নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় আমনের চলতি মৌসুমে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। চারা রোপনের প্রথমে সার ব্যবহার করলেও হঠাৎ দেখা দিয়েছে ইউরিয়া সারের চরম সঙ্কট। ডিলার এবং বিক্রেতাদের দোকানে ঘুরেও সার পাওয়া যাচ্ছেনা। দ্বীপের ছোট বড় বাজারগুলোতে যা মিলছে তাও কিনতে হচ্ছে অতিরিক্ত দাম দিয়ে। তাতেও প্রতিবস্তায় ৫-৮ কেজি ওজনে কম থাকার অভিযোগ কৃষকদের। সঠিক সময়ে সার প্রয়োগ করতে না পারলে প্রত্যাশিত উৎপাদনে ব্যাহত হওয়ার আশংকায় হতাশার মধ্যে রয়েছে সাধারণ কৃষক।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাজারে সাধারণ কৃষকেরা সারেরর জন্য খুচরা সার বিক্রতা ও ডিলার পয়েন্টে গিয়ে সার না পেয়ে ফিরে আসছেন। অসাধু কিছু সার বিক্রেতা সময়কে পুঁজি করে অধিক মুনাফায় সার বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। সার প্রয়োগের এসময় উপজেলার চৌমুহনী বাজারে সার না পেয়ে কৃষক সুমন ওছখালী বাজারে ইউরিয়া সার কিনতে এসে নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও ৩ শত টাকা বেশী দিয়ে এক বস্তা সার কেনেন। ওজন দিলে দেখা যায় তাতে প্রায় ৭কেজি কম রয়েছে। দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে আমরা ডিলার থেকে যেভাবে পেয়েছি সে ভাবেই বিক্রি করছি। ভালো লাগলে নেন না হলে রেখে যান।

জাহাজমারা ইউনিয়নের রাশেদ মেম্বার নামের এক খুচরা সার বিক্রেতা জানান, ডিলার থেকে সার না পেয়ে আফাজিয়া সহ বিভিন্ন এরিয়া থেকে বস্তা প্রতি ৫ থেকে ৬ কেজি করে কম এবং অতিরিক্ত দামে কিনতে হয়। মাঝে মাঝে কিছু বস্তায় কয়লা ছাই মাটি মেশানো থাকে। এতে কৃষকদের সাথে ঝামেলায়ও পড়তে হয়।

আফাজিয়া এলাকার সার ব্যবসায়ী জোবায়ের রহমান বস্তায় কয়লা ছাই মাটি মেশানোর বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ধরনের সমস্যাগুলো ফ্যাক্টরি থেকে ও পথে পথে কিছু হয়। তবে আমাদের কাছে যেমন আসে আমরা তেমন বিক্রি করছি। এতে আমাদের কোন হাত নেই।

সোনাদিয়া ইউনিয়নের আবু সুফিয়ান নামের এক কৃষক বলেন, অনাবৃষ্টি ও অতি বৃষ্টিতে আমরা দুবার মার খেয়েছি। এখন অনেক টাকা গর্চা দিয়ে কষ্ট করে আবার চাষ করেছি। শেষ মূহূর্ত্বে সারের অভাবে যদি জমিতে সার প্রয়োগ করতে না পারি তা হলে আমাদের বুকে মাটি লেগে যাবে।

কৃষি অফিসের তথ্য সূত্রে জানা যায়, হাতিয়া উপজেলায় ৭৭ হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে আমন চাষ হলেও এর বিপরীতে সেপ্টেম্বরে বরাদ্ধ হয় ৭৭১ মেট্রিকটন এবং অক্টোবরের বরাদ্ধ হয় ৫০০ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে কম। অথচ পার্শ্ববর্তী সুবর্ণচর উপজেলায় ৩৬ হাজার ৮৭০ হেক্টর আমন চাষের বিপরীতে সেপ্টেম্বর মাসে ৭শ’ মে.টন এবং অক্টোবর মাসে ৪৯০ মে.টন ইউরিয়া সার বরাদ্ধ পায়। এতে করে হাতিয়া উপজেলায় বিশাল আয়তনের রোপনকৃত আমন উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রাকে বিঘ্নিত করণসহ কৃষকদের বড় ধরণের আর্থিক লোকসানে পড়বে বলে তারা মনে করছেন।

এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাছেদ সবুজ জানান, আমন মৌসুমে নতুন চর অঞ্চল চাষাবাদের আওতায় আসায় চাহিদা অনুযায়ী সারের বরাদ্দ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিশেষ করে, আগস্ট সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে।

নোয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব মো: শহীদুল হকের মুঠোফোনে হাতিয়ায় ইউরিয়া সার সঙ্কট সহ নানাবিধ সমস্যা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সংকট বেশীাদন থাকবেনা, দু-চারদিনের মধ্যে নতুন সার ঢুকবে। চাষাবাদাদের আওতায় ৭৭হাজার হেক্টর আমন চাষ যেখানে রয়েছে সেখানে বরাদ্ধকৃত সার পর্যাপ্ত হয় কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, নতুন করে আরো প্রায় ৩শত মেট্রিকটন সার বরাদ্ধ হয়েছে।

বার্তাবাজার/এম আই