নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা নিয়ে মাসখানেক ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। উচ্চ পর্যায়ের মেডিকেল বোর্ডের সরাসরি তত্ত্বাবধানে চলছে চিকিৎসা। তবে লিভার সিরোসিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খুব একটা উন্নতি নেই, বরং কিছুটা অবনতি হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে কবে নাগাদ তিনি বাসায় ফিরতে পারবেন তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না কেউ।
এমন পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে মেডিকেল বোর্ড কিংবা ব্যক্তিগত চিকিৎসকরাও কিছু না বলায় নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে তার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থার ছবি শেয়ার করে সুস্থতা কামনায় সবার দোয়া চাচ্ছেন।
বগুড়ার সাবেক সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন- হে দয়াময় আল্লাহ! তুমি আমাদের জাতীয়তাবাদের মাকে সুস্থ করে, আবার আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দাও। মাথানত করে, করজোড়ে তোমার কাছে মিনতি।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়া হাসপাতাল কবে ছাড়বেন, বলতে পারছেন না চিকিৎসকরা
বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের আরও অনেকের ফেসবুক স্ট্যাটাসে ফুটে উঠেছে খালেদা জিয়াকে নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা।
এরইমধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পর রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে এসেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অবশ্য চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে তিনি কিছু জানাননি।
মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সূ্ত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী চিকিৎসা চললেও খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্যারামিটারের অবনতি হয়েছে। যে কারণে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা কিছুটা উদ্বিগ্ন।
জানা গেছে, শাশুড়ির সেবা-শুশ্রূষার জন্য আগামী সপ্তাহে খালেদা জিয়া ছোট পুত্রবধূ শর্মিলা রহমানের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। অন্যদিকে লন্ডন থেকে বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান নিয়মিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে গত মাসের ৯ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। সে হিসেবে প্রায় মাস হতে চলছে তার হাসপাতাল জীবন। এর আগে গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তাঁর হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়।
এমন অবস্থায় চিকিৎসার সার্বিক অবস্থা জানতে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা চললেও সার্বিক পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে না। দেখা গেছে এক ধরনের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন, এখন অন্য সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। বোর্ড যেভাবে পরামর্শ দিচ্ছে সেভাবেই চিকিৎসা চলছে। তবে তার তো আসল চিকিৎসা তো এখানে হচ্ছে না। বারবার বাংলাদেশের একেক সেক্টরের সেরা চিকিৎসকরা বলছেন- তাকে বিদেশে কোনো এডভ্যান্স সেন্টারে রেখে চিকিৎসা করাতে। কিন্তু সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। এটা দুঃখজনক। দেশের সাবেক একাধিকবারের প্রধানমন্ত্রী, সিনিয়র সিটিজেন যদি তার চিকিৎসা না পান সেটা তো দুঃখজনক।’
চেয়ারপারসনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ডের পূর্ণ তত্ত্বাবধানে কেবিনে রেখে চেয়ারপারসনের চিকিৎসা চলছে। তাকে এখনো হাসপাতাল থেকে বাসায় আসার মতো পরিস্থিতি হয়নি। তেমন পরিস্থিতি হলে তাকে বাসায় আনা যাবে।’
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার লিভারের সমস্যা বেশি ভোগাচ্ছে। দেশের বাইরে অ্যাডভ্যান্স ট্রেনিং সেন্টারে না গেলে পুরোপুরি চিকিৎসা সম্ভব না। এছাড়াও প্রেশার, ডায়াবেটিকসেরও সমস্যা হচ্ছে। পেটে পানি জমে যাচ্ছে। তবে চিকিৎসকরা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন।
খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে রোগে ভুগছেন। ২০২১ সালের এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকবার নানা অসুস্থতার কারণে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। সে সময় চিকিৎসকরা তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য সুপারিশ করেছিলেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা হয়। সেদিন থেকে তিনি কারাবন্দি হন। পরে হাইকোর্টে এই সাজা বেড়ে ১০ বছর হয়। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আরও সাত বছরের সাজা হয়।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। সেই থেকে তিনি গুলশানের বাড়িতে রয়েছেন। প্রতি ছয় মাস পরপর সরকার তার মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে।
বার্তা বাজার/জে আই