যে ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। ভোটারদের কল্যাণে কাজ করবেন। সেই ভোটাররাই চিনেন না এমপি প্রার্থীদের। নাটোর-৪ আসনের উপনির্বাচনে নৌকা পেতে মনোনয়ন কিনেছেন আওয়ামী লীগের ১৭ নেতা। অথচ বেশিরভাগ নেতার সঙ্গেই দুই উপজেলার সাড়ে তিন লাখ ভোটারের পরিচয় নেই। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কেনা ১৭ নেতার মধ্যে দশ নেতার-ই নাম শোনেননি এই আসনের ভোটারেরা। এসব প্রার্থীরা ভোটের মাঠেও সক্রিয় নয়। বাকি প্রার্থীরা উপজেলা ভিত্তিকভাবে ভোটারদের কাছে কমবেশি পরিচিত আছেন।
গ্রামের ভোটারদের দাবি, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুসের পরে আওয়ামী লীগে তার কন্যা মুক্তি, শাহনেওয়াজ আলী, আহম্মদ আলী, আনোয়ার হোসেন, সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, কে এম জাকির হোসেনের নাম তারা জানেন। এছাড়া অন্য প্রার্থীদের নামই তারা শোনেননি। যাদের নাম শোনেননি তাদের ভোট দেবেন না ভোটারেরা।
দলীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, এমন কিছু নেতা উপনির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দাবি করেছেন, যারা কোনো সময়ই সাংসদীয় এলাকায় নির্বাচনী বা সামাজিক কর্মসূচি পালন করেননি। দলের প্রবীণ নেতার মৃত্যুতে এসব নেতারা বাউড়ি বাতাসের মতো এসে সুযোগ নিচ্ছেন। এতে করে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হচ্ছে। বাড়ছে দ্বিধা-বিভক্তি।
দলীয় সূত্র বলছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বিএনপিকে পরাজিত করে ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মূলত আওয়ামী লীগের পক্ষে এই নেতারই দুই উপজেলায় নিজস্ব ভোট ব্যাংক ছিল। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে ৭ বার মনোনয়ন পেয়ে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকে রাজনীতি করা এই নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন দুইবার। অথচ তিনি মারা যাওয়ার তার পর জায়গায় যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন সেসব নেতা রাজনীতিতে তেমন পারদর্শী বা জনপ্রিয় নয় এমন অভিযোগ দলীয় নেতা-কর্মীদের।
মূলত উত্তরের বর্ষীয়ান নেতা আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুতে আসন শূণ্য হওয়ায় এখানে উপনির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের তফসিল মতে, নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের ভোট গ্রহণ হবে ১১ অক্টোবর। ১৭ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ১৮ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর। আপিল নিষ্পত্তি ২৩ সেপ্টেম্বর। ২৪ সেপ্টেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। প্রাথীদের প্রতীক বরাদ্দ ২৫ সেপ্টেম্বর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই নির্বাচনে অংশ নিতে মো. শাহনেওয়াজ আলী, কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আহম্মদ আলী, আনোয়ার হোসেন, এমদাদুল হক মোহাম্মদ আলী, জাহিদুল ইসলাম, ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, কে এম জাকির হোসেন, মো. আতিকুর রহমান, সুব্রত কুমার কুন্ডু, এ কে এম শাহজাহান কবির, আসাদ-উদ-জামান, রতন সাহা, এড. আরিফুর রহমান, এসএম রফিকুল পারভেজ, মোয়াজ্জেম হোসেন, আব্দুল কাদের নৌকা প্রতীক চেয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন।
দলের নেতা-কমীরা বলছেন, এই আসনের দুই উপজেলার দুই চেয়ারম্যান দুই মেয়র আব্দুল কুদ্দুসের কন্যা কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি এবং জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আহম্মদ আলীর কমবেশি পরিচিতি রয়েছে। এছাড়া অন্য প্রার্থীদের তেমন কোনো পরিচিত নেই।
ভোটাদের মতে, নাম জানা না জানা আওয়ামী লীগের ১৭ নেতা মনোনয়োন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এই দলের কোনো নেতাই এখন পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে পৌঁছাননি। তবুও পরিস্থিতি বলছে- এসব নেতারা মাঠ সরগরম না করলেও নির্বাচন নিয়ে বেশ সক্রিয় ভূমিকায় আছেন। এই নির্বাচনে অহেতুক অংশ নিতে চায় না বিএনপি। তবে জাতীয়পার্টির পক্ষ থেকে আলাউদ্দিন মৃধা প্রার্থিতা ঘোষণা করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ভোটের মাঠে এই প্রার্থীর তেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই। ফলে প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে- আওয়ামী লীগের সাথে লড়বে কে?
বার্তাবাজার/এম আই