভিযোগ আমার হাতে আসেনি। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে কলেজ কতৃপক্ষের আপত্তি আছে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এলাকার মানুষের বা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হোক তা আমরা চাই না।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মারুফুর রশীদ খান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি যোগদানের পরে কেউ বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে আসেনি। কলেজ কতৃপক্ষ আমার কাছে সহযোগীতা চাইলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।

বার্তাবাজার/এম আই