বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হয়েছে অনেকদিন আগেই। নিয়ম অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর অন্যান্য জেলা, থানা কমিটি ঘোষণা করার কথা। তবে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে আপাতত কমিটি দিতে বারণ করা হয়েছে৷
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের বাকি প্রায় তিন মাস। এমন সময়ে নির্বাচন সামনে রেখে নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। আর সে অনুযায়ীই কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছে দলটি৷
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে এসে টানা কর্মসূচি পালন করছে৷ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকও করছে নিয়মিত। যা আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অন্তর্ভুক্ত অনেক থানাতেই কমিটি করা বাকি। তবে তা নির্বাচনের আগে আর হচ্ছে না।
আমরা এমন একটা মেসেজ পেয়েছি। নির্বাচনের আগে কোনো কমিটি হচ্ছে না। নির্বাচনের আগে সবার সক্রিয়তা বিচার করে, নির্বাচনের পরে কমিটি হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগে কমিটি হচ্ছে না। নির্বাচনে সবার যোগ্যতা মাঠপর্যায় থেকে দেখে তারপর পদ দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা (এমপিরা) তাদের মতো করে চাইতেই পারেন। তবে তাদের মতো করে তো আমরা দেব না। যারা মাঠে থাকেন, একটা লোক আমাকে খুব সমীহ করে, কিন্তু এই লোককে দিয়ে তো আমার সংগঠন চলবে না। সাংগঠনিক লোককেই সংগঠনের দায়িত্ব দিতে হবে।
একই অবস্থা ঢাকা মহানগর দক্ষিণে। নগরের অন্তর্গত অনেক থানায় কমিটি নেই। নির্বাচনের আগে সে কমিটি পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নগর নেতারা।
নগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এমন একটা মেসেজ পেয়েছি। নির্বাচনের আগে কোনো কমিটি হচ্ছে না। নির্বাচনের আগে সবার সক্রিয়তা বিচার করে, নির্বাচনের পরে কমিটি হবে।
একই পথ অনুসরণ করছে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন ভাতৃপ্রতীম ও সহযোগী সংগঠন। এরমধ্যে কর্মীদের সক্রিয় রাখতে টানা কর্মীসভা করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগ।
কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পর আরও অনেক শাখার আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হয়। তবে বর্তমানে কমিটি ঘোষণা বন্ধ রয়েছে।
আওয়ামী লীগ এখন রয়েছে ‘নির্বাচন মুডে’। এ অবস্থায় মনোনয়ন ও নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার দিকেই বেশি দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় সম্মেলন করা বা কমিটি দেওয়ার সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন আওয়ামী যুবলীগও কমিটি দেওয়া স্থগিত রেখেছে। নির্বাচনের পর ছাড়া কমিটি নয় বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
কর্মীসভা অব্যাহত রেখেছে যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগও।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজি বলেন, নির্বাচনের আগে আমরা কোনো কমিটি দিচ্ছি না। এখন সময়ও নেই। মেয়েরা যেন সক্রিয় তাকে, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে। আমরা একটা নারী সম্মেলনও করতে চাই।
নারী সম্মেলনে যুব মহিলা লীগের পাশাপাশি যৌথভাবে আয়োজক হিসেবে থাকতে পারে আরেক সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ।
নতুন কমিটি না হওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রের নির্দেশনা ছাড়া কোনো জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি ভাঙা যাবে না মর্মে সংগঠনগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই সংগঠনও জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো কমিটি ঘোষণা করছে না বলে সংগঠনের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা বলেন, নির্বাচনের বাকি আছেই আর দুই মাস। এখন আর কমিটি দেওয়ার সুযোগ কোথায়? এখন মেয়েরা মাঠে থাকবে। এমনিতেই অনেক দায়িত্ব।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন কমিটি না হওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রের নির্দেশনা ছাড়া কোনো জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি ভাঙা যাবে না মর্মে সংগঠনগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ এখন রয়েছে ‘নির্বাচন মুডে’। এ অবস্থায় মনোনয়ন ও নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার দিকেই বেশি দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় সম্মেলন করা বা কমিটি দেওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, এখন তো আমাদের সম্মেলন হচ্ছে না। যেহেতু সম্মেলন হচ্ছে না, এখন তো নতুন করে কোনো কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না। হয়তো কোনো কোনো জায়গায় শূন্যস্থান পূরণ করা হতে পারে।
কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, এখন তো আমাদের নির্বাচন মুড। নির্বাচন মুডে আমাদের লোকজন কাজ করছে। যারা প্রার্থী, তারা চেষ্টা করতেছে, তাদের মনোনয়ন কিভাবে হবে।
বার্তা বাজার/জে আই