চট্টগ্রামে আউটসোর্সিংয়ের মেসেজ পাঠিয়ে অনলাইন প্রতারকচক্রের তিন সদস্যকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (বন্দর ও পশ্চিম)।
বৃহস্পতিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি জানান মহানগর গোয়েন্দা (বন্দর ও পশ্চিম) উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আলী হোসেন।
তিনি জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এজাহারনামীয় আল ফয়সাল, আরেফা বেগম এবং নিজাম উদ্দিন নামে অনলাইন প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮১৪ টাকা ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৪ টি মোবাইল ফোনসেট জব্দ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আটককৃত আল ফয়সালের ছোট ভাই সম্রাট দুবাই থেকে আউটসোর্সিং এর নামে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে নিজেদের তৈরি ওয়েব সাইট https://forttunemix.com/#/ Ges http://fortuunemix.com এর মাধ্যমে অনলাইনে প্রতারণে করে সম্রাটের মা আরেফা বেগম, তার ভাই আল ফয়সাল এবং তাদের প্রতিবেশি বেলালের নিকট আত্মসাৎকৃত টাকা জমা করেন। একাধিক ভিকটিম জানায় তাদের মোবাইলের হোয়াটসএ্যাপে এসএমএস আসে যে, আপনি চাকুরির পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করে বাড়তি আয় করতে পারবেন। পরবর্তীতে ভিকটিমরা সরল বিশ্বাসে তাদের কথা বিশ্বাস করে চাকুরির পাশাপাশি বাড়তি ইনকামের কথা চিন্তা করে তাদের কথা মত অনলাইন আউটসোর্সিং কাজে যোগ দেয়।
পরবর্তীতে ভিকটিম টেলিগ্রামে তাদের সাথে ম্যাসেজ আদান প্রদান করতে থাকে। অনলাইন প্রতারক ভিকটিমদের তাদের পাঠানো ওয়েবসাইটে একটি একাউন্ট খুলতে বলেন এবং তাদের দেয়া কাজগুলো করলে ভিকটিম পেমেন্ট পাবে বলে জানান। পেমেন্ট উত্তোলনের পূর্ব পর্যন্ত ভিকটিমের একাউন্টে টাকা জমা হতে থাকে। এভাবে কাজ করতে করতে অল্পতেই ভিকটিমের উক্ত ওয়েব সাইটের একাউন্টে ১-২ লক্ষ টাকা জমা হলে অনলাইন প্রতারক ভিকটিমদের জানান যে, আপনি অনলাইনে কাজ করতে গিয়ে কিছু ভুল করেছেন যার কারণে আপনার কিছু পয়েন্ট কাটা গেছে। আপনার একাউন্টের জমাকৃত টাকা তুলতে হলে তাদের প্রি-পেমেন্ট করতে হবে। ভিকটিমদের জমাকৃত টাকা উত্তোলনের লোভে পড়ে তাদের চাহিত ৬৮,০০০/ টাকা ব্যাংকে জমা দেয়। পরবর্তীতে আবার তাদের কাজে ভুল হয়েছে বলে ১,০০,০০০/- টাকা দিতে হবে বলে জানায়। এভাবে ধাপে ধাপে কারো নিকট ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কারো নিকট ১৬ লক্ষ টাকা, কারো নিকট থেকে ২২ লক্ষ টাকা সহ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকচক্র।
চক্রটি পরিচালিত হচ্ছে দুবাই থেকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাংলাদেশীদের একাউন্ট ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারকচক্রটি। চক্রের মূল হোতাদের মধ্যে একজন হলেন হাটহাজারীর সম্রাট আরেকজন সাতকানিয়ার মান্নান। তারা দুবাই অবস্থান করে বিভিন্ন নামে ছদ্মবেশ ধারণ করে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভূয়া আউটসোর্সিং এর কথা বলে অনলাইন প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে তার পরিচিত কারোর একাউন্টে পাঠিয়ে সেটা তার ভাই বা মায়ের নিকট পাঠিয়ে দেয়। আবার কোন পরিচিত হুন্ডি ব্যাবসায়ীর মাধ্যমে টাকা দুবাই নিয়ে যায়।
এভাবে দেশের বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। তদন্তে এক ব্যক্তির একাউন্টে গত ২ মাসে ১ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা ও আরেকটি একাউন্টে ২ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকাসহ কারো একাউন্টে ১৮ লক্ষ টাকা, কারো একাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
বার্তাবাজার/এম আই