মালয়েশিয়ার সারাওয়াক প্রদেশের কুচিং শহরে অবস্থিত সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ব্যবস্থাপনা বিভাগের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ইরফান সাদিক গত ১৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। প্রথম দিকে ইরফান মানসিক চাপে আত্মহত্যা করেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। কিন্তু মৃত্যুর এক সপ্তাহ পড়ে ইরফান সহপাঠীদের দ্বারা র‍্যাগিং এর শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে গনমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হতে থাকে। এরই মধ্যে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ভূমিকা এবং যথাযথ তদন্ত না করে মরদেহ দেশে প্রত্যাবর্তন করায় প্রশ্ন তুলে ইরফানের পরিবার।

ইরফানের মৃত্যুর পরবর্তী সময় দূতাবাসের ভূমিকা নিয়ে পরিবার প্রশ্ন তুলার পর কুয়ালালামপুর বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (প্রেস) সূফী আবদু্লাহিল মারুফ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিস্তারিত জানান, নিম্নে এই প্রেস বিজ্ঞপ্তির হুবহু কিছু অংশ তুলে ধরা হল, ইরফানের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ও অকাল মৃত্যুতে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উক্ত শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর হাইকমিশনের গোচরীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার এই অফিসের কাউন্সেলর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনা স্থলে যাবার নির্দেশনা দেন। উক্ত নির্দেশনা পাওয়ার সাথে সাথে কর্মকর্তা তিন ঘন্টা বিমান ভ্রমণ করে পরদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ইতোমধ্যে মৃত শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে, বাংলাদেশ পুলিশের একজন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তার সহায়তায়, লিখিতভাবে লাশ পোস্টমর্টেম এবং পরবর্তী তদন্ত না করার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মৃত ইরফান এর পিতার স্বাক্ষরে আবেদন করা হয়। তাছাড়া তার বোন ইমেইলে সরাসরি হাইকমিশনার বরাবর একই অনুরোধ করেন (অনুলিপি সংযুক্ত) ।

পাশাপাশি, দ্রুত সময়ের মধ্যে লাশ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য দেশ-বিদেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ অনেকের ফোন কল আসতে থাকে । প্রেক্ষিতে, প্রেরিত কর্মকর্তা শিক্ষার্থীর মারা যাওয়ার স্থান পরিদর্শন করেন এবং তিন দিন অবস্থান করে সেখানে স্থানীয় প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, পুলিশ ও এয়ারলাইন্সের সাথে দফায় দফায় মিটিং করেন। পরিবার সদস্যদের আবেগ এবং লিখিত আবেদন বিবেচনায় নিয়ে কর্তৃপক্ষ পোস্টমর্টেম না করে লাশ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুমতি দেয় এবং যথারীতি মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য টিকিট করাসহ সমস্ত আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। মরদেহ দেশে প্রেরণের নিমিত্তে সকল দাপ্তরিক ও বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক জটিল প্রক্রিয়াদি সম্পন্ন হওয়ার পর পরিবারের পক্ষ থেকে আরেকটি চিঠি দিয়ে মৃত্যুর ঘটনাকে তদন্ত করে দেখার কথা বলা হয়। কিন্তু ইতোমধ্যে লাশ প্রেরণের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ায় লাশ বিমান থেকে ফেরত আনা ও পোস্টমর্টেম করার মত কোন সুযোগ ছিল না। উল্লেখ্য যে, এহেন পরিস্থিতিতে পরিবারকে প্রয়োজনে বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর লাশ পোস্ট মরটেম করে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য মৌখিকভাবে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে মালয়েশিয়ায় তদন্তের জন্য পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা যাবে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, মৃত শিক্ষার্থী গত কয়েক মাস ধরে মানসিক ট্রমা/ বিষন্নতায় ভুগছিলেন বলে জানা যায়। সে পরিবারকে এর আগেও তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত করে, এমনকি সুইসাইড করবে বলে তার মাকে জানায়। তার এমন অস্বাভাবিক আচরণ সম্পর্কে পরিবার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবগত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু কেউই তাকে এ মানসিক অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করেনি, যা খুবই দুঃখজনক। হাইকমিশন কর্তৃক সংগৃহীত ভিডিওতে দেখা যায় যে, মৃত শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে মসজিদের বেলকনি হতে নদীতে লাফ দেয় । সেখানে বহু মানুষ, এমনকি সারওয়াক স্টেটের পুলিশও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায় । কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি কেউ তাকে বাঁচানোর জন্য দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বলে প্রতীয়মান হয়।

বার্তা বাজার/জে আই