আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন কঠিন অবস্থার মধ্যে আছে- এমনটা জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘আমাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ রাজনীতিবিদরা যদি তৈরি করে না দেন, তাহলে নির্বাচন করাটা কষ্টসাধ্য হবে। আর পরিবেশ অনুকূল করে দিলে আমাদের জন্য কাজটা সহায়ক হবে।’

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সিইসি এ কথা বলেন।

বুধবার বেলা ১১টার পর নির্বাচন ভবনে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: প্রত্যাশা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক ওই আলোচনা ও পর্যালোচনা সভা চলে। এতে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল, সাবেক সচিব, সাবেক রাষ্ট্রদূত ছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যম সম্পাদক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা অংশ নেন।

নির্বাচনটা ভালো হবে কি না সেটা নির্ভর করছে ‘পলিটিক্যাল উইলের’ উপর। আন্তরিক পলিটিক্যাল উইল থাকতে হবে। এটা আমার থেকে আসবে না। পলিটিক্স থেকে আসতে হবে বা সরকার থেকে আসতে হবে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা একটা কঠিন অবস্থায় আছি। এটা বিলেতের নির্বাচন হচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচন করতে যাচ্ছে না। আপনারা বলেছেন, সংকট আছে; আমরাও তা অনুধাবন করি। অনেকগুলো সংকট নিরসন করতে হবে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে। এ কথাটি বারবার বলেছি।

অবশ্য এরমধ্যেও সুষ্ঠু নির্বাচন করা নিয়ে আশাবাদী সিইসি। তার দাবি, প্রধানমন্ত্রী বারবার সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছেন। যা অন্য কোনো সরকার কখনো বলেননি।

সিইসি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে কয়েকবার সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এর আগে কোনো সরকার কখনও এমন প্রতিশ্রুতি দেয়নি। এই প্রথমবার সরকারপ্রধান এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ জন্য আমি বলব- আস্থা রাখতে চাই।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আশ্বস্তবোধ করছি। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের তরফ থেকে আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার কথা বলা হয়েছে। এ প্রতিশ্রুতি সরকার দিয়েছে। এর আগে কিন্তু সরকার কখনও এমন প্রতিশ্রুতি দেয়নি। এবারই প্রথম সরকার এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আইনমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, যোগাযোগমন্ত্রী; উনারাও সরকার শব্দটা ব্যবহার করেছেন। প্রধানমন্ত্রীও স্পষ্টভাবে কয়েকবার বলেছেন; সরকার আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার নিশ্চয়তা দিচ্ছে। আমি বলব, আস্থা রাখতে চাই।’

সিইসি বলেন, নির্বাচনটা ভালো হবে কি না সেটা নির্ভর করছে ‘পলিটিক্যাল উইলের’ উপর। আন্তরিক পলিটিক্যাল উইল থাকতে হবে। এটা আমার থেকে আসবে না। পলিটিক্স থেকে আসতে হবে বা সরকার থেকে আসতে হবে।

সরকার ও দলকে সবসময় তালগোল পাকিয়ে ফেলা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিভাজনটা বুঝতে হবে। সরকার ও দল ভিন্ন জিনিস। সরকারি দল বলতে কোনো শব্দ সংবিধানে নেই। এটা হয়তো মুখে বলে থাকি। যখনই একটা সরকার হয়ে যাবে, তখন সে সব দলের, সব জনগণের, পুরো দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে।

সমঝোতা প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি একটা সমঝোতার কথা, আপনারা চায়ের টেবিলে বসেন। কিন্তু পলিটিক্যাল কালচার এমন হয়েছে, কেউ কারো সঙ্গে বসতে চাচ্ছেন না। ইসি এ সমস্যার সমাধান করে না। দুঃখজনক হলো, সে ধরনের সিভিল সোসাইটিও দেখতে পাচ্ছি না।’

এর আগে সূচনা বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, যতটা প্রচার হয় নির্বাচন কমিশন এতোটা ভীতু ও নৈতিকতা বিবর্জিত নয়। এ সময় আরপিও সংশোধনীর কারণে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে- এটা অপপ্রচার বলেও দাবি করেন সিইসি।

বার্তা বাজার/জে আই